শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্য কোর্স বাতিল চায় ইউজিসি

আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০১৯, ২২:২১

রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের পর এবার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্য কোর্স বন্ধ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনও অনুরোধ জানিয়েছে। গতকাল দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের কাছে এমন অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি রাষ্ট্রপতির কার্যালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে।

গত সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে আচার্য হিসেবে অংশ নিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘ইভিনিং শিফট সিস্টেমটা আমার কাছে কেন জানি ভালো লাগে না। ইভিনিং শিফটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার মতো কোনো অবস্থা থাকে না। দয়া করে এটা বাতিল করা যায় কি না, সেটা আপনারা বিবেচনায় নেবেন।’

গতকাল ইউজিসি চিঠিতে জানায়, সান্ধ্য কোর্স পরিচালনা করা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশিষ্ট্য ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে বলে সান্ধ্য কোর্স বাতিল করা বাঞ্ছনীয়। বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর    বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্য কোর্স চলছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্য কোর্স চালু ছিল। ২০১৮ সালে এটি বন্ধ হয়। আবার চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ইউজিসি সান্ধ্য কোর্স বন্ধ ছাড়াও উপাচার্যদের অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন এবং নতুন বিভাগ ও পদ সৃষ্টিতে ইউজিসির পূর্বানুমোদন গ্রহণ, নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুসরণসহ ১৩ দফা নির্দেশনা দিয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে উপাচার্যরা নিজেদের মেধা, জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দিয়ে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য প্রতিপালন করে যাচ্ছেন। তবু নানা কারণে কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিয়ম-নীতি অনুসরণে শিথিলতা দেখা যাচ্ছে। এসব কারণে উচ্চশিক্ষা প্রশাসনে সৃষ্টি হচ্ছে বিশৃঙ্খলা, যা কাম্য নয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন অনুষদ, বিভাগ, প্রোগ্রাম ও ইনস্টিটিউট খোলা এবং নতুন পদ সৃষ্টি বা বিলুপ্তির ক্ষেত্রে কমিশনের পূর্বানুমোদন নেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু ইউজিসি গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছে যে দেশের কোনো কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কমিশনের অনুমোদন ছাড়াই নতুন বিভাগ, প্রোগ্রাম ও ইনস্টিটিউট খুলে শিক্ষার্থী ভর্তি করে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে, যা বাঞ্ছনীয় নয়।

শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ ও পদোন্নতিতে বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারের আইন মেনে চলতে চিঠিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিধিবহির্ভূতভাবে ‘সেশন বেনিফিট’ সুবিধা প্রদান এবং শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীগণকে নিম্নতর গ্রেড থেকে উচ্চতর গ্রেডে উন্নীত করা বাঞ্ছনীয় নয় বলে উল্লেখ করা হয়।

নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করা হচ্ছে, এমনকি পদোন্নতি ও পদোন্নয়নের ক্ষেত্রেও নিয়মের ব্যত্যয় ঘটানো হচ্ছে। সরকারের আর্থিক বিধি লঙ্ঘন করে দেওয়া হচ্ছে ভূতাপেক্ষ জ্যেষ্ঠতা। এসব ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন, বিধিবিধান এবং সরকারের নিয়ম-নীতি প্রতিপালন করা অবশ্য কর্তব্য।

সরকারি ‘আর্থিক বিধিমালা’ অনুযায়ী আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনা করার আহ্বান জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়, একাডেমিক, প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে এবং এসব ক্ষেত্রে  বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ প্রয়োজনে কমিশনের পরামর্শ নিতে পারে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতি ২০১৮ সালের শেষ দিকে সান্ধ্য কোর্স বন্ধে আমাকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা সে অনুযায়ী বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদকে প্রধান করে একটি কমিটি করে দিয়েছি। অতি শিগিগর কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা। প্রতিবেদন অনুযায়ী আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।’