শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী আর নেই

আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯, ২২:৪২

সাবেক পররাষ্ট্রসচিব ও দক্ষ কূটনীতিক মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী আর নেই। গতকাল সোমবার  দুপুর ১২টায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোয়াজ্জেম আলীর মরদেহ দেখতে গতকাল সিএমএইচে যান। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস             সচিব ইহসানুল করিম গণমাধ্যমকে জানান, প্রধানমন্ত্রী দুপুর ২টার দিকে সিএমএইচে যান। সেখানে তিনি মোয়াজ্জেম আলীর স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের সান্ত্বনা দেন। প্রধানমন্ত্রী মরহুমের বিদেহি আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। সিএমএইচে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোহাম্মদ নজিবুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব সাজ্জাদুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।

বর্ণাঢ্য কূটনৈতিক জীবনের অধিকারী সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী ১৯৬৮ সালে পাকিস্তান ফরেন সার্ভিস ব্যাচের কর্মকর্তা ছিলেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ওয়াশিংটনে কর্মরত অবস্থায় তিনি পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের পক্ষে যোগদান করেন। দীর্ঘ কর্মজীবনে ভুটান, ইরান ও ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন মোয়াজ্জেম আলী। ওয়াশিংটন, ওয়ারশ, জেদ্দা, নয়াদিল্লি মিশনেও তিনি কাজ করেছেন। সর্বশেষ তিনি ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার ছিলেন।

সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীর অন্যতম সাফল্য হচ্ছে, ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ইউনেস্কোর কাছ থেকে স্বীকৃতি আদায়। ১৯৯৯ সালে ফ্রান্সে রাষ্ট্রদূত থাকাকালে এই স্বীকৃতি আদায়ে প্রধান ভূমিকা পালন করেন তিনি।

২০০১ সালে পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে তিন বছরের চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর ঐ বছরের ১৫ জুলাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার প্রথম দিনে ১২ জন সচিবকে পরিবর্তন করা হয়। তাদের একজন ছিলেন মোয়াজ্জেম আলী। সে সময় তাকে পররাষ্ট্র সার্ভিস একাডেমির দায়িত্ব দেওয়া হয়। ঐ বছরের ১ অক্টোবর বিএনপি-জামায়াত সরকার ক্ষমতায় এলে সৈয়দ মোয়াজ্জেমের চুক্তি বাতিল করা হয়। এর দীর্ঘ ১৩ বছর পর ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকার তাকে ভারতে হাইকমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেয়। দীর্ঘ পাঁচ বছর নয়াদিল্লিতে দায়িত্ব পালন শেষে গত ১৯ ডিসেম্বর তিনি ঢাকায় ফেরেন। আগামী সপ্তাহে তার যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কথা ছিল। সেখানে তার দুই ছেলে সপরিবারে বসবাস করছেন।

তার স্ত্রী তুহফা জামান আলীসহ গুলশানের বাসায় থাকাকালে ২৪ ডিসেম্বর অসুস্থ বোধ করলে তাকে সিএমএইচে ভর্তি করা হয়। নিউমোনিয়া ও হূদেরাগে আক্রান্ত হয়ে গতকাল দুপুরে তিনি মারা যান।

সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী ১৯৪৪ সালে সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলীর ভাইয়ের ছেলে। বড়ো ভাই এস এম আলী ছিলেন ডেইলি স্টারের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণিবিদ্যায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী মোয়াজ্জেম আলী ১৯৬৮ সালে পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসে যোগ দেন।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ গতকাল এক শোক বার্তায় সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, তার মৃত্যুতে জাতি একজন দক্ষ কূটনীতিককে হারাল। তার মৃত্যু  দেশের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। জাতি তাকে দীর্ঘদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। রাষ্ট্রপতি শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান এবং মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।

তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, একজন দক্ষ কূটনীতিক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করে এক শোক বার্তায় তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদান জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। তিনি পারিবারিকভাবে ড. মোমেনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এক বিবৃতিতে মোয়াজ্জেম আলীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, তার মৃত্যুতে জাতি একজন দক্ষ কূটনীতিককে হারাল। মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন তার মৃত্যুতে শোকবই খুলছে। আজ থেকে তিন দিন বাংলাদেশ হাইকমিশন চ্যান্সেরিতে এই শোকবই থাকবে। সাবেক রাষ্ট্রদূতদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ফরমার অ্যাম্বাসেডরসের সভাপতি রাষ্ট্রদূত সি এম শফি সামী ও সাধারণ সম্পাদক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমেদ এক বার্তায় গভীর শোক ও সমাবেদনা জানিয়েছেন।

বুধবার জানাজা ও দাফন

মরহুম মোয়াজ্জেম আলীর ছেলেরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসার পর আগামীকাল বুধবার সকাল ১০টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মা প্রাঙ্গণে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। বাদ জোহর গুলশান আজাদ মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা শেষে বিকেলে বনানী গোরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। শুক্রবার বাদ আসর গুলশানের আজাদ মসজিদে কুলখানি ও দোয়া হবে।