শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি হলেও ব্যাংকিং খাতে ক্রমাগত অবনতি :আইএমএফ

আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২১:১১

বাংলাদেশে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলেও ব্যাংকিং খাতে ধারাবাহিক অবনতি হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটি মনে করে ব্যাংকিং খাতে সংস্কারে ধীরগতি আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা এবং প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। ঋণ পুনঃতপশিলিকরণে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু ব্যক্তি পর্যায়ে ঋণ পুনঃতপশিলের সুযোগ দিয়েছে। ঋণ নবায়নের ফলে ব্যাংকগুলোতে বাধ্যতামূলক জমার (প্রভিশনিং) পরিমাণ বাড়াতে হচ্ছে। এতে করে ব্যাংকগুলোর সম্পদে চাপ বাড়ছে। নতুন ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্র সংকুচিত হয়েছে। আইএমএফ উল্লেখ করেছে, ব্যাংকিং খাতের উন্নতির জন্য একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রয়োজন। সুনির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে এই কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।

ডাইসাকু কিহারার নেতৃত্বে আইএমএফ-এর প্রতিনিধিদল গত জুন মাসের ১৬ থেকে ২৭ তারিখ পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করেন। এসময় সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করেন তারা। সফর শেষে প্রাথমিক প্রতিবেদন দিলেও গতকাল পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের শেষ দিকে দেশের ব্যাংকিং খাতে ৯ দশমিক ৩ শতাংশ ঋণ খেলাপি থাকলেও ২০১৮ সালের শেষে এর পরিমাণ ১০ দশমিক ৩ শতাংশে পৌছেছে। বেশিরভাগ খেলাপি ঋণ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে। ২০১৮ সালের শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩০ শতাংশ হয়েছে। পুনঃতফশিলীকৃত ঋণের অর্ধেক হচ্ছে শিল্প খাতে, তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল শিল্পে।

ব্যাংকিংখাতের উন্নতির জন্য বেশ কিছু সুপারিশ করেছে আইএমএফ। এবারের সফরে তারা এসব বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনাও করেছে। আইএমএফ মনে করে কার্যকর নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে স্বাধিনভাবে কাজ করতে হবে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর বিশেষ অডিট করা, ঋণ পুনঃতপশিলে নিয়ম আরো কঠিন করা প্রয়োজন। সেইসঙ্গে ব্যাংকগুলোর করপোরেট সুশাসন আরো শক্তিশালী করতে হবে। খেলাপি ঋণ আদায়ে আইনি কাঠামো আরো শক্তিশালী করতে হবে। বিশেষ করে ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিষয়ে আরো কঠোর হতে বলেছে আইএমএফ। সীমিত সংখ্যক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংককে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে ভর্তুকি দেওয়া যেতে পারে। বাকিগুলোকে বাণিজ্যিক ভাবে পরিচালনা করতে না পারলে বন্ধ করার সুপারিশও উঠে আসে। খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় আইএমএফ প্রতিনিধিদল উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ব্যাংক একীভূত করার বিষয়টিও আলোচনা করেন আইএমএফ প্রতিনিধিরা।

সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণও করেছে আইএমএফ। সংস্থাটি মনে করে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। গেলো বছর ৮ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের পেছনে কাজ করেছে মূলত দেশের অভ্যন্তরীণ ভোগ ব্যয় বৃদ্ধি, রপ্তানি প্রবৃদ্ধি এবং রেমিট্যান্স। তবে খাদ্য পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির ফলে সার্বিক মূল্যস্ফীতির চাপ ছিল। বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে রেমিট্যান্সের গতি ধারণার চেয়েও কম হতে পারে। বিশ্বের বর্তমান সংরক্ষণ নীতির ফলে রপ্তানি এবং বিনিয়োগ কমে যেতে পারে। চলতি অর্থবছরে শেষে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। তবে বিশ্ব অর্থনীতির ধীর গতি, বাণিজ্য বিরোধ, বিশ্ব রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং রেমিট্যান্সের দুর্বল প্রবৃদ্ধির ঝাপটা বাংলাদেশেও লাগতে পারে।