বিশ্বজুড়ে খাবারে উচ্চমাত্রায় চিনি একটি বড়ো সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০০১ সালে বিশ্বে মোট ১২৩.৪ মিলিয়ন টন চিনি খাওয়া হয়েছিল। ২০১৮ সালে এসে সে অঙ্কটা দাঁড়িয়েছে ১৭২.৪ মিলিয়ন টনে। গবেষকদের মতে, শক্তি সঞ্চয়ী খাবার হিসেবে চিনি বেশ সস্তা একটি উত্স। তবে তা হতে হবে পরিমিত মাত্রায়। চিনি খাওয়া বন্ধে বিশ্বের অনেক দেশই চিনি দিয়ে তৈরি পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছে। অর্থাত্ চিনির ওপর কর আরোপ করে চিনির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের চিন্তা করা হচ্ছে।
চিকিত্সা বিষয়ক সাময়িকী ল্যান্সেটে ১৯৫টি দেশের ওপর একটি গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। গবেষণা ফলাফলে বলা হয়েছে, ইসরাইলিদের প্রিয় খাবার চিনিসমৃদ্ধ ‘সুফগানিয়োট’। এর ওপর চিনির আস্তরণ দেয়া থাকে। ইসরাইলের ডায়াবেটিক কাউন্সিলের প্রধান অধ্যাপক ইতামার রায বলেন, ইসরাইলে গড়ে একেকজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ প্রতিদিন চা চামচের আকারের ৩০ চামচের বেশি চিনি খান। যা কিনা ভয়াবহ একটি ব্যাপার। ২০১৮ সালে একেকজন ইসরাইলি গড়ে ৬০ কেজি করে চিনি খেয়েছেন। প্রতিদিনের হিসেবে যার পরিমাণ ১৬৫ গ্রাম। তবে চিনি খাওয়া বন্ধ করার কোনো পরামর্শ দেননি চিকিত্সকরা। বিশ্বে বেশি চিনি খাওয়া দেশের তালিকার শীর্ষ পাঁচের মধ্যে আরো আছে মালয়শিয়া, বার্বাডোস, ফিজি এবং ব্রাজিল। আর সবচেয়ে কম চিনি খাওয়া দেশের মধ্যে রয়েছে উত্তর কারিয়া, গড়ে ৩.৫ কেজি। কিন্তু তাদের তুলনায় প্রতিবেশী দক্ষিণ কোরিয়ার প্রত্যেকে বছরে গড়ে চিনি খেয়েছেন ৩০.৬ কেজি করে। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা খেয়েছেন ৩১.১ কেজি চিনি। মোট পরিমাণের হিসাবে বেশি চিনি ব্যবহার করেছে ভারত। ২০১৮ সালে এই পরিমাণ ছিল ২৫.৩৯ মিলিয়ন মেট্রিক টন যা পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়নে ব্যবহার করা চিনির চেয়েও বেশি।
চিনি বেশি খাওয়ার কারণ হিসেবে গবেষকরা বলছেন, চিনির দাম বরাবরই কম এবং আমাদের শরীরের শক্তির অন্যতম সহজলভ্য উত্স এটি। জাতিসংঘের খাদ্য এবং কৃষি সংস্থা (এফএও) বলছে, ভারতে মানুষের খাওয়া খাদ্যের মধ্যে চিনি একটি অপরিহার্য উপাদান এবং গরিব মানুষের শক্তি সঞ্চয়ের সবচেয়ে সস্তা উত্স। অনেক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেছেন যে, আমাদের অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার কারণে বিশ্বে স্থূলতার সমস্যা মহামারি আকারে বেড়ে যাচ্ছে।
এ কারণে বিশ্বের অনেক দেশ চিনি জাতীয় খাবারের ওপর অধিক কর আরোপের পরিকল্পনা করছে। ইতিমধ্যে এ মাসের শুরুর দিকে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে সিঙ্গাপুর উঁচু মাত্রার চিনিযুক্ত তরল পানীয়ের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করেছে। জানুয়ারি মাস থেকে তা কার্যকর হবে। মূলত স্বাস্থ্যগত জটিলতা কমাতেই চিনি দিয়ে তৈরি খাবারের ওপর কর আরোপের এই চিন্তা। ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড এবং ইউনিভার্সিটি অব ক্যামব্রিজ যৌথভাবে গবেষণা করে জানিয়েছে, এ জাতীয় খাদ্য ও পানীয়ের ২০ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধির ফলে কী ঘটতে যাচ্ছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কর আরোপ করেও চিনির ব্যবহার কতটা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে—সেটি সময়ই বলে দেবে। —বিবিসি