শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

অর্থপাচারের অভিযোগ ১৬ আমদানিকারকের বিরুদ্ধে

আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২১:৪১

বহুল আলোচিত চট্টগ্রাম বন্দরে অভিনব জালিয়াতির মাধ্যমে ২২ আমদানি চালান খালাস হওয়ার ঘটনায় ১৪ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের ১৬ জন মালিকের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। গত সোমবার শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর রাজধানীর রমনা মডেল থানায় এসব অভিযোগে আলাদা ২০টি মামলা দায়ের করেছে। মামলায় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মালিক ছাড়াও ১৭ সিএন্ডএফ এজেন্ট, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ ও বন্দরের ৩২ কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া কাস্টমস বিভাগের সুরক্ষিত সার্ভারে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে আরো তিন জনসহ মোট ৬৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মামলার অভিযোগে অর্থপাচার ছাড়াও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, চোরাচালান ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইত্তেফাককে বলেন, অভিযুক্তদের বিষয়ে তদন্ত শেষে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ পাওয়ার পর মামলা করা হয়েছে। ডিজিটাল জালিয়াতি ছাড়াও তারা মুদ্রাপাচারের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। ঐ ঘটনায় আরো কারা কারা জড়িত রয়েছে, তা বের করার চেষ্টা চলছে।

যোগাযোগ করা হলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. সহিদুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, আমরা মনে করছি, জালিয়াতির মাধ্যমে খালাস হওয়া চালানের সঙ্গে মুদ্রাপাচারের সংযোগ থাকতে পারে। এই ইস্যুতে আরো মামলা হবে। নতুন নতুন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এতে আসামির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। এই মামলায় ইতিমধ্যে অভিযুক্ত সি অ্যান্ড এফ এজেন্টের একাধিক ব্যক্তি জেলে রয়েছেন। তিনি বলেন, এতে কেবল ২২টি চালান খালাস হওয়ার ঘটনা নয়। অবসরে যাওয়া দুই কর্মকর্তার ইউজার আইডি হ্যাক করে সার্ভারে প্রবেশ করা হয়েছে ৩ হাজার ৭৭৭ বার। ফলে এসব ঘটনায় আরো অনেকেই জড়িত রয়েছে বলে আমরা মনে করছি।

সূত্র জানিয়েছে, রমনা মডেল থানা মামলাটি নথিভুক্ত করে এটি তদন্তের জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) দায়িত্ব দিয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের অবসরে যাওয়া দুই কর্মকর্তার ইউজার আইডি সচল থাকায় তা হ্যাক করে ২০১৮ সালে ২২টি পণ্য চালান অবৈধ উপায়ে খালাস করা হয়। অথচ ঐ পণ্য চালানে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানির তথ্য থাকায় তা খালাস না করতে তত্কালীন শুল্ক কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছিল শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ। পণ্য খালাসের ঘটনা তদন্তে তখন ‘কোঁচো খুঁড়তে অজগর’ বেরিয়ে আসে। জানা যায়, অবসরে যাওয়া ঐ দুই কর্মকর্তার ইউজার আইডি ব্যবহার করে প্রায় ৪ হাজারবার অনলাইন সার্ভারে প্রবেশ করা হয়েছে। ফলে এই উপায়ে কী পরিমাণ পণ্য খালাস হয়েছে তা নিয়ে জোরদার আলোচনা শুরু হয়। রাজস্ব ক্ষতির পাশাপাশি এসব চালানে রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর কোনো বস্তু খালাস হয়েছে কি না—তা নিয়েও উদ্বেগ তৈরি হয়।  তোলপাড় শুরু হয় দেশব্যাপী। এ ঘটনার পর এনবিআরের উদ্যোগে আলাদা চারটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ইতিমধ্যে একাধিক তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন এনবিআরে জমা দিয়েছে। তবে এ বিষয়ে কিছু খোলাসা করছে না এনবিআর।

বন্দরে এ ধরনের পণ্য চালান খালাস হওয়ার ঘটনায় দেশে অবৈধভাবে অস্ত্র—বিস্ফোরক প্রবেশের আশঙ্কার কথা জানিয়ে সম্প্রতি এনবিআরকে এক গোপন প্রতিবেদন পাঠিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এতে বন্দরের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। একইসঙ্গে প্রতিবেদনে ২২ আমদানি চালান খালাসের ঘটনায় ৩২ কর্মকর্তা-কর্মচারী, ১৪ আমদানিকারক ও ৮ সি অ্যান্ড এফ এজেন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়।