শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ঝালকাঠি ও ফরিদগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ, আহত ৭০

আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০১৯, ২২:৫৯

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় ও আইনশৃঙ্খলা সভা পণ্ড হয়ে গেছে। উভয়পক্ষের হামলা ও পালটা হামলায় পুলিশসহ কমপক্ষে অর্ধশত আহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সামনে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এই সংঘর্ষ চলে। এ সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহম্মদ শফিকুর রহমান ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জাহিদুল ইসলাম রোমানসহ উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা পরিষদের অফিস কক্ষে উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন শেষে শহরের অতুল মাঝি খেয়াঘাট এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। পৌর কাউন্সিলর ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি হুমায়ুন কবির খান এবং যুবলীগ নেতা কামাল শরীফের সমর্থকদের মধ্যে এই সংঘর্ষ ঘটে। বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দুইপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পালটা ধাওয়া ও সংঘর্ষ চলে। এসময় একজন গুলিবিদ্ধসহ দুই গ্রুপের ২১ জন আহত হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়। গুলিবিদ্ধ পৌর কাউন্সিলর শাহআলম খান ফারসুকে (৩৫) বরিশাল শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

জানা গেছে, গতকাল উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভা ও আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা হওয়ার কথা ছিল। স্থানীয় সংসদ সদস্য সভায় উপস্থিত হওয়ার আগে তার অনুসারী ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের পক্ষের সমর্থকরা জড়ো হতে শুরু করে। সংসদ সদস্য উপজেলা পরিষদে উপস্থিত হলে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ হামলা-পালটা হামলা শুরু হয়। আধা ঘণ্টা সংঘর্ষের পর পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। এসময় উপজেলা পরিষদের আইনশৃঙ্খলা সভা শুরু হয়। কিন্তু এরই মধ্যে উভয় গ্রুপ পুনরায় সংঘর্ষ শুরু করে দেয়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ইউএনও সভা স্থগিত করে দেন।

ফরিদগঞ্জ থানার ওসি আব্দুর রকিব জানান, উভয়পক্ষকে শান্ত করতে পুুলিশ প্রথম থেকেই চেষ্টা করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছয় রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করা হয়।           ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিউলী হরি জানান, সংঘর্ষের কারণে মাসিক সমন্বয় ও আইনশৃঙ্খলা সভা স্থগিত করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জাহিদুল ইসলাম রোমান বলেন, মাসিক সমন্বয় সভা ও আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য না এমন লোক এবং মাদককারবারি পরিষদে উপস্থিত হওয়ায় এই পরিস্থিতির উদ্ভব হয়।

চাঁদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মুহম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, আমি আইনশৃঙ্খলা ও সমন্বয় সভার আমন্ত্রণ পেয়ে উপস্থিত হই। অথচ ওরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। ইউএনওর কার্যালয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের লোকজন ঢুকে তাণ্ডব চালিয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যান আমার সঙ্গে রুঢ় আচরণ করেছে।

চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, সংবাদ পেয়ে চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ ও ডিবি সদস্য গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় এসআই নাজমুল হোসেন আহত হন।

ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে চিকিত্সাধীন মিরাজ হোসেন, আবির খান, শাহিন মাঝি জানান, জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল শেষে মিছিল নিয়ে আমরা বাড়ি যাচ্ছিলাম। এসময় পালবাড়ির অতুল মাঝি খেয়াঘাট এলাকায় এলে কামাল শরীফের নেতৃত্বে তার দলবল আকস্মিক হামলা চালায়। এসময় কামাল শরীফ তার পিস্তল দিয়ে গুলি ছুড়লে কাউন্সিলর ফারসু পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। তখন আমাদের ১৫/১৬ জন আহত হয়। এদিকে কামাল শরীফ এ ঘটনার বিষয়ে জানান, আমি জেলা সম্মেলনে ছিলাম। সম্মেলন শেষে বাড়ি ফেরার পথে আমার ভাইসহ ১২/১৩ জনের ওপর হামলা চালায় হুমায়ুন কমিশনারের লোকজন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি প্রতিপক্ষরা পিস্তল, রামদা নিয়ে হামলা করছে আমার লোকজনের ওপর।  

ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিত্সক জাহিদুল ইসলাম জানান, বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আহত ২১ জনকে চিকিত্সা দিয়েছি। এরমধ্যে একজন গুলিবিদ্ধ ছিল। তার পা থেকে বুলেট বের করা হয়েছে। আরো কজন চিকিত্সা নিয়ে চলে যায়। ঝালকাঠি থানার ওসি মো. খলিলুর রহমান জানান, ব্যক্তিগত বিরোধের জেরে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। কেউ গুলিবিদ্ধ হবার তথ্য আমার কাছে নেই।