শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

আধুনিক ফ্যাশনেও সমান জনপ্রিয় চুড়ি

আপডেট : ১৯ মার্চ ২০১৯, ২২:৪২

চুড়ি পরতে পছন্দ করেন না এমন নারী খুঁজে পাওয়া কঠিন। একটা সময় ছিল চুড়ি শুধু শাড়ি আর সালোয়ার কামিজের সাথে পরতো নারীরা। আজকাল আধুনিক পোশাকের সাথেও সিলভার, কপার, পিতল হরেক রকমের চুড়ি পরে থাকেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী থেকে ফ্যাশন সচেতন তরুণীরা।

রাজধানীর গাউসিয়ার একটা দোকান থেকে চুড়ি কিনছিলেন দুই বোন ইফাত মাহবুব আর ইসরাত মাহবুব। চুড়ি কেনার বিষয়ে কথা হয় তাদের সাথে। জানালেন, তাদের পারিবারিক একটি অনুষ্ঠানের জন্য চুড়ি কিনেছেন। শুধু অনুষ্ঠানেই চুড়ি পড়েন? -এমন প্রশ্নের জবাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইফাত মাহবুব বলেন, মাঝেমধ্যে পোশাকের সাথে মিলিয়ে চুড়ি পরতে ভাল লাগে। শাড়ি-সালোয়ারের বাইরে অনেক নারীই আজকাল টপস, স্কার্ট কিংবা শার্টপ্যান্টের সাথে পরছেন ধাতুর চুড়ি। অভিনেত্রী মৌসুমী হামিদও আধুনিক পোশাকের সাথে পরেন ধাতুর চুড়ি। অনেকের প্রিয় গয়নার জায়গা জুড়ে রয়েছে এই চুড়ি। মৌসুমী বলেন, আমি আমার ছেলে ও মেয়ে বন্ধুদের কাছ থেকে চুড়ি উপহার পাই। পছন্দের গয়নার মধ্যে চুড়ি অন্যতম।

চারুকলার সামনের ফুটপাতে চুড়ি বিক্রি করেন নূপুর। ক্রেতাদের সম্পর্কে জানতে চাইলে নূপুর জানান, শুধু শিক্ষার্থীরা নয়, অনেক নারী আসে এখানে চুড়ি কিনতে। জাতীয় জাদুঘরে বেড়াতে আসা অনেকে তার চুড়ির ক্রেতা।

চুড়ির ইতিহাস

জানা যায়, চুড়ির ইতিহাস যুগ যুগান্তরের। তখন সম্ভ্রান্ত জমিদার ও নবাব পরিবারে নারীদের হাতে রেশমি চুড়ি থাকাটা ছিল অবধারিত। আমাদের সামাজিক আর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাথে চুড়ির অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক আছে বলে মন্তব্য করেন কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। তিনি বলেন, গয়না হিসেবে এটি যেমন নারীর সাংস্কৃতিক যোগাযোগ স্থাপন করে, তেমনি এর ধর্মীয় চেতনাও প্রকট। হিন্দু ধর্মাবলম্বী নারীদের সধবার পরিচয় শাঁখা-সিঁদুর। বিবাহর সময় তারা লাল শাঁখা আর সব সময় সাদা শাখা ব্যবহার করে। তাই শাঁখার সাথে বৈধব্যের সম্পর্ক স্পষ্ট। মুসলমান সমাজে স্বামীর মঙ্গলের জন্য দুগাছি চুড়ি প্রাধান্য পেলেও তা হিন্দু নারীর শাঁখার মতো নয়।

বাহারি রঙ ঢঙ আর ডিজাইনের চুড়ি

একজন কাচের চুড়ি বিক্রেতা জানান, রেশমি চুড়ির সাথে দেবদাস, সুতার চুড়ি, চুমকির সেট, কাচের চুড়ির ওপর ফোমের কারুকাজ করা ফোমের চুড়ি, চুড়ির মধ্যে ঝুমকা দোলান ঝুমকা চুড়ি, বৌ চুরি আছে তার কাছে। এগুলো চকবাজার থেকে আনেন। গাউছিয়ার চুরি বিক্রেতা মো: দেলোয়ার হোসেন জানান, তারা কলকাতা থেকে পাথর আর মেটালের গোল্ড প্লেটের চুড়ি আনেন। মার্কেটে ভারত, পাকিস্তান ও চীনের কিছু চুড়ি পাওয়া যায়। এই সকল চুড়ির মূল্য শুরু হয় ৬০ টাকা থেকে ৫শ/৬শ টাকা পর্যন্ত। বৈশাখ, ফাল্গুন আর বিবাহর মৌসুমসহ ঈদ, পূজায় চুড়ি কেনাবেচা বেশি হয়। চক বাজারের চুড়ি বিক্রেতা ফারুক হোসেন বলেন, ৯০-এর দশকে জোনাকি চুড়ি দিয়ে জায়গা করে নেয় স্টিলের রঙিন চুড়ি।

আজিজ সুপার মার্কেটের সামনে ফিরোজের ফুটপাতের দোকান থেকে রাবারের কালো চুড়ি আর রুপালী রঙের ধাতুর চুড়ি কিনলেন দুই বন্ধু। একজন ঋতু অন্যজন রেহান সরকার। রেহান চারুকলায় ভর্তি হওয়ার আগে থেকেই চুড়ি পরেন। আর ঋতু নাচের অনুষ্ঠান করার সময় থেকে। জনপ্রিয় ফ্যাশন হাউজ বিবিয়ানার ফ্যাশন ডিজাইনার লিপি খন্দকার বলেন, শুধু মেয়েরাই যে চুড়ি পরে সে ধারণা ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে। ‘পাঙ্কি স্টাইল’ যারা করে, আবার যারা রক কিংবা ব্যান্ড সংগীত করে তারাও অনেকে আজকাল ধাতুর চুড়ি পরছে। ছেলেদের হাতে চুড়ি আজ মানিয়েও গেছে। আর এখন শুধু সোনা, রুপা আর কাচের চুড়ি নয় সুতার, মাটির, কাঠের, ঝিনুক-শামুকের, রাবারের কিংবা প্লাস্টিকের চুড়ির প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়। লিপি জানান, শুধু যে ধাতুর ভিন্নতা এসেছে তা কিন্তু নয়, এখন গোল চুড়ির পাশাপাশি, তিনকোনা, চৌক, বহুকোনা, ঢেউ খেলান নানা ধাঁচের চুড়ি পরছে মানুষ। আবার পাতলা-মোটা, হরেক রঙ ও ধাতু সেট করে পড়ার চাহিদাও বাড়ছে।