শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

কর্মক্ষেত্রে ব্যায়াম কতটা উপকারী

আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০১৯, ২২:৪১

সাধারণত মানব পেশির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি, অস্থির দৃঢ়তা রক্ষা, রক্তসংবহন তন্ত্রের ক্রিয়াকর্ম স্বাভাবিক রাখার মতো শারীরিক কসরতের খেলায় অধিক দক্ষতা অর্জন সর্বোপরি শরীরের ওজন ঠিক রাখতে ব্যায়াম খুবই উপকারী। সাধারণত সকাল এবং বিকালেই মানুষকে ব্যায়াম করতে দেখা যায়। কিন্তু এমন অনেক মানুষ আছে যারা কাজের ব্যস্ততার কারণে নিয়মিত ব্যায়াম করতে পারেন না। গবেষকদের মতে, এই ধরনের ব্যস্ত প্রকৃতির মানুষের ব্যায়ামের সমস্যা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে কর্মক্ষেত্রে ব্যায়ামের চর্চা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, নিয়মিত ও পরিমিত শারীরিক পরিশ্রমের অভাবে শতকরা ১৭ ভাগ ক্ষেত্রে হূদরোগ ও ডায়াবেটিস, শতকরা ১২ ভাগ ক্ষেত্রে বৃদ্ধ বয়সে হঠাত্ পড়ে সমস্যা এবং শতকরা ১০ ভাগ ক্ষেত্রে স্তন ও অন্ত্রের ক্যান্সার দেখা দিতে পারে। আর ব্যায়ামের অভাবে শতকরা ১০ ভাগ নারীর স্তন এবং কোলন ক্যান্সারের সমস্যা হয়।

কর্মক্ষেত্রে থাকাকালে ব্যায়াম করতে পারলে তা একদিকে যেমন স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী তেমনি তা মেধার উন্নতিতে ভূমিকা রাখে। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে ব্যায়ামের বিষয়টি অনেকের কাছেই একটু অন্যরকম মনে হতে পারে। কারণ এটির জন্য আলাদা সময় বের করে অফিসে ব্যায়াম করা শুরু করলে তা অনেক ক্ষেত্রেই নানা অজুহাতে কর্তৃপক্ষ কর্মক্ষেত্রে ব্যায়ামকে খুব একটা গুরুত্ব দেয় না।

২০০৮ সালে যুক্তরাজ্যে একটি গবেষণা পরিচালনা করে গবেষকরা দেখতে পান, কোম্পানির জিম ব্যবহার করেছেন কিংবা কোম্পানির জিম ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছেন এমন দুই শতাধিক কর্মচারীর কাজে উত্পাদনশীলতা বেশি ছিল। প্রতিদিনের কাজের মধ্যে যে দিনগুলোয় কর্মীরা অফিসের জিমে কিংবা অন্য কোথাও জিমে গেলে এই ধরনের উপকার হতে পারে। কর্মীদের মনে শান্তি থাকলে সেই প্রতিষ্ঠানেরও উন্নতি হয়। গবেষকদের মতে, মধ্যাহ্নভোজ বা দুপুরের খাবারের বিরতিতে ব্যায়ামের জন্য সময় বের করে  ব্যায়ামের জন্য সময় বের করলে তা সুবর্ণ সুযোগ হতে পারে। গবেষণায় জানা গেছে, প্রতিদিনের একঘেয়ে কাজ থেকে বিরতি নিলে এবং ছকে বাঁধা জীবন থেকে কিছু সময়ের জন্য বাইরে বেরিয়ে এলে কাজের প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধি পায়।

ব্রিটেনের হার্ট ফাউন্ডেশনের হিসাব অনুসারে যুক্তরাজ্যের দুই কোটিরও বেশি মানুষ শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে যার কারণে লোকজনে জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা খাতকে বছরে ১৫০ কোটি ডলার ব্যয় করতে হবে। কর্মক্ষেত্রে ব্যায়াম করার জন্য বিশেষজ্ঞরা সাধারণত অবসর আড্ডার সময়কে বেছে নিয়েছেন। দুপুরের খাওয়ার ফাঁকে এই ধরনের ব্যায়াম কার্যকরী হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, ছোটো ছোটো কিছু উপায়ে এক জন দিনের বেলা শরীরচর্চা সেরে ফেলতে পারেন। এজন্য অফিসের কোনো অভিনব ফিটনেস সেন্টারের দরকার নেই।

সান ডিয়েগোভিত্তিক সংস্থা আইডিইএ হেলথ অ্যান্ড ফিটনেস অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান সম্পাদক স্যান্ডি টড ওয়েবস্টার বলেন, পাঁচ মিনিটের বা এক ঘণ্টার শারীরিক কসরত, সময় যাই হোক না কেন, কাজের দিনগুলোতে যে কোনো ধরনের শারীরিক কসরতেই প্রকৃত স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়। তিনি বলেন, "যদি আপনি কোনো উপায়ে হাঁটতে বা নিজেকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সক্ষম হন তবে তাই করুন। আপনার কোনো জিম লাগবে না। শারীরিক কসরতের সুযোগ সর্বত্রই রয়েছে। এরজন্য কর্মস্থলে একজোড়া অ্যাথলেটিক জুতা এবং মোজা রাখা যেতে পারে এবং বিরতির সময় অথবা যখনই সুযোগ পাওয়া যাবে তখনই ব্যায়াম করে নেওয়া যাবে।

সিঁড়িযুক্ত বহুতল কোনো ভবনে কাজ করেন তবে সব সময় সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করুন বা আপনার অফিসে দীর্ঘতর পথ ধরে হেঁটে যান। এর সব কিছুই ব্যায়াম হিসেবে কাজ করবে। বিশেষজ্ঞদের মতে দিনের বেলা এক ঘণ্টার ব্যায়ামকে অফিসের মিটিংয়ের মতোই সমান গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।—বিবিসি