শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

করোনা ভাইরাস নিয়ে যত প্রশ্ন

আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২০, ২২:৫৩

সারা বিশ্বে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা এখন ৪ লাখ ছুঁই ছুঁই। রাত পোহালেই এই সংখ্যা চার লাখ ছাড়িয়ে যাবে। জ্যামিতিক হারে বেড়ে চলছে আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা। লাশের গন্ধে ভারী হয়ে উঠছে পৃথিবীর বাতাস। করোনা নিয়ে আতঙ্কিত বিশ্বের কয়েক শ কোটি মানুষ। তাই করোনা নিয়ে মানুষের মনে জন্ম নিচ্ছে অনেক প্রশ্ন। এমনই কিছু প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে বিবিসি।

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ সেরে উঠলে কী তার এই রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হবে? এই প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছে—এত তাড়াতাড়ি এটা বলা কঠিন। মাত্র গত বছরের শেষ দিকে এই সংক্রমণ শুরু হয়েছে। তবে অন্যান্য ভাইরাস এবং করোনা ভাইরাসের আগের সংক্রমণ থেকে নেওয়া অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যেতে পারে—এ ধরনের ভাইরাসে একবার আক্রান্ত হলে সেটা প্রতিরোধ করার জন্য মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি            হয়। সেই অ্যান্টিবডি ভবিষ্যতে একই ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধের ক্ষমতা গড়ে তোলে। সার্স এবং অন্যান্য করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে দেখা গেছে একবার যারা ঐ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে তারা পরবর্তী সময়ে নতুন করে ঐ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি। তবে চীন ও জাপান থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, সেখানে আক্রান্ত কিছু রোগী সুস্থ হয়ে ওঠার পর যারা হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন পরীক্ষায় নতুন করে আবারও করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়েছেন। কিন্তু এখানে উল্লেখযোগ্য হলো, পজেটিভ হলেও তারা কিন্তু অন্যকে সংক্রমিত করবে না।

মানুষের আরেকটি প্রশ্ন—করোনা ভাইরাসের ইনকিউবেশন সময় কতদিন? বিজ্ঞানীরা বলছেন এই ভাইরাস শরীরে ঢুকলে উপসর্গ দেখা দিতে সময় লাগে গড়ে পাঁচ দিন। কিন্তু কারো কারো ক্ষেত্রে উপসর্গ দেখা দিতে সময় লাগতে পারে আরো বেশি দিন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে—ইনকিউবেশন কাল অর্থাত্ যে সময়কাল কোনো ভাইরাস মানুষের শরীরে থাকে কিন্তু তার কোনো লক্ষণ দেখা যায় না, সেই ইনকিউবেশনের সময় কোভিড-১৯-এর জন্য হলো ১৪ দিন পর্যন্ত। কিন্তু কোনো কোনো গবেষক বলছেন এই সময়টা ২৪ দিন পর্যন্তও হতে পারে। অর্থাত্ জীবাণু আপনার শরীরে সুপ্ত অবস্থায় এই সময়কাল থাকতে পারে। এই ইনকিউবেশনের সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা সঠিক জানা থাকলে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীরা সেটা বিবেচনায় নিয়ে ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে আরো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেন।

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে কতদিন এই রোগ থাকে? প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে একজনের ক্ষেত্রে এই সংক্রমণ সাধারণ সর্দি-জ্বরের মতোই। এতে জ্বর আসে, শুকনো কাশি হয়। লক্ষণ প্রকাশ পাবার পর সপ্তাহখানেক আপনি অসুস্থ বোধ করবেন। কিন্তু ভাইরাস যদি আপনার ফুসফুসে বেশ চেপে বসে তাহলে আপনার শ্বাসকষ্ট এবং নিউমোনিয়া হতে পারে।

আরেকটি প্রশ্ন—যাদের হাঁপানি আছে তাদের জন্য করোনা ভাইরাস কতটা ঝুঁকির? বিশেষজ্ঞরা বলছেন যাদের খুব বেশি হাঁপানি হয়, তাদের জন্য এই ভাইরাস ‘অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ’। কারণ যাদের হাঁপানি আছে তাদের করোনা ভাইরাসের মতো জীবাণুর সংক্রমণ হলে তাদের হাঁপানির লক্ষণগুলো শুরু হয়ে যাবে।

নিজের এবং অন্যদের সুরক্ষার জন্য সবার কি মাস্ক পরা উচিত? চিকিত্সাসেবা যারা দিচ্ছেন তারা অবশ্যই মাস্ক পরছেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণ মানুষ মাস্ক পরে খুব একটা লাভ পাবেন না। ইংল্যান্ডে জনস্বাস্থ্য বিষয়ে পরামর্শদানকারী সংস্থা পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড বলেছে তারা ‘করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য মাস্ক পরার পরামর্শ দিচ্ছে না’। তাদের বক্তব্য, চিকিত্সা পরিমণ্ডলের বাইরে সাধারণ মানুষ মাস্ক পরে যে খুব একটা লাভবান হবেন এমন কোনো যুক্তি বা তথ্যপ্রমাণ তাদের কাছে নেই।

আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির হাতে তৈরি খাবার থেকে আপনি কি সংক্রমিত হতে পারেন? আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি যদি স্বাস্থ্যসম্মতভাবে রান্না বা খাবার তৈরি না করেন তাহলে সেই খাবার থেকে আপনার আক্রান্ত হবার আশঙ্কা থাকতে পারে। মানুষ যখন কাশে তখন সেই কাশির সঙ্গে যে সূক্ষ্ম থুতুকণাগুলো বেরিয়ে আসে যেটাকে ‘ড্রপলেট’ বলা হয়, সেগুলো যদি আপনার হাতে পড়ে আর সেই হাত দিয়ে কেউ খাদ্যবস্তু গ্রহণ করেন, তাহলে সেই খাবার আপনাকে সংক্রমিত করতে পারে।

টাকা বা মুদ্রা, দরোজার হাতল এবং অন্যান্য শক্ত যেসব জিনিস আমরা হাত দিয়ে ধরি সেখান থেকে সংক্রমণের আশঙ্কা কতখানি? কেউ যদি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন বা তার কাশি হয়, সেই কাশির থুতুকণা যদি তার হাতে লেগে থাকে আর সেই হাত দিয়ে সে যদি কোনো কিছু স্পর্শ করে তাহলে সেই জিনিসটা সংক্রমিত হতে পারে।

করোনা ভাইরাসের জীবনকাল কত সময়? গবেষকরা এখনো স্পষ্টভাবে জানেন না যে করোনা ভাইরাস কোন জিনিসের ওপর কতক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ বলছেন—এই ভাইরাস বাইরে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকে। কয়েক দিন বেঁচে থাকার ধারণা সঠিক নয়। কিন্তু এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। সবচেয়ে ভালো পরামর্শ—এ ধরনের কোনো কিছু স্পর্শ করার পরই ভালো করে হাত ধুয়ে ফেলা। নিয়মিত ঘন ঘন হাত ধোয়া এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকানোর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পরামর্শ।—বিবিসি