শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সেল ফোন ট্র্যাকিং থেকে রক্ষা পেতে চাইলে

আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ২০:২৮

হলিউড মুভি ভক্তরা এই সিন হাজারো বার দেখে থাকবেন, সেলফোন ট্র্যাক করার মাধ্যমে পুলিশ অপরাধীদের খুঁজে বের করে, আর অনেক অপরাধী অপরাধ করার পরে তাদের লাখো টাকা দামের ফোন পানিতে ফেলে দেয়, ট্র্যাক না হওয়ার জন্য। শুধু অপরাধীদের খুঁজে পেতে নয়, আপনার দামী ফোনটি হারিয়ে গেলেও ট্র্যাকিং প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। কিন্তু পুলিশ কি সত্যিই আপনার ফোন আপনাকে খুঁজে দিতে সক্ষম, অথবা ফোন ট্র্যাক করে সত্যি অপরাধী পর্যন্ত পৌঁছানো সম্ভব? হ্যাকারও কি চাইলে আপনার ফোন ট্র্যাক করতে পারে? —আজকের আর্টিকেলে সেলফোন ট্র্যাকিং নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো এবং জানবো ট্র্যাকিং থেকে কীভাবে বাঁচা যেতে পারে।

সেলফোন ট্র্যাকিং

কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেলফোনের বা সেলফোনের সাথে থাকা সম্ভাব্য ব্যক্তির ফিজিক্যাল লোকেশন খুঁজে বের করা। এখন এটি কেন করা হয়; অবশ্যই কোনো ওয়ান্টেড ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়ার জন্য কিংবা ফোনটিকে খুঁজে পাওয়ার জন্য। বর্তমানে সেলফোন আমাদের জীবনের সাথে এতোবেশি জড়িয়ে পড়েছে যে, ঘুম থেকে উঠা হতে শুরু করে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত এটি ব্যবহূত হয়। বড়ো বড়ো কাজের ডিল আর সাথে বড়ো বড়ো অপরাধও এখন সেলফোনের মাধ্যমেই সংঘটিত হয়। আশানুরূপভাবে, সেলফোন ট্র্যাকিং এর মাধ্যমে অনেক অপরাধী বর্তমানে ধরা সম্ভব হয়ে উঠছে। তবে হ্যাকারও আপনাকে অবৈধভাবে ট্র্যাক করতে পারে, আপনার ফোনের সকল ডাটা অবৈধভাবে অ্যাক্সেস করতে পারে এবং আপনার সর্বনাশ ঘটাতে পারে। তো ট্র্যাকিং এর সুবিধা এবং অসুবিধা দুটোই রয়েছে, চলুন ধাপে ধাপে সমস্ত বিষয়গুলো জেনে নেওয়া যাক—

জিপিএস ট্র্যাকিং

সেলফোন ট্র্যাকিং এর ক্ষেত্রে আপনার ফোনে থাকা জিপিএস অনেক বেশি সহায়ক হিসেবে কাজ করে। অপরাধী যদি কোনো  স্মার্টফোন ব্যবহার করে আর তাতে যদি জিপিএস লাগানো থাকে তবে পুলিশের কাজ অনেক সহজ হয়ে যায়। জিপিএস থাকলে সেল অপারেটরের সাথে যোগাযোগ না করেও ফোনের লোকেশন পাওয়া সম্ভব। পুলিশের কাছে কিছু সিস্টেম সেটআপ থাকে যার মাধ্যমে তারা ফোনের জিপিএস থেকে অ্যাক্সেস নিয়ে লোকেশন ট্র্যাক করে। কিন্তু বিভিন্ন দেশের পুলিশ বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে জিপিএস ট্র্যাকিং করে। বড়ো বড়ো দেশের কাছে সরাসরি স্যাটেলাইট অ্যাক্সেস থাকে, ফলে তারা সহজেই তথ্য পেয়ে যায়, ফোনটি ঠিক কোন জিপিএস স্যাটেলাইট থেকে সিগন্যাল গ্রহণ করছে। আমাদের দেশের পুলিশ সাধারণত দুইভাবে জিপিএস ট্র্যাকিং করে।

প্রথমত, অপরাধীর ফোনটি যদি স্মার্টফোন হয়, তবে স্বাভাবিকভাবে সেটি হয়তো অ্যান্ড্রয়েড হবে, তখন পুলিশ এতে লগইন থাকা জিমেইল আইডিতে অ্যাক্সেস পাওয়ার চেষ্টা করে। কেননা গুগল আপনার ফোনের লোকেশন হিস্টোরি সেভ করে রাখে। আবার গুগলে ফোন ট্র্যাক করারও অপশন রয়েছে। তাই গুগল অ্যাকাউন্টের ওপর কন্ট্রোল পেয়ে গেলে সেলফোন ট্র্যাকিং সহজ হয়ে যায়।

হ্যাকার আক্রমণ

এতক্ষণ আলোচনা করলাম, পুলিশ এবং অপরাধী নিয়ে। কিন্তু আপনার আমার মতো সাধারণ মানুষের ফোনও ট্র্যাকিং হতে পারে। এখন আপনি বা আমি তো কোনো অপরাধী নয়, কিন্তু অপরাধী হ্যাকার আপনার প্রাইভেসি নষ্ট করার জন্য আপনার ফোন ট্র্যাক করতে পারে। শুধু আপনার ফোন ট্র্যাক নয়, বরং আপনার ফোনের কল রেকর্ড, ম্যাসেজ, কন্টাক্ট লিস্ট, ইমেইল, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, অনলাইন অ্যাকাউন্ট ইত্যাদি সহ সবকিছু তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিতে পারে এবং আপনি একটুও টের পাবেন না।

হ্যাকার মূলত আপনাকে ঠকিয়ে আপনার ফোনে ম্যালওয়্যার ইনস্টল করে দেয়; এই ধরনের ম্যালওয়্যারকে মূলত স্পাইওয়্যারও বলা হয়। এই প্রোগ্রামগুলোকে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়, যাতে এটি আপনার ফোনের সিস্টেমে লুকিয়ে কাজ করতে পারে এবং আপনার সকল তথ্য হ্যাকার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। আপনাকে ইমেইল করে, ওয়েবসাইট থেকে, ফেক কল করে, অথবা হ্যাকার নিজে ফিজিক্যালি আপনার ফোনে এই ম্যালওয়্যার ইনজেক্ট করিয়ে দিতে পারে। আবার আপনি নিজেই অন্য কাজের জন্য কোনো অ্যাপ ডাউনলোড করলেন, কিন্তু হতে পারে সেটা আপনার তথ্যগুলোকে চুরি করছে।

যেভাবে সেলফোন ট্র্যাকিং থেকে রক্ষা পাবেন

আপনি যদি সাধারণ ব্যক্তি হয়ে থাকে এবং হ্যাকিং এর কবল আর সেলফোন ট্র্যাকিং থেকে বাঁচতে চান তবে আর্টিকেলের এই অংশটি আপনার কাজে লাগতে পারে।

n আপনার ফোনে সিকিউরিটি লক ব্যবহার করুণ, যেটাকে লক স্ক্রিন লক বলেও জানেন। হতে পারে আপনার কাছের কোনো ব্যক্তিই আপনার ফোনে কোনো ম্যালওয়্যার ইন্সটল করে দিল, আপনার ফোনকে ট্র্যাক করার জন্য।

n আপনার ফোন কখনোই রুট করবেন না, কেননা এধরনের অ্যাপ কাজ করার জন্য বেশিরভাগ সময়ই ফোনে রুট অ্যাক্সেসের ডিম্যান্ড করে।

n কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত মেইল বা ম্যাসেজ ওপেন করবেন না এবং সেটার সাথে যদি কোনো লিঙ্ক বা অ্যাটাচমেন্ট থাকে সেটাতে ক্লিক করবেন না। মেইলটি ওপেন করার আগে অবশ্যই যাচাই করে নিন, সেটা আপনার কাছে আসার কথা ছিল কিনা। যে কোনো ভাউতাবাজী অফার ওয়ালা মেইলকে বিশ্বাস করবেন না।

n গুগল প্লে স্টোর বাদে অন্য কোন সোর্স থেকে কোনো অ্যাপ ডাউনলোড করা থেকে বিরত থাকুন, অ্যামাজন স্টোর ব্যবহার করতে পারেন, কিন্তু যে কোনো অ্যাপ স্টোর ব্যবহার করার আগে যাচাই করে নিন, সেটি কতটা জনপ্রিয়।

n ফোনে অ্যাপ ইন্সটল করার আগে বা ইন্সটল থাকা অ্যাপসগুলোর পারমিশন চেক করে দেখুন, যাচায় করুণ সেটি অঝথা পারমিশন ডিমান্ড করে রেখেছে কিনা। ধরুন আপনি একটি ফটো এডিটর অ্যাপ ডাউনলোড করেছেন, তো সাধারণভাবে ফটোএডিটর অ্যাপ ফোনের ক্যামেরা, মাইক, ফাইলস ইত্যাদির পারমিশন চায়। কিন্তু অ্যাপটি যদি ম্যাসেজ, ইমেইল, কন্টাক্ট ইত্যাদি পারমিশন চেয়ে বসে থাকে তবে অ্যাপটি ব্যবহার না করায় ভালো, বরং অন্য অল্টারনেটিভ অ্যাপ খুঁজে দেখতে পারেন।

আপনার ফোনে একবার ম্যালওয়্যার প্রবেশ করিয়ে দিলে আপনার ফোন যদি আপনি অফ ও করেন তবুও হ্যাকার আপনার ফোনের অ্যাক্সেস পেতে পারবে। কেনোনা ফোন অফ/অন হাইজ্যাক নামেও ম্যালওয়্যার রয়েছে। যাই হোক, সর্বোউচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিচের উপস্থিত বুদ্ধিকে কাজ লাগান এবং সিকিউরিটি প্র্যাকটিসগুলোকে চলতি রাখুন।

আর আপনি যদি কোনো অপরাধী হয়ে থাকেন এবং আপনার পেছনে যদি পুলিশ বা এফবিআই লেগে থাকে, তবে আপনার কপাল সত্যিই খারাপ। আজ হোক আর কাল আপনাকে ধরা পড়তেই হবে, তাই অপরাধ করার আগে নিজের বিবেককে প্রশ্ন করুণ, আর অপরাধ থেকে দূরে থাকুন।