শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

আইওএস না অ্যান্ড্রয়েড

কোনটি বেশি জনপ্রিয়

আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০১৯, ২০:৪০

স্মার্টফোনের মধ্যে অ্যান্ড্রয়েড ফোন এগিয়ে না আইফোন এগিয়ে। এমন প্রশ্ন অনেকের মনেই জাগে। অ্যান্ড্রয়েড ৭ নুগাট এবং আইওএস ১০ বাজার মাতাচ্ছে। অ্যান্ড্রয়েডে নতুন মাল্টি-টাস্কিং ফিচার থাকছে এবং ওদিকে আইওএসে পাওয়ারফুল ডেভেলপারস এপিআইএস দেওয়া হয়েছে। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে অ্যান্ড্রয়েড আর আইওএস হচ্ছে লিডিং মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমস। অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস তাদের নিজস্ব কিছু ফিচারের জন্য একে অপরের থেকে আলাদা। তবে অ্যাপলের আইওএস এবং গুগলের অ্যান্ড্রয়েড দুটির জন্যই দুনিয়াতে ফ্যান ফলোয়ার অনেক রয়েছে। অনেকেই দীর্ঘ লাইন ধরে অপেক্ষা করেন, হাজার হাজার টাকা খরচ করেন তাদের প্রিয় ওপারেটিং সিস্টেমের নতুন সংস্করণের মজা সবার আগে উপভোগ করার জন্য। অ্যান্ড্রয়েড ৭ এবং আইওএস ১০-এর ফিচারগুলোকে একে অপরের সঙ্গে তুলনা করে আপনাদের সামনে হাজির করব। আর এদের মধ্যে কে এগিয়ে বিষয়টি আপনার হাতেই ছেড়ে দিবো। কারণ আমাদের সবার চাহিদা এক নয়।

অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএসের লেটেস্ট সংস্করণে তাদের আগের সংস্করণের থেকে নতুন কিছু ফিচার যুক্ত হয়েছে। শুরু করছি আইওএস ১০ দিয়েই—

আইওএস ১০ আপডেটে অল্প ইমপ্রুভমেন্টসহ সিস্টেম অ্যাপসগুলো (যেমন সাফারি, নিউজ, মিউজিক ইত্যাদি)-তে আপডেট করা হয়েছে। লিফস টু ওয়েক এখন আপনার অ্যাপল ডিভাইসের সেন্সরকে কাজে লাগিয়ে কাজ করবে। এতে আপনি যখন ডিভাইসটি হাতে  নেবেন তখন অটোমেটিক স্ক্রিনের ডিসপ্লে অন হবে। অন্যদিকে, অ্যান্ড্রয়েডের নির্দিষ্ট কিছু হাই-অ্যান্ড ডিভাইসগুলোতে এই ফিচারটি আগেই দেওয়া রয়েছে। অন্যদিকে আইওএস ১০ এর মূল আর্কষণ হলো এর এপিআই আপডেট। এখন থেকে ‘সিরি’-এর সাহায্যে আপনার অ্যাপল ডিভাইসের সকল অ্যাপসের ভয়েস ইনপুটকে সিরি ইনপুটে রূপান্তরিত করে দেওয়া হয়েছে। আগে সিরি ছিল একটি ভয়েস সার্চ টুলস মাত্র, কিন্তু আইওএস ১০ থেকে সিরি আপনার ডিভাইসের পারসোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করবে।

অন্যদিকে, অ্যান্ড্রয়েড এর লেটেস্ট সংস্করণ অ্যান্ড্রয়েড নুগাট বা সাধারণত এন্ড্রয়েড ৭.১ হচ্ছে অ্যান্ড্রয়েডের বেস্ট রিলিজ এখন পর্যন্ত। শুরুর দিকে গুগল পিক্সেল ফোনে এক্সক্লুসিভভাবে অ্যান্ড্রয়েড ৭.১ দেওয়া থাকলেও এখন অন্যান্য অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসেও অ্যান্ড্রয়েড ৭ দেওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। আইওএস এর সিরি-এর আপডেটের মতো অ্যান্ড্রয়েড ৭-এ রয়েছে গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট  যা আপনার মোবাইল ডিভাইস ব্যবহার করার অভিজ্ঞতাই বদলে দেবে।

অ্যান্ড্রয়েড ৭-এর একটি ফিচার হলো মাল্টি টাস্কিং সিস্টেম। এখন একইসঙ্গে দুটি অ্যাপসে স্প্লিট-স্ক্রিনের মাধ্যমে কাজ করা যাবে। রিসেন্ট বাটনে ডাবল প্রেস করলে আপনার মোস্ট ইউজড দুটি অ্যাপসের মধ্যে চলে যাওয়া যাবে। এছাড়াও, নোটিফিকেশন শেড, কুইক সেটিংস এবং মেইন সেটিংসগুলোকে আরো সহজবোধ্য করে দেওয়া হয়েছে অ্যান্ড্রয়েড ৭ নুগাট-এ।

সাধারণ পার্থক্যসমূহ

বেসিক সফটওয়্যারের অভিজ্ঞতার দিক থেকে অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস প্রায় একই রকম রয়েছে। দুটিতেই ইউজারদের লক স্ক্রিনে সোয়াইপ বা অথেনটিকেশন করে সিস্টেমে প্রবেশ করতে হয়। সিস্টেমে প্রবেশ করে আপনি কিছু কমন অ্যাপসযুক্ত হোমস্ক্রিন পাবেন। দুটি ওএস-এর রয়েছে বিশাল অ্যাপস স্টোর, যেখান থেকে আপনি দরকারি অ্যাপসগুলো আপনার ডিভাইসে ডাউনলোড করে ইন্সটল করে নিতে পারবেন।

মাল্টি টাস্ক-এর সুবিধা হলো—শুধু লেটেস্ট এবং হাই-অ্যান্ড কোয়ালিটির অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস ডিভাইসে দেওয়া রয়েছে। তবে সেখানেও অধিকাংশ সময় একটি অ্যাপস ডিসপ্লেতে থাকবে এবং অন্য অ্যাপসটি ব্যাকগ্রাউন্ডে রানিং হতে থাকবে। ডেডিকেটেড লিস্ট থেকে আপনি আপনার রিসেন্ট ইউস করা অ্যাপস লিস্ট পাবেন যেখান থেকে দ্রুত ব্যবহারের জন্য দরকারি অ্যাপসগুলো সাজানো থাকবে। দরকার ফুরিয়ে গেলে স্ক্রিন থেকে অ্যাপসটি সোয়াইপ করে বাদ দিয়ে সেটিকে বন্ধ করে দিতে পারবেন।

টপ স্ক্রিন থেকে সোয়াইপ ডাউন করলে অ্যান্ড্রয়েডে নোটিফিকেশন শেড দেখতে পাবেন। এটি এক ধরনের ড্রপ ডাউন মেনু যেখানে বিভিন্ন নোটিফিকেশন এবং সার্ভিস স্ট্যাটাস দেওয়া থাকে। অন্যদিকে আইওএস তাদের কুইক সেটিং প্যানেলকে ডিভাইসের নিচের দিকে সেট করে রেখেছে।

হোম স্ক্রিন

হোম স্ক্রিন হচ্ছে আপনার ডিভাইসের মূল কার্যস্থল। অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস দুটিরই হোম স্ক্রিন রয়েছে। কিন্তু এদের মধ্যে মূল পার্থক্য হচ্ছে, অ্যান্ড্রয়েডে আপনি আলাদা অ্যাপ ড্রয়ার পাচ্ছেন। অন্যদিকে আইওএসয়ে এই অ্যাপ ড্রয়ার ফিচারটি নেই, সেখানে সকল অ্যাপসকে হোমস্ক্রিনে দেওয়া হয়েছে।

অ্যান্ড্রয়েডে আরেকটি চমত্কার ফিচার হলো—এখানে আপনি থার্ডপার্টি লাঞ্চার ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের হোমস্ক্রিনের মজা নিতে পারবেন। অন্যদিকে আইওএসে লাঞ্চার ব্যবহারের সুযোগ নেই। বরং আইওএস লাঞ্চার ব্যবহার করে অ্যান্ড্রয়েডে আইওএস-এর মজাও আপনি নিতে পারবেন। লাঞ্চার হলো এক ধরনের ফুল ডেস্কটপ ম্যানেজিং অ্যাপ যা আপনার সম্পূর্ণ ডিভাইসকে নতুন রূপে রূপান্তরিত করে। লাঞ্চারে নিজস্ব আলাদা আইকন, ফোল্ডার, নিজস্ব ফিচারসমৃদ্ধ অ্যাপস, বিভিন্ন লেয়ার থাকে যা ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি আপনার ডিভাইসে রূপ ফুটিয়ে তুলতে পারবেন।

লকস্ক্রিন

প্রতিবার মোবাইল চালু করার পর এক্সট্রা ইনফরমেশন পাবার জন্য কিংবা মোবাইলে সিকিউরিটি প্রদানের জন্য লকস্ক্রিন ব্যবহূত হয়ে থাকে। বর্তমান যুগের হাই-অ্যান্ড ডিভাইসগুলোতে বায়োমেট্রিক লকস্ক্রিন সিস্টেম (যেমন ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার ফিচার) দেয়া থাকে। এছাড়াও পিনকোড, পাসওয়ার্ড কিংবা অ্যান্ড্রয়েডে প্যাটার্ন সিস্টেম রয়েছে সিকিউরিটির জন্য। হোমস্ক্রিনের মতোই অ্যান্ড্রয়েডে থার্ডপার্টি লকস্ক্রিন ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি লকস্ক্রিনে বৈচিত্র্য আনতে পারবেন। কিন্তু অন্যদিকে আইওএস ডিভাইসগুলোতে লকস্ক্রিন কাস্টমাইজের সুযোগ নেই।

নোটিফিকেশন

অ্যাপল এবং গুগলের ওএসগুলোর দুটিতে ড্রপ ডাউন নোটিফিকেশন টুল রয়েছে যার কাজ হলো আপনার চেকিংয়ের জন্য বিভিন্ন নোটিফিকেশনকে তুলে ধরা। এছাড়াও দুটিতে কল কিংবা মেসেজ আসলে পপআপ নোটিফিকেশনের ফিচার দেওয়া রয়েছে। গুগলের নোটিফিকেশন শেডে প্রত্যেকটি নোটিফিকেশনকে বাটনযুক্ত একশনে রূপান্তর করে দেওয়া হয়েছে।

নোটিফিকেশন বারে থেকেই আপনি মেসেজের রিপ্লাই দিতে পারবেন, মিউজিক পরিবর্তন করতে পারবেন, ই-মেইলের রিপ্লাই দিতে পারবেন মূল অ্যাপ্লিকেশনটি ওপেন না করেই। এছাড়া নোটিফিকেশন শেডের পাশেই কুইক সেটিংস দেওয়া রয়েছে। যেখানে অ্যান্ড্রয়েড আপনাকে ডিসপ্লে ব্রাইটনেস, ভলিউম, ওয়াই-ফাই, ব্লু-টুথ, ফ্ল্যাশলাইট চালু-বন্ধ করাসহ বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে থাকবে। অন্যদিকে, আইওএস-এর হোম স্ক্রিনে সোয়াইপ ডাউন করলে শুধু নোটিফিকেশন দেখাবে। আর নিচ থেকে সোয়াইপ আপ করলে কুইক সেটিংস পপআপ করবে। আইওএস কুইক সেটিংসয়ে ডেডিকেটেড মিউজিক প্লেব্যাক অপশন দেওয়া রয়েছে। তবে আইওএসে এটাও কাস্টমাইজের সুবিধা দেওয়া হয়নি।

সুযোগ-সুবিধা

সুযোগ-সুবিধাই হচ্ছে আইওএস ও অ্যান্ড্রয়েডের পার্থক্যের মূল বিষয়। আইওএস তাদের ডিভাইসের হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারের নিয়ন্ত্রণের দিক থেকে কঠোর ভূমিকা পালন করে থাকে। অন্যদিকে গুগল শুধু তাদের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমকে নিয়ন্ত্রণ করে আর হার্ডওয়্যারের বিষয়টি অন্য কোম্পানির ওপর ছেড়ে দেয়।

আপনি যদি শুধু ওয়েব ব্রাউজিং, সোশ্যাল নেটওয়ার্ক চেকিং, ছবি তোলা, গান শোনা, সিনেমা দেখা আর ফোন করার জন্য মোবাইল ডিভাইস ব্যবহার করে থাকেন তাহলে  সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রটি আপনার জন্য পীড়াদায়ক হবে না। এক্ষেত্রে ৬ হাজার টাকার অ্যান্ড্রয়েড আর ৪০ হাজার টাকার আইফোন আপনার কাছে একই ধরনের মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক। সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার জন্য হার্ডওয়্যারের ভূমিকা বেশি থাকে সফটওয়্যারের চেয়ে। অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসগুলোতে আপনি আপনার বাজেট এবং চাহিদা অনুসারে হার্ডওয়্যার বাছাই করে নিতে পারবেন। ৬৪ বিট অক্টো কোর প্রসেসর থেকে ৩২ বিট ডুয়াল কোর প্রসেসর, ৮ গিগাবাইট র্যাম থেকে ৫১২ মেগাবাইট র্যাম, ৪ গিগাবাইট স্টোরেজ থেকে ৩২, ৬৪ এমনকি আজকাল ১২৮ গিগাবাইটের স্টোরেজযুক্ত অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস বাজারে দেখা যাচ্ছে। এছাড়াও অন্যান্য হার্ডওয়্যার ফিচার যেমন—ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার, বিভিন্ন মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা সেন্সর ইত্যাদি আপনি বিভিন্ন অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে পেয়ে থাকবেন।

কিন্তু একই হার্ডওয়্যারযুক্ত অ্যান্ড্রয়েড এবং আইফোনের পারফরমেন্সও একই হবে এই ধারণাটি একদমই ভুল। কাগজে-কলমে একই হার্ডওয়্যারযুক্ত বিভিন্ন অ্যান্ড্রয়েড সেটেও আপনি পারফরমেন্সের পার্থক্য দেখতে পাবেন। প্রায় ৭/৮ বছর ধরে আইফোন তার ডুয়াল কোর প্রসেসর এবং ৫, ৮, ১২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা দিয়ে পারফরমেন্সের শীর্ষ স্থান রেখেছিল যেখানে অ্যান্ড্রয়েড-এর থেকেও বেশি হার্ডওয়্যার ক্যাপাসিটিযুক্ত ডিভাইস দিয়েও তেমন বাজার মাতাতে পারেনি। বর্তমান সময়ে অ্যাপল আর অ্যান্ড্রয়েড পারফরমেন্সের ক্ষেত্রে হাড্ডাহাড্ডি অবস্থানে রয়েছে।

আপনি যদি আপনার মোবাইল ডিভাইসকে নিজের মতো করে সাজিয়ে নিতে চান, বিভিন্ন খুঁটিনাটি ফাংশনগুলোকে নিজের মতো কাস্টমাইজ করে নিতে চান তাহলে অ্যান্ড্রয়েড আপনার জন্য উপযুক্ত। অন্যদিকে আপনি যদি মোবাইলের খুঁটিনাটি না ঘেঁটে কোম্পানির ওপর নিজের ভরসা রেখে মোবাইল ডিভাইস ব্যবহার করতে চান তাহলে আইওএস আপনার জন্য উপযোগী।