বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মিথ্যা ঘোষণায় আসছে মিট অ্যান্ড বোন মিল

আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২০:৫৩

আমদানিকৃত মত্স্য ও চিংড়ি খাবার খালাসে জটিলতা

 

ইত্তেফাক রিপোর্ট

মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে মত্স্য খাদ্য আমদানির নামে ‘মিট অ্যান্ড বোন মিল’ আমদানির কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছে প্রকৃত মাছ ও চিংড়ির খাদ্য আমদানিকারকেরা। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দরে  আমদানিকৃত মাছ ও চিংড়ির খাবারের বেশ কিছু চালান উল্লিখিত কারণে আটকা পড়েছে। মিট অ্যান্ড বোন মিল এবং ফিশ মিল চিহ্নিতকরণে দুর্বলতা ও সুস্পষ্ট নীতির অভাবে এমন জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে শুকরের বর্জ্যসংবলিত মিট অ্যান্ড বোন মিল চালান আটক করা হয়েছে। ফলে মাছের খাদ্য পরীক্ষার যথার্থতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

আমদানিকারকদের দাবি, তারা মত্স্য অধিদপ্তর কর্তৃক প্রদত্ত অনাপত্তিপত্রের সকল শর্ত পূরণ করে মত্স্য খাদ্য আইন ও আমদানি নীতিমালা অনুযায়ী মাছের খাদ্য আমদানি করেছেন। এ সমস্ত খাদ্যকে মিট অ্যান্ড বোন মিল বলার কোনো সুযোগ নেই। মিট এন্ড বোন মিল মাছ বা মুরগির খাবারের ১০-১২টি উপকারণের মধ্যে একটি উপকরণমাত্র। অন্যদিকে বলা যায়—মিট অ্যান্ড বোন মিল একটি একক খাদ্য তৈরির কাঁচামাল আর ‘ফিশ ফিড’ হচ্ছে কম্পাউন্ড আকারে,  যেখানে  নানা উপকরণ পরিমিতভাবে মেশানো হয় এবং তা মাছের খাদ্য হিসেবে বিভিন্ন আকারে তৈরি করা হয়। উভয় ক্ষেত্রে মান নিয়ন্ত্রণের পরীক্ষাও আলাদাভাবে আমদানি নীতি,  মত্স্য ও পশু খাদ্য আইনে চিহ্নিত করা আছে।

আমদানিকারকেরা বলছেন, গত ৪ আগস্ট ২০১৯ তারিখে মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে ফিশ মিল ও ফিশ ফিড আমদানির ক্ষেত্রে আবশ্যকভাবে পালনীয় ১৭টি শর্তে জুড়ে দেয়া হয়। অতীতে ইস্যু করা অনাপত্তিপত্রে এসব সকল শর্ত না থাকায়, যারা ঐ তারিখের আগেই ঋণপত্র খুলেছেন তাদের আমদানিকৃত পণ্যের ক্ষেত্রে এ সকল শর্তাবলি প্রয়োগের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

আমাদের দেশে মাছের খাদ্য উত্পাদনের অনেক কোম্পানি থাকলেও রপ্তানিযোগ্য মাছের উপযোগী সব খাদ্য এ দেশে তৈরি হয় না। রপ্তানিযোগ্য চিংড়ি চাষে শতভাগ আমদানিকৃত স্বাস্থ্য সনদপ্রাপ্ত খাদ্য ব্যবহূত হয়। তা ছাড়া বিশ্বমানের খাদ্য আমদানির পর থেকে দেশীয় খাদ্যের মানও ধীরে ধীরে উন্নত হচ্ছে কিন্তু এখনো পুরোপুরি সক্ষমতা অর্জন না করায় এ খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা থেকেই যাচ্ছে। গত দুই মাসে মাছের খাদ্য খালাসে জটিলতা তৈরি হওয়ায় দেশি কোম্পানিগুলো তাদের খাদ্যের দাম অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। আমদানিকারকরা বলছেন, দেশে ব্যবহূত মোট খাদ্যের শতকরা ৫ ভাগেরও কম আমদানি করা হয়, যা মূলত রপ্তানিযোগ্য মাছ ও চিংড়ি খাদ্য হিসেবে ব্যবহূত হয়। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে—দেশে উত্পদিত বিপুল পরিমাণ খাদ্যের ক্ষেত্রে পিসিআর টেস্টের মাধ্যমে মিট অ্যান্ড বোন মিলের উপস্থিতি যাচাই করা হয় না। কিন্তু আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ও স্বাস্থ্য সনদপ্রাপ্ত মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি থেকে আমাদানি করা খাদ্যে এ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

মত্স্য চাষের সাথে জড়িত চাষি, ডিলার ও আমদানিকারকরা দেশের মত্স্য সম্পদ বিকাশে বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ মাছের ভাসমান খাদ্যের প্রয়েজনীয়তা বিবেচনা করে মত্স্য ও চিংড়ি খাদ্যের আমদানির ওপর আরোপিত জটিলতা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।