শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

রাজশাহীর কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানার শতাধিক গাছ কাটা হয়েছে টেন্ডার ছাড়াই!

আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২৩:৩০

রাজশাহীর শহিদ এইচ এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান চিড়িয়াখানায় নির্বিচারে গাছ কাটা চলছে। বছর খানেকের মধ্যে দফায় দফায় গাছ কাটার ফলে ঐতিহ্যবাহী এই বিনোদনকেন্দ্র বিনোদনপ্রেমীদের কাছে গুরুত্ব হারাতে বসেছে। এরই মধ্যে উদ্যানের বেশ কয়েকটি স্থান একেবারে ফাঁকা হয়ে গেছে। সর্বশেষ গত বুধবার থেকে আবারও গাছ কাটা শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন জাতের বড় বড় মূল্যবান শতাধিক গাছ কাটা হয়েছে। টেন্ডার ছাড়াই এসব গাছ কাটা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টেন্ডার ছাড়াই শহিদ এইচ এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যানের গাছগুলো কাটছেন নগরীর লক্ষ্মীপুর ভাটাপাড়ার রবিন নামে এক ব্যবসায়ী। গত তিন দিন ধরে নির্বিচারে গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এর ফলে চিড়িয়াখানায় বেড়াতে আসা দর্শনার্থী এবং সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ক্ষোভ অসন্তোষ বিরাজ করছে।

শহিদ এইচ এম কামারুজ্জামান বোটানিক্যাল গার্ডেন চিড়িয়াখানা পরিচালনার দায়িত্ব রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) অভিযোগ উঠেছে, চিড়িয়াখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত রাসিকের কর্মকর্তারা প্রায় লাখ টাকায় গাছগুলো বিক্রি করেছেন। টেন্ডার ছাড়াই পানির দরে বিক্রি করা এসব গাছের টাকা সংশ্লিষ্টরা ভাগবাঁটোয়ারা করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

গতকাল শনিবার চিড়িয়াখানায় প্রবেশের সময় চোখে পড়ে এখানে-ওখানে গাছ কাটার দৃশ্য। পড়ে ছিল কাটা ডালপালা, গাছের গুঁড়ি। চিড়িয়াখানার ভেতরে কৃত্রিম পাহাড়ের কাছে যেতেই চোখে পড়ে পুরোদমে গাছ কাটার দৃশ্য। প্রায় ৩০ জন শ্রমিক করাত দিয়ে বড় বড় গাছ কাটছিল। সেখানে উপস্থিত গাছ কাটার হিসাব রাখার দায়িত্বে থাকা মো. ইদুল নামে এক জন জানান, রবিন নামে এক ব্যক্তি গাছগুলো কাটার কাজ পেয়েছেন। বুধবার থেকে তারা গাছ কাটছেন। চিড়িয়াখানার ভেতরে তাদের ২০০ গাছ কাটার অনুমতি রয়েছে।

জানতে চাইলে বোটানিক্যাল গার্ডেন চিড়িয়াখানা পরিচালনা কমিটির সভাপতি রাসিকের নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি বলেন, পার্কের ভেতর কিছু প্রবেশ করতে কিংবা বের করতে হলে আমাকে জানাতে হবে। কিন্তু গাছ কাটার বিষয়ে আমাকে কিছু      জানানো হয়নি। গাছ কাটার বিষয়ে জানতে ব্যবসায়ী রবিনের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়। তার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম কী এবং কত টাকায় তিনি গাছগুলো কিনেছেন সে বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলতে চাননি। তিনি গাছগুলো টেন্ডার নিয়েছেন কি নাএমন প্রশ্নের জবাবে তিনি ব্যাপারে রাসিকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

চিড়িয়াখানার উদ্ভিদতত্ত্ববিদ হেলেন খাতুন বলেন, বোটানিক্যাল গার্ডেনে সাধারণত সব বিরল প্রজাতির গাছ থাকতে হয়। এত সাধারণ গাছ থাকার তো দরকার নেই। সে জন্য গাছগুলো কাটা হচ্ছে। সেখানে বিরল প্রজাতির গাছ লাগানো হবে। তবে টেন্ডার হয়েছে কি না ব্যাপারে রাসিকের কর্মকর্তারা বলতে পারবেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।

চিড়িয়াখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলমগীর কবির সাংবাদিকদের বলেন, গাছ নয়, গাছের ডালপালা কাটতে বলা হয়েছে। আর জন্য কোনো টেন্ডার হয়েছে কি না, তা তার জানা নেই। গাছ কেটে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়ে খোঁজ নিয়ে তিনি জানাবেন। কিন্তু পরে তিনি আর কিছু জানাননি। তাকে মোবাইল ফোনে কল করেও পাওয়া যায়নি।