শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

রোবট যখন আপনার বস!

আপডেট : ১১ জুন ২০১৯, ২০:৪০

মাহবুব শরীফ

 

রোবট হতে পারে আপনার কর্মক্ষেত্রের বস! আবার রোবট কেড়ে নিতে পারে আপনার চাকরিও! এ রকম কিছু ঘটনা ঘটতে শুরু করেছে অনলাইনে সবচেয়ে বড় কোম্পানি আমাজনে। তবে আপনি যেভাবে আশঙ্কা করেছিলেন সেভাবে নাও হতে পারে।

প্রযুক্তি বিষয়ক সাইট দ্য ভার্জ-এ সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোবট এখন আমাজনের কিছু ‘ফুলফিলমেন্ট সেন্টারে’ কর্মীদের ওপর নজরদারিই শুধু চালাচ্ছে না, কর্মীদের ছাঁটাই পর্যন্ত করছে। কোনো কর্মীর উত্পাদনশীলতা কতটা, তার ওপর ভিত্তি করে রোবট নাকি এই কাজ করছে।

আমাজন যে যে ব্যবস্থা চালু করেছে, তাতে প্রতিটি কর্মীর উত্পাদনশীলতা মনিটর করে রোবট। তার উত্পাদনশীলতার ভিত্তিতে এরপর রোবট নিজেই সেই কর্মীকে সতর্ক করে দেয় বা কাজ থেকেই ছাঁটাই করে।

অ্যামাজনে কর্মীরা যেরকম কম বেতনে কাজ করেন কিংবা সেখানে কাজের যে পরিবেশ, তা নিয়ে মাঝেমধ্যেই খবর প্রকাশিত হয় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে। অ্যামাজনের ওয়্যারহাউসে কাজ করেন এমন এক নারী কর্মীর অভিযোগ, যে পরিমাণ কাজের টার্গেট তাকে ঠিক করে দেওয়া হয়েছে, সেটির জন্য তিনি ঠিকমত টয়লেটে পর্যন্ত যেতে পারেন না। কাজেই তিনি কাজের সময় পানি কম খান, যাতে তাকে টয়লেটে যেতে না হয়।

অ্যামাজনের আরেকজন সাবেক কর্মী বলেছেন, তাদের সঙ্গে আমাজন এমন ব্যবহার করে, যেন তারাও রোবট। যে অবাস্তব টার্গেট দেওয়া হয়, সেটি অর্জন করতে না পারলে সঙ্গে সঙ্গে কাজ থেকে ছাঁটাই করে দেওয়া হয়।

দ্য ভার্জে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, অ্যামাজনের হাজার হাজার কর্মীকে কেবল এই কারণে ছাঁটাই করা হচ্ছে যে তারা যথেষ্ট দ্রুততার সঙ্গে কাজ করছেন না।

এই ঘটনা এমন এক দৃশ্যই তুলে ধরছে যেখানে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাই হবে আপনার বস। কোনো মানুষের সংশ্লিষ্টতা ছাড়াই এখানে রোবট নিজেই আমাদের কাজের ওপর খবরদারি করবে, আমাদের সতর্ক করে দেবে। কিংবা কাজ থেকে ছাঁটাই করে দেবে।

প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, আমাজনের এই সিস্টেমে কর্মীদের জন্য আপিল আবেদন করার একটা ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।

‘অ্যামাজনে যারা কাজ করেন, তাদের সঙ্গে রোবটের মতো ব্যবহার করছে রোবট’, বলছেন ইনস্টিটিউট ফর সেল্ফ রিলায়েন্সের স্ট্যাসি মিচেল।

‘এখানে কর্মীদের গণ্য করা হচ্ছে বড় একটি যন্ত্রের চাকা হিসেবে, যাদেরকে চাইলে সহজেই বাদ দিয়ে দেওয়া যায়।’

অ্যামাজন তাদের কর্মীদের জন্য যে টার্গেট বা উত্পাদনশীলতার মান ঠিক করে দেওয়া, সেটি খুব সুস্পষ্ট নয়।

তবে এসব অভিযোগের জবাবে অ্যামাজনের তরফ থেকে বিবিসিসহ অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমে যে বিবৃতি পাঠানো হয়েছে, তাতে বলা হয়-

‘এটি একেবারেই সত্য নয় যে, কর্মীদের একটি স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ছাঁটাই করা হচ্ছে। অন্য কোম্পানির মতোই আমাদের প্রতিষ্ঠানেও কর্মীদের কর্মদক্ষতার ব্যাপারে কিছু প্রত্যাশা থাকে, ফুলফিলমেন্ট সেন্টারে বা কর্পোরেট পর্যায়ে, যেখানেই তারা কাজ করুন না কেন।’

‘আমরা কখনোই কোনো কর্মীকে কর্মদক্ষতা উন্নয়নের জন্য যথেষ্ট সাহায্য-সমর্থন এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা বা সুযোগ না দিয়ে ছাঁটাই করি না। যেহেতু আমরা এমন একটি কোম্পানি যাদের ব্যবসা ক্রমশ বাড়ছে, কাজেই কর্মীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদে ক্যারিয়ারে আরো ভালো করার সুযোগ নিশ্চিত করা আমাদের অন্যতম ব্যবসায়িক লক্ষ্য।’

তবে অ্যামাজনে অটোমেশন কতটা ব্যাপকভাবে হচ্ছে সে ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তর অ্যামাজন দেয়নি। তবে কিছুদিন আগে অ্যামাজন প্রতিশ্রুতি দেয় যে, তারা তাদের প্রাইম সার্ভিসের ডেলিভারি টাইম আরো কমিয়ে আনবে। কিন্তু-এর ফলে কি অ্যামাজনের ওয়্যারহাউসে যারা কাজ করেন, তাদেরকেই মূল্য দিতে হবে?

কাজের আগামী

কোনো যন্ত্র মানুষের চাকরি খাচ্ছে- এমন ঘটনা এটাই প্রথম নয়। আর এটাকে তো শেষ বলাই যাবে না।

তাহলে ভবিষ্যতে চাকরিজীবীদের কাজের ভবিষ্যত্ কী হবে? কর্মীদের কাজের দক্ষতা রেকর্ড করার জন্য অনেক কোম্পানিই কিন্তু আগে থেকে যন্ত্রের ব্যবহার করছে।

ডিজিটাল অ্যানালিটিকস থেকে শুরু করে কোন ফ্যাক্টরিতে ‘ক্লক আউট’ করার বিধানের অন্যতম উদাহারণ। ‘এখন যেহেতু এরকম অনেক প্রযুক্তি চলে এসেছে, তাই এগুলো ব্যবহার করে কর্মক্ষেত্রে এরকম আরও অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা আমরা নিশ্চিতভাবেই দেখতে পাবো’ বলছেন চার্টার্ড ইনস্টিটিউট অব পারসোনেল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের ডিরেক্টর ডেভিড ডি সুজা।

এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটা হচ্ছে আমরা এ ধরণের প্রযুক্তির ওপর কতটা নির্ভর করবো এবং এটি করতে গিয়ে কতদূর পর্যন্ত মানুষে-মানুষে সম্পর্ককে বাদ দেব।