শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সিদ্ধিরগঞ্জে বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ

আপডেট : ১২ জুন ২০২১, ২৩:০৩

সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী ইপিজেডে বকেয়া পাওনার দাবিতে পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সঙ্গে পোশাকশ্রমিকদের দফায় দফায় পালটাপালটি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশ-শ্রমিক ও সাংবাদিকসহ ১৫ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। গতকাল শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আদমজী ইপিজেডের সামনে কুনতুং এ্যাপারেলস লি. (ফ্যাশন সিটি) নামে একটি পোশাক কারখানার চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের বিক্ষোভের সময় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

আহতরা হলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক-সার্কেল) মেহেদী ইমরান সিদ্দিকী, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম, সহকারী উপপরিদর্শক জাহাঙ্গীর, উপসহকারী পরিদর্শক আনোয়ার, পুলিশ সদস্য মমিন। এছাড়া দায়িত্ব পালন কালে দুই জন সাংবাদিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা সড়কের ওপর আগুন জ্বালিয়ে নারায়ণগঞ্জ-চিটাগাং রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এতে প্রায় তিন ঘণ্টা ঐ সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। এতে দুর্ভোগে পড়ে এলাকাবাসী ও যাত্রীসাধারণ। দুপুরের দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

জানা যায়, পোশাক কারখানাটি প্রথমে গত বছরের সেপ্টেম্বরে লে-অফ ঘোষণা করা হয়। পরে মালিকপক্ষ স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করে। ঐ সময় প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ৬ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ে। সেই সময় শ্রমিকদের পওনার ৩৪ শতাংশ পরিশোধ করলেও বাকি ৬৬ শতাংশই বকেয়া রয়ে যায়। মালিকপক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে পাওনা পরিশোধের আশ্বাস দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত পরিশোধ করা হয়নি। প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হওয়ার পর থেকে পাওনা আদায়ের জন্য বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন করেও কোনো ফল পাচ্ছে না শ্রমিকেরা।

আন্দোলনরত শ্রমিকেরা জানায়, মালিকপক্ষের দেওয়া সময় অনুযায়ী গতকাল শনিবার সকালে আদমজী ইপিজেডের প্রধান গেটের সামনে নারায়ণগঞ্জ-আদমজী-চিটাগাং রোডে অবস্থান নেন তিন শতাধিক পোশাকশ্রমিক। শ্রমিকদের অভিযোগ, এ সময় ইপিজেডে নিয়োজিত আনসার সদস্যরা নারী ও পুরুষ শ্রমিকদের ওপর লাঠিচার্জ করেন। পরে ক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা সড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেন। দুই দফায় নারায়ণগঞ্জ পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (‘ক’ সার্কেল) মেহেদী ইমরান সিদ্দিকী ও সহকারী কমিশনার (সিদ্ধিরগঞ্জ সার্কেল) রেজা মো. গোলাম মাসুম প্রধান মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের জন্য আন্দোলনরত শ্রমিকদের আশ্বাস দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। কিন্তু শ্রমিকেরা তাদের কথা মেনে না নিয়ে আরো ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন শ্রমিকেরা। এ সময় শ্রমিকেরা ইট-পাটকেল ছোড়েন। পুলিশও পালটা টিয়ারশেল ও গুলি নিক্ষেপ করে। এতে পুলিশ, সাংবাদকিসহ ১৫ জন আহত হন। পরে শ্রমিকেরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। ১১টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় পুলিশ।

রিনা আক্তার নামের এক পোশাকশ্রমিক বলেন, ‘আমি ছয় বছর ঐ কারখানায় কাজ করেছি। কিন্তু আমি আমার বকেয়া পাওনা এখনো পাইনি।’ ছয় বছরে প্রায় ২ লাখ টাকা জমেছে বলে এই নারী শ্রমিকের দাবি। তানিয়া নামে আরেক শ্রমিক জানান, ৯ বছরে তারও প্রায় ২ লাখের বেশি টাকা জমেছে। সহকারী কমিশনার (সিদ্ধিরগঞ্জ সার্কেল) রেজা মো. গোলাম মাসুম প্রধান বলেন, শ্রমিকেরা জানিয়েছেন, মালিকপক্ষ তাদের বারবার সময় দিয়েও পাওনা পরিশোধ করছে না। শ্রমিকদের পাওনা আদায়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দিলেও শ্রমিকরা তা মেনে নেননি।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মেহেদী ইমরান সিদ্দিকী জানান, শ্রমিকেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেন এবং ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করেন। পুলিশও ১২ রাউন্ড গুলি ছোড়ে এবং ১১টি টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে শ্রমিকদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় এবং সড়কে যান চলাচল শুরু হয়। তবে শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে মালিকপক্ষ কিছুই জানায়নি।

আদমজী ইপিজেডের জিএম আহসান কবির বলেন, ‘কারখানা বিক্রি করে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করবে বলে জানিয়েছে ফ্যাশন সিটির মালিকপক্ষ। তার আগে কোনোভাবেই মালিকপক্ষ শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করতে পারবে না বলে আমাদের জানিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত শ্রমিকদের অপেক্ষা করতে হবে। আমরা তাদের সেটা জানিয়েছি। তবে আজকে (শনিবার) কেন তারা এখানে সমবেত হয়েছে তা আমার জানা নেই। আমাদের পক্ষ থেকে ১২ জুন পাওনা পরিশোধ করা হবে বলে জানানো হয়নি। হয়তো কোনো পক্ষ তাদের মিথ্যা তথ্য দিয়েছে।’