শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বরিশাল নদীবন্দরে বর্জ্যের কারণে ড্রেজিং ব্যাহত

আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০১৯, ২২:১৯

শুকনো মৌসুমের শুরুতেই বরিশাল নদীবন্দরসহ দক্ষিণাঞ্চলের ৩০টি পয়েন্টে নাব্যতা সংকট দেখা দেওয়ায় কীর্তনখোলায় আগেভাগেই ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ নেয় বিআইডব্লিউটিএ। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বরিশাল নদীবন্দর এলাকার পলি অপসারণ করতে গিয়ে বর্জ্যের কারণে ড্রেজিং কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বরিশাল নদীবন্দর এলাকায় ১ লাখ কিউবিক মিটার পলি বালু ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে অপসারণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও গত ১৩ দিনে তেমন সাফল্য নেই। আনুষ্ঠানিক ড্রেজিং কার্যক্রম ঘোষণার তিন দিন পর তা শুরু করতে পারে কর্তৃপক্ষ।

ড্রেজিং শুরুর পর গত ১০ দিনে বিরতিহীনভাবে ২৪ ঘণ্টা ড্রেজার মেশিন চালালেও বাস্তবে পাঁচ/ছয় ঘণ্টার বেশি পলি অপসারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নৌবন্দর এলাকায় অতিরিক্ত বর্জ্য থাকায় বার বার পাইপ পরিষ্কার করা হচ্ছে। এভাবে পাইপ পরিষ্কার করায় প্রচুর সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। নদীবন্দর এলাকায় গড়ে ওঠা বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণ বর্জ্য নদীতে ফেলা হচ্ছে। বিআইডব্লিউটিএর সহকারী প্রকৌশলী রেজা রশিদ খন্দকার ইত্তেফাককে জানান, বরিশাল নদীবন্দর এলাকায় ড্রেজিংয়ের জন্য কার্যক্রম শুরু করা হলেও পলিতে প্রচুর পরিমাণে পলিথিনসহ ময়লা-আবর্জনা থাকায় শ্লথগতিতে কাজ এগুচ্ছে। তার মতে, সেখানে শুরু থেকে সঠিকভাবে ড্রেজিং করা গেলে পলি অপসারণের কাজ সময়মতো শেষ হয়ে যেত। বার বার কাজ বন্ধ করে ড্রেজারের পাইপ থেকে আবর্জনা পরিষ্কার করতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যয় হচ্ছে। ১৫ দিনের ড্রেজিং কতদিনে শেষ হবে তা বোঝা যাচ্ছে না। তিনি জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে বরিশাল নৌবন্দর ছাড়াও লাহারহাট, শ্রীপুর, বাকেরগঞ্জের কবাই, বরগুনা পোর্ট, পটুয়াখালী, মিয়ারচরসহ বিভিন্ন স্থানে ৯টি ড্রেজার চালু রয়েছে।

বরিশাল বিআইডব্লিটিএ সূত্র জানায়, বর্তমানে কীর্তনখোলার যে ফোরশোর রয়েছে (নদীর লো ওয়াটার এবং হাই ওয়াটার লেভেলের মাঝ থেকে ৫০ ফুট নদীর পাড় পর্যন্ত) তার শতকরা ৩০ ভাগও বিআইডব্লিউটিএর নিয়ন্ত্রণে নেই। বিভিন্ন ব্যক্তি নামে-বেনামে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে এই ফোরশোরের জমির মালিক সেজে দখল করে আছে। এসব অবৈধ দখলকারীরা নদীতে দূষণ করছে।

বিআইডব্লিউটিএর বরিশালের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপপরিচালক আজমল হুদা মিঠু সরকার জানান, চলতি বছরের মার্চে বরিশাল জেলায় নদ-নদী ও খালে যৌথ সার্ভের মাধ্যমে সীমানা নির্ধারণ, অবৈধ দখলদারদের তালিকা তৈরি ও অবৈধ দখল উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য আট সদস্যের কমিটি গঠন হয়। গত মাসের শুরু থেকে নদী তীরের অবৈধ তালিকা প্রস্তুত কার্যক্রম শুরু হয়। এ তালিকা প্রস্তুত করতে আরো এক মাসের প্রয়োজন। তালিকা প্রস্তুতের আগেই জেলা প্রশাসক ও বিআইব্লিউটিএর সার্ভেয়ারের মাধ্যমে জায়গা সিএস ও আরএস অনুযায়ী নির্ধারণ করা হবে। সবকিছু চূড়ান্ত হলে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামবে বিআইডব্লিউটিএ।

এদিকে বরিশালকে বাঁচাতে কীর্তনখোলা রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টার কথা জানিয়েছেন বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান। সম্প্রতি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) আয়োজিত ‘কীর্তনখোলা নদী সংরক্ষণে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি আরো জানান, কীর্তনখোলা নদী বরিশাল তথা গোটা দক্ষিণাঞ্চলের প্রাণ। এই নদী রক্ষায় আমরা কথা নয় কাজ দিয়ে প্রমাণ রাখতে চাই। ঐ সভায় বরিশাল প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এসএম ইকবাল বলেন, কীর্তনখোলাকে কেন্দ্র করেই বরিশালের ব্যবসাবাণিজ্য, নগর সভ্যতা, নৌ-যোগাযোগ ও কৃষি কার্যক্রম গড়ে উঠেছে। অথচ দখল-দূষণে এ নদীর এখন বেহাল দশা। বরিশালের পরিবেশ ও নাগরিক আন্দোলনের কর্মীদের অভিযোগ, অপরিকল্পিতভাবে নদী খননের জন্য বর্তমানে নৌ-যোগাযোগ মারাত্মক সংকটে পড়েছে। প্রায়ই ঢাকা-বরিশাল নৌপথে চলাচলকারী লঞ্চগুলো চরে আটকে থাকছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। নদীর সংযোগ খালগুলোর উত্সমুখে পলি জমে সেসব খাল মরে যাচ্ছে। এতে পানি সংকটে কৃষিকাজ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশে মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়ছে।