শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

যে কারণে মানুষের আসক্তি তৈরি হয়

আপডেট : ২২ নভেম্বর ২০১৯, ২২:২৯

মানব চরিত্রের এক মজার বৈশিষ্ট্য আসক্তি। অনেকেরই নানা জিনিসের প্রতি আসক্তি থাকে। কারো মাদকের প্রতি আসক্তি থাকে, কারো বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আসক্তি থাকে; আবার কারো ভার্চুয়াল জগতের প্রতি আসক্তি থাকে। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগতে পারে, মানুষের মধ্যে আসক্তি কেন তৈরি হয়? গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রবল ভীতি বা তীব্র যন্ত্রণার কোনো স্মৃতি থেকে মানুষের মধ্যে আসক্তি তৈরি হতে পারে। কানাডার একজন চিকিত্সক ডা. গাবোর মেইটের বিশ্বাস, সব ধরনের আসক্তির পেছনে মানুষের ভেতরে প্রোথিত ভীতি কিংবা যন্ত্রণাই মূল কারণ।

আসক্তির কারণ অনুসন্ধান করতে চাইলে প্রথমেই আমাদের বুঝতে হবে, আসক্তির ফলে আমরা কী পাই। কোনো কিছুতে আসক্ত কাউকে তার আসক্তি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে সাধারণত তাদের জবাব হয়, এটা আমাকে যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেয়, মানসিক চাপ থেকে দূরে রাখে, যে কোনো পরিস্থিতিতে একধরনের নিয়ন্ত্রণ করতে পারার অনুভূতি সৃষ্টি হয়। কোনো কিছুতে আসক্ত ব্যক্তিদের কাছে মনে হয় সত্যিকারের বেঁচে আছি, তুমুল উত্তেজনা, তীব্র ভালো লাগা ইত্যাদি। অন্য কথায় বললে, আসক্তি মানুষের কিছু বিশেষ প্রয়োজন পূরণ করে, যা তার জীবনে পূরণ হচ্ছিল না। আসক্ত মানুষ শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক নানা ধরনের সংকটে ভোগে।

ডা. মেইট তার মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক লেখালেখির জন্য পরিচিত। এছাড়া উত্তর আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি মাদকাসক্তির প্রকোপ কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে রাসায়নিকজাতীয় পদার্থ অপব্যবহারের রোগীদের নিয়ে কাজ করার জন্যও বিখ্যাত। ২০১৮ সালে তার কাজের জন্য তিনি কানাডার সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান অর্ডার অব কানাডা লাভ করেন।

মানুষের জীবনে এমন সময় আসে, যখন প্রয়োজন হয় নির্ভরতার। পরিবারে বা সহপাঠীদের মধ্যে মনোযোগ বা গুরুত্ব না পাওয়ার কারণে একাকিত্ব বা মানসিক চাপে আবদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। মাদকাসক্তদের সংখ্যা বিচার করলে দেখা যায়, যাদের শৈশব খুব খারাপ কেটেছে, তাদের বেশির ভাগের মাদকাসক্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। মনোযোগ না পাওয়া একাকিত্ব আর মানসিক চাপের কারণে মানুষ আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে। এর মানে হলো, আসক্তির পেছনে যন্ত্রণা ও জটিল শৈশব কাজ করে। এর অর্থ হচ্ছে, যাদের শৈশব স্বাভাবিক ছিল না, তারা সবাই আসক্ত হবে তা নয়, বরং যারা আসক্ত তাদের সবার শৈশব কষ্টে কেটেছে।

আসক্তি নিয়ে মানুষের মধ্যে একটি প্রচলিত ধারণা—ইচ্ছা করে বা শখের বশে ঐ পথে গেছে। কিন্তু অধিকাংশ সময় আসল ঘটনা অন্যরকম হয়। আমাদের চারপাশের সমাজের কাঠামোটাই এমন যে কোনো ব্যক্তি আসক্ত হলে তাকে ধরে শাস্তি দাও। কোনো কিছুতে আসক্ত হওয়ার পেছনে মানসিক যন্ত্রণা থেকে পালানো বা বাঁচার জন্য একটি পথ খোঁজার ইতিহাস থাকে। কারণ কেউই যন্ত্রণার মধ্যে থাকতে ভালোবাসে না।

আবার বাবা-মা সন্তানদের যথেষ্ট পরিমাণ সময় না দিলে কিংবা কৈশোরে খেলাধুলার পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকলে শিশু-কিশোরেরা ঘরের ভেতরে কম্পিউটারে ভিডিও গেমস, ট্যাব কিংবা মোবাইল ফোনের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রেও পরিবারে গুরুত্বহীনতার কারণে কোনো কিছুর প্রতি চরম মাত্রার আসক্তি তৈরি হতে পারে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে পরিবারের অন্যদের উচিত হবে ঝুঁকিতে থাকা সদস্যদের সময় দেওয়া, তাদের সঙ্গে সমস্যা-সম্ভাবনার কথা আলোচনা করা। —বিবিসি