শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

লিব্রার টার্গেট এশিয়ার ১.৭ বিলিয়ন তরুণ

আপডেট : ১৫ জুলাই ২০১৯, ২০:৪৯

মোজাহেদুল ইসলাম

 

এশিয়ার ১.৭ বিলিয়ন তরুণের মধ্যে ৫ ভাগের ২ ভাগ তরুণের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই। তারা ফেসবুকের ডিজিটাল মুদ্রা বিনিময় লিব্রা ব্যবহার করে পণ্য ক্রয় ও বিভিন্ন সেবা গ্রহণ করতে পারবে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ এশিয়া মাহাদেশের এই বিশালসংখ্যক তরুণ-তরুণীকে লক্ষ্য করেই ডিজিটাল মুদ্রা লিব্রা সার্ভিস চালু করেছে।  

এশিয়ায় ডলারের বিপরীতে ডিজিটাল মুদ্রা বিনিময় প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে চীনের প্রচলিত মুদ্রা ইয়ান বিনিময়েও প্রভাব পড়তে পারে।  ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল মুদ্রা বিনিময় করতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ইতিমধ্যে যা কোটি মানুষের দৈনিক চাহিদা পূরণ করতে পারে। ইতিমধ্যে বিশ্বের অনেকগুলো রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো বিষয়টিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাপী একটি প্রশ্ন জেগে উঠেছে আর তা হলো, বিশ্বব্যাপী আর্থিক লেনদেনের উপযুক্তি প্ল্যাটফরম আসলে কোনটি হবে?

উদাহারণ হিসেবে বলা যায়, লিব্রা ব্যবহারকারীরা এটিকে মুদ্রা বলবে। যারা ফেসবুক ব্যবহার করে না বা এর বাইরে ডিজিটাল মুদ্রা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।  এ ধরনের মুদ্রা বিনিময় চালু হলে বিদেশি নিয়ন্ত্রণ বন্ধ হয়ে যাবে এবং বিভিন্ন দেশের সরকারের ওপর বৈদেশিক উপার্জনে প্রভাব পড়বে। আরো একটি বিষয় রয়েছে আর তা হলো বিশ্বব্যাপী এই মুদ্রার স্বীকৃতি।

এ বিষয়ে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ রয়েছে এশিয়া মহাদেশে। এখানেই  বিশ্বের বড়ো বড়ো অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান। চীন থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক অর্থনীতির ভান্ডার হিসেবে তাদের মুদ্রার ক্রমবর্ধমান ভূমিকা পালন করে। আমেরিকা সব সময় সবকিছুকে কম সস্তা করে; কারণ বিশ্বের বড়ো বড়ো পাচারকারী, ওধুষ বিক্রেতা ও সন্ত্রাসীরা সাধারণত মার্কিন মুদ্রা চায়। যা শুধু আমেরিকাই তৈরি করতে পারে। এতে করে আমেরিকানরাই সবকিছু খুব সহজে ভোগ করতে পারে।

এদিক থেকে চীনও এই সুযোগটি চায়। ভবিষ্যতে হয়তো ভারত ও ইন্দোনেশিয়া এমন হবে। যা-ই হোক, চীনের মুদ্রা ইয়ানকে বিশ্বব্যাপী প্রচলিত করাটা কঠিন হয়ে পড়বে যদি ফেসবুকের ডিজিটাল মুদ্রা লিব্রা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। মূলধন নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে এশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো তাদের রপ্তানি নেতৃত্বাধীন  অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে উদ্দীপ্ত করতে সব সময় দুর্বল মুদ্রাগুলোকে সন্ধান করে।

এখন পর্যন্ত কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডিজিটাল মুদ্রা বিনিময়ের কার্যক্রম চালু করেনি। অনলাইন পেমেন্টের বিষয়ে ব্যাংকগুলো মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করছে। এটি কোনো বহুমুখী আইডিয়া নয়।

গত বছরের আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলোর বন্দোবস্তের জরিপ বলছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এই ধরণা নিয়ে কাজ করছে তারা। এ বিষয়ে নতুন কোনো উদ্যোগ নিতে পরবর্তীতে আর দেখা যায়নি। বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ইতিমধ্যে ডিজিটাল লেনদেনের ব্যবস্থা চালু করেছে। এগুলো এখন পর্যন্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। এগুলোক ব্যাংক রিজার্ভ বলা হয়। 

সুইজারল্যান্ড-ভিত্তিক লিব্রা অ্যাসোসিয়েশন, যা ভিসা করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। উবার টেকনোলজিস ইন করপোরেশন ফেসবুকসহ অন্যান্য ভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল নিয়েছে।

ফেসবুকের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ডিজিটাল টোকেন বিনিময় শুরু করেছে। যদি এটি তাদের নতুন কৌশল না হয়ে থাকে, তাহলে তারা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নতুন কিছু চিন্তা করতে পারে। জনগণের জন্যও তারা আলাদা ব্যালেন্সশিট খুলতে পারে। আমেরিকাভিত্তিক ইতিবাচক মুদ্রা বিনিময় প্ল্যাটফরম বিটকয়েন সরাসরি ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের সঙ্গে পরিচালিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা গিয়েছে। এটি বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে প্রতিহত করার  মাধ্যমে হিসেবে ভাবছে বিশ্লেষকরা। যদিও এমন একটি পদক্ষেপ অর্থ লেনদেনের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে।

স্বাভাবিক সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো উচ্চ সুদে গ্রাহকদের আমানত জমা রাখতে পারে। কিন্তু যখন পেনিক স্ট্রাইক হবে তখন বিভিন্ন ব্যাংকের আমানত কমে যেতে পারে। পরবর্তী সময়ে যদি সুদ আরো বাড়িয়ে দেওয়া হয়, তাহলেও আমানত না বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর্থিক কর্তৃপক্ষ তাদের ব্যাংকিং সিস্টেমের তহবিল বিপর্যয় চায় না।

যা-ই হোক, ফেসবুক অর্থনৈতিক লেনদেনের জন্য হুমকি তৈরি করতে পারে, হয়তো তাদেরকে ভিন্ন রাস্তায় হাঁটতে হবে।

নতুন ক্রয়ক্ষমতা এশিয়া ও আফ্রিকা থেকে আসবে, কারণ, এই দেশগুলোতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার অনেক বেশি।