শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বাংলার রাজনীতিতে বসন্ত ঋতুর মহাযোগ

আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২২:৪৬

বাংলার রাজনীতির ইতিহাসে এই বসন্ত ঋতুর এক মহাযোগ রয়েছে। বসন্ত এলেই মানুষের মনে বিদ্রোহের আলো জ্বলে উঠেছে বারবার। ১৯৪৮ মার্চের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫২ ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১-এর মার্চ—সেই সাক্ষীই দেয়।

ক্ষমতা ও রাষ্ট্রপরিচালনার অভিপ্রায়ে যে রাজনীতি—মানুষের সম্মিলিত প্রত্যাশা ও দাবির কাছে তা এক ফুঁয়ে উড়ে যায়। এই দাবি যে কখন দানা বেঁধে ওঠে তা ঝানু রাজনীতিবিদদের হিসাব-নিকাশেও অনেক সময় ধরা পড়ে না। যেমনটি ধরা পড়েনি একুশে ফেব্রুয়ারির আন্দোলনের সময়। সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে ১৪৪ ধারা না ভাঙার সিদ্ধান্ত যখন সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গ্রহণ করল তখনই প্রমাণিত হলো যে, তারা রাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থা নিয়েই বেশি চিন্তিত ছিলেন। সে কারণে মানুষের ইচ্ছা ও তাদের দাবির প্রতি নেতৃবৃন্দের চিন্তা কম ছিল। সে কারণেই সর্বদলীয় এই সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মেনে নেয়নি ছাত্ররা। তারা আগে থেকেই মনে মনে প্রস্তুত ছিল এই ১৪৪ ধারা অমান্য করে তাদের দাবির তীব্রতা প্রকাশের জন্য।

এই ১৪৪ ধারা ভাঙার সিদ্ধান্ত তখন গ্রহণ করেছিল তিনটি পক্ষ। সাধারণ ছাত্ররা, যুবলীগের নেতা ও কর্মীরা এবং ছাত্রনেতাদের কয়েকজন, পৃথকভাবে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে এসে। পরদিন অর্থাত্ ২১শে ফেব্রুয়ারি ছাত্রসভায় এর যে প্রতিফলন ঘটেছিল তা ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসেই শুধু নয়, বাঙালি জাতির পরবর্তীকাল ও বর্তমানেও বাংলাদেশের যে কোনো আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য প্রেরণাদায়ী ও গুরুত্বপূর্ণ। মাতৃভাষার অধিকার আদায়ের যে প্রস্তুতি ছাত্ররা ৪ঠা ফেব্রুয়ারির পর থেকে চালাচ্ছিলেন, যে কর্মসূচি তারা গ্রহণ করেছিলেন তা ছিল নিয়মতান্ত্রিক। বরং আওয়ামী মুসলিম লীগ ও গুপ্ত কমিউনিস্ট পার্টি চেষ্টা করেছিল এই আন্দোলনের রাশ নিয়ন্ত্রণ করে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক আন্দোলনের দিকে পরিচালিত করতে। কিন্তু তাদের চিন্তায় ভুল ছিল। তারা অনুধাবন করতে পারেননি, মানুষ বিস্ফোরণের জন্য কী রকম উন্মুখ হয়ে আছে।

                তত্কালীন সরকার ১৪৪ ধারা জারি করে ছাত্রদের অভিমানে ভয়ানক আঘাত করেছিল। সেই অপমানের জ্বালা বুকে নিয়ে বসন্তের বাতাস ও সূর্য যে পলাশ রং ছড়িয়ে প্রভাতে দেখা দেয় সেই সূর্যসম তেজ নিয়ে সবাই পথে নেমেছিল ভাষার দাবিতে।