শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

জাল ব্যান্ডরোলযুক্ত বিড়িতে সয়লাব রংপুরের হাটবাজার

আপডেট : ২৫ নভেম্বর ২০২০, ২২:২০

জাল ব্যান্ডরোলযুক্ত নিম্নমানের বিড়ি-সিগারেটে ছেয়ে গেছে রংপুর অঞ্চলের হাটবাজারগুলো। এসব বিড়ি তৈরি করে হাটবাজারগুলোতে বহুদিন থেকেই সরবরাহ করে আসছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। সরকারি বিভিন্ন সংস্থার অভিযানের মধ্যেও দোকানদের উপঢৌকন দিয়ে দেদার বিক্রি হচ্ছে এসব অবৈধ বিড়ি। এতে করে প্রতি বছর শুধু হারাগাছ এলাকা থেকে ৯০ কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। অভিযোগ রয়েছে, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এসব কাজে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করছেন কাস্টমস বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, জাল ব্যান্ডরোলযুক্ত এসব বিড়ি বাজারজাতকরণে কোনো আইন ও নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না ব্যবসায়ীরা। বিড়ি বাজারজাতের জন্য দোকানদারদের ডালা, ক্যাবিনেট, নগদ টাকা, লুঙ্গি, গামছাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র উপহার দেওয়া হচ্ছে। দোকানদাররাও ভালো মন্দ বিচার না করে অবৈধ বিড়ি বিক্রি করছেন। ধূমপান এমনিতেই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, আর এই নিম্নমানের বিড়ি সেবনের কারণে ভোক্তারা অধিক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন। মাঠপর্যায়ের কিছু অসাধু রাজস্ব কর্মকর্তা নকল ব্যান্ডরোল কারবারকে উত্সাহিত করে চলেছেন। বিশেষ করে যাচাই-বাছাই ছাড়া অনলাইনে বিড়ি ফ্যাক্টরির লাইসেন্স দেওয়ায় তারা সরকারি ব্যান্ডরোল ক্রয় না করে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভুয়া ব্যান্ডরোল লাগিয়ে বিড়ি-সিগারেট বাজারজাত করে রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। এর ফলে সরকারও প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে দুদক ও এনবিআরের পাশাপাশি নকল ব্যান্ডরোল ব্যবহারকারীদের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা অনুযায়ী বাংলাদেশের ৪৩.৩ শতাংশ মানুষ তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার করে আসছে। রাজস্ব বোর্ডের আইন অনুযায়ী, ব্যান্ডরোলের মূল্য, সম্পূরক শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর, সারচার্জ মিলে ২৫ শলাকার প্রতি প্যাকেট বিড়ি বাজারজাতকরণে রাজস্ব খাতে ব্যয় হয় ৯ টাকা ০৯ পয়সা। আর প্রতি প্যাকেট বিড়ি তৈরিতে মালিকদের ব্যয় হয় ৫ থেকে ৬ টাকা। সে হিসাবে ১ প্যাকেট বিড়ি বাজারজাতে খরচ হয় ১৫ থেকে ১৬ টাকা। এ কারণে সরকারিভাবে ২৫ শলাকার প্রতি প্যাকেট বিড়ির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নিয়ম অনুসারে ১ প্যাকেট বিড়ির দাম ১৮ টাকার নিচে বিক্রি করা হলে সেসব বিড়ি নকল ও অবৈধ। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, রংপুর বিভাগে প্রতিদিন বৈধ-অবৈধ মিলে প্রায় ১ কোটি শলাকা বিড়ি বাজারজাত হয়। এর মধ্যে শতকরা মাত্র ৩০ শতাংশ বিড়ি সরকারি রাজস্ব আইন মেনে বাজারজাত করা হয়। বাকি ৭০ শতাংশ বিড়িই নকল ব্যান্ডরোল লাগিয়ে বাজারজাত হয়ে আসছে। অর্থাত্, ৭০ লাখ শলাকা বিড়ি বা ২ লাখ ৮০ হাজার প্যাকেট বিড়িতে সরকার প্রতি প্যাকেটে ৯ টাকা হিসেবে প্রতিদিন রাজস্ব হারাচ্ছে ২৫ লক্ষাধিক টাকা। এ হিসেবে সরকার প্রতি বছর শুধু হারাগাছ এলাকা থেকে ৯০ কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব হারাচ্ছে।

বাংলাদেশ বিড়ি মালিক সমিতির সহসভাপতি ও রংপুর জেলা সভাপতি মজিবর রহমান মোবাইল ফোনে জানান, নকল, জাল ও ব্যান্ডরোলবিহীন বিড়ি তৈরি বন্ধে আমাদের করণীয় কিছু নেই। আমরা কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে বরাবরই এ বিষয়ে তাগিদ দিয়ে আসছি, তারা যেন অভিযান চালিয়ে এসব বিড়ির উত্পাদন বন্ধ করে দেন।

রংপুর কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট বিভাগীয় কমিশনার ড. শওকত আলী সাদী সাংবাদিকদের জানান, গত এক মাসে নকল ব্যান্ডরোলযুক্ত বিড়ি বাজারজাতকারীদের বিরুদ্ধে ১৮৬টি অভিযান পরিচালনা করে ২ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয় করা হয়েছে। বর্তমানে যারা আইন অমান্য করছে ও রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

রংপুর জেলা প্রশাসক আসিফ আহসান জানান, নকল ব্যান্ডরোলযুক্ত বিড়ি বিক্রির বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। এ জন্য টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। এসব বিড়ি সংক্রান্ত কোনো তথ্য পেলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে অভিযান পরিচালনা করি।