বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

গ্রামের অটোরিকশা শহরে

পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতাদের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি

আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০১৯, ২২:৪১

চট্টগ্রাম নগরীর আশপাশের উপজেলায় চলাচলে অনুমতিপ্রাপ্ত সিএনজি অটোরিকশা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নগরের প্রান্তিক এলাকার সড়কগুলোয়। এগুলো নগরে প্রবেশের অনুমতি না থাকলেও ট্রাফিক পুলিশ, থানা পুলিশ ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ম্যানেজ করে বিভিন্ন শাখা সড়কে চলছে। রুট পারমিট না থাকা সত্ত্বেও এসব যান চলাচলের কারণে প্রকৃত চালকরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ অনুযায়ী—রুট পারমিট ব্যতীত পরিবহন যান চালানোর অনুমতি দেওয়া হলে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। এ আইনে এই ধরনের অপরাধের জন্য অনধিক তিন মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রামের টাইগারপাস থেকে আমবাগান-ওয়্যারলেস-ঝাউতালা, বায়েজিদ, হিলভিউ আবাসিক, অক্সিজেন, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, কাপ্তাই রাস্তার মাথাসহ বিভিন্ন এলাকায় রুট পারমিট ছাড়া এ ধরনের অটোরিকশা চলাচল করছে। শুধু টাইগারপাস থেকে তিনটি রুটে অন্তত ২০০ ট্যাক্সি চলাচল করছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই ধরনের অটোরিকশার সংখ্যা সাড়ে ৫ হাজার পর্যন্ত হতে পারে। এদের কারণে প্রকৃত রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত গাড়ির চালকরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। চট্টগ্রাম আঞ্চলিক ট্রান্সপোর্ট কমিটির নিয়মানুযায়ী, মহানগরে ১৩ হাজার সিএনজি ট্যাক্সি চলাচলের নির্দেশনা রয়েছে। নগরে যেসব ট্যাক্সি চলাচল করে সেগুলোর নম্বর হচ্ছে চট্টো মেট্রো-থ। কিন্তু এর বাইরে নগরীর বিভিন্ন সড়কে চট্টগ্রাম-থ ও চট্টগ্রাম-দ নম্বরের ট্যাক্সি চলাচল করে। এর মধ্যে থ শ্রেণির ট্যাক্সি চলার কথা মফস্সল এলাকায়। আর দ শ্রেণির ট্যাক্সি ব্যক্তিগত, যেগুলো ভাড়া চলাচলের অনুমতি নেই। চট্টগ্রাম মহানগরী অটোরিকশার-বেবিট্যাক্সি মালিক সমিতির সভাপতি টিটু চৌধুরী ইত্তেফাককে বলেন, তারা বিষয়টা নিয়ে একাধিকবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ ও বিআরটিএকে অভিযোগ দিয়েছেন। বিআরটিএ মাঝে মধ্যে কিছু জব্দ করলেও পুলিশের ভূমিকা সন্তোষজনক নয়।               অদৃশ্য কারণে ট্রাফিক বিভাগও এসব ট্যাক্সির বিরুদ্ধে বলার মতো ব্যবস্থা নেয় না।

ট্যাক্সি মালিক সমিতির নেতা ও চালকদের অভিযোগ, ট্রাফিক সার্জেন্ট ও টিআইদের দেওয়া বিশেষ টোকেনের মাধ্যমে নগরীতে মফসসল এলাকার অসংখ্য সিএনজি, কোর্ট থেকে নিলামকৃত সিএনজি ট্যাক্সি চলাচল করছে। ভুয়া নম্বর দিয়ে অনেক ব্যক্তিগত ট্যাক্সিও ভাড়ায় চলাচল করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চালক ইত্তেফাককে বলেছেন, এসব ট্যাক্সি চলাচলের জন্য যেসব রুট ব্যবহার করা হয় সেগুলো বিভিন্ন সিন্ডিকেটের ইশারায় তৈরি হয়। এসব রুটে ঢুকতে প্রতিটি ট্যাক্সিতে ২০/২৫ হাজার টাকা খরচ করতে হয়। এরপর নিয়মিত লাইন খরচ, টিআই খরচ, থানা খরচের নামে চালকদের কাছ থেকে টাকা তোলা হয়। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে এসব ট্যাক্সি আটক করা হয়। যা ১০/১৫ হাজার টাকায় ছাড়িয়ে আনতে হয়। এরপর প্রতিটি রুটে লাইনম্যানকে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দিতে হয়। এসব রুটে বিভিন্ন মাধ্যমে এসব ট্যাক্সির কাছ থেকে ৫/৬ কোটি টাকা আদায় করা হয় বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মোস্তাক আহমেদ বলেন, এই ধরনের অভিযোগ পেয়ে এরই মধ্যে কিছু রুটে অভিযান চালানো হয়েছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে বাকি রুটগুলোতেও অভিযান পরিচালনা করা হবে।