শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

চুরির অপবাদে থানায় আটকে পরিচ্ছন্নতা কর্মীকে নির্যাতন

আপডেট : ০৫ এপ্রিল ২০২০, ২২:৪০

চুরির অপবাদ দিয়ে মো. ফরিদ মিয়া (৩০) নামের এক পরিচ্ছন্নতা কর্মীকে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার মহেড়া পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের (পিটিসি) পুলিশ সুপার মো. আব্দুর রহিম শাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে। পুলিশ সুপারের নির্দেশে নিরীহ ও অসহায় ঐ পরিচ্ছন্নতা কর্মীকে তিন দিন থানায় আটকে রেখে হাত-পা ও চোখ বেঁধে শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছেন মির্জাপুর থানার এসআই মো. আবুল বাশার মোল্লা। ঘটনার ন্যায়বিচার চেয়ে নির্যাতিত ফরিদ মিয়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এবং স্বরাষ্ট্র সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ঘটনার পর পিটিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক ও চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশ সুপার মো. আব্দুর রহিম শাহ চৌধুরী এ বিষয়ে বলেছেন, একটি চক্র পরিচ্ছন্নতা কর্মী ফরিদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও সাজানো অভিযোগ দিয়েছে।

নির্যাতিত পরিচ্ছন্নতা কর্মী মো. ফরিদ মিয়ার পিতার নাম মো. ইসমাইল হোসেন। বাড়ি টাঙ্গাইল সদর থানার খাগজানা গ্রামে। গতকাল রবিবার তিনি ইত্তেফাককে বলেন, তিন বছর ধরে পিটিসিতে পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে সততার সঙ্গে কাজ করছি। গত ১৩ মার্চ পিটিসির পুলিশ সুপার মো. আব্দুর রহিম শাহ চৌধুরীর বাসায় কাজ করে বাসায় চলে আসি। বিকাল ৪টার দিকে তিনি আমায় ফোন করে বলেন, এখনই বাসায় আস। আমি দ্রুত স্যারের বাসায় চলে যাই। বাসার আসামাত্র তিনি আমাকে বলেন, তুমি বাসা থেকে আমার স্ত্রীর ১ লাখ টাকা চুরি করেছ। আমি তাকে অনেক আকুতি-মিনতি করে বলেছি স্যার আমি টাকা চুরি করিনি। তিনি আমার কোনো কথা না শুনে একটি কক্ষের দরজা আটকে আমাকে অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন করেন। তারপর মির্জাপুর থানায় খবর দেন। এসআই মো. আবুল বাশার মোল্লা আমাকে থানায় নিয়ে হাত-পা ও চোখ বেঁধে তিন দিন থানায় আটকে রেখে দ্বিতীয় দফায় একাধিকবার নির্যাতন করেন। এক পর্যায়ে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।

তিন দিন পর আমার বাড়িতে খবর দিয়ে স্বজনদের থানায় ঢেকে এনে এসআই আবুল বাশার ১ লাখ টাকা দিতে বলেন এসপি মো. আব্দুর রহিম শাহ চৌধুরীকে দেওয়ার জন্য। টাকা না দিলে তাকে জানে মেরে ফেলার হুমকি ও বিভিন্ন মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখান। নিরুপায় হয়ে তার পরিবার বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা ধারদেনা করে বাশারের হাতে তুলে দেন। পরে এই টাকা নিয়ে আবুল বাশার ও ফরিদসহ তার পরিবার পিটিসি এসপির বাসায় যান। এসপি ৭০ হাজার টাকা নিয়ে পরে তাকে ছেড়ে দেন এবং চাকরি থেকে চলে যেতে বলেন।

এদিকে টাকা চুরির মিথ্যা অপবাদে মানসিক যন্ত্রণা এবং চাকরি চলে যাওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন অসহায় পরিচ্ছন্নতা কর্মী ফরিদ। বর্তমানে তিনি করটিয়ার একটি ক্লিনিকে চিকিত্সাধীন। ঘটনার ন্যায়বিচার চেয়ে তিনি বিস্তারিত উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি ও স্বরাষ্ট্র সচিব বরাবর গত ২২ মার্চ লিখিত অভিযোগ  দেন।

এ ব্যাপারে মির্জাপুর থানার অভিযুক্ত এসআই মো. আবুল বাশার মোল্লা বলেন, এসপি স্যারের নির্দেশে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। থানায় তিন দিন রাখার পর ৭০ হাজার টাকা এসপি স্যারকে দিয়ে সে মুক্তি পেয়েছে। থানায় তাকে নির্যাতন করা হয়নি বলে তিনি দাবি করেন।

এ ব্যাপারে পিটিসির পুলিশ সুপার মো. আব্দুর রহিম শাহ চৌধুরী বলেন, আমার বাসা থেকে স্ত্রীর ১ লাখ টাকা চুরির অভিযোগে পরিচ্ছন্নতা কর্মী ফরিদকে আটক করা হয়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের পর সে ৭০ হাজার টাকা দিয়ে মুক্তি পেয়েছে। তাকে বাসায় আটকিয়ে নির্যাতন করা হয়নি বলে তিনি দাবি করেন।