বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

আসন বদলাতে নিষেধ করায় পিস্তল বের করেন পলাশ

আপডেট : ২২ মার্চ ২০১৯, ২৩:০৭

চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ বিমানের একটি উড়োজাহাজ ছিনতাইয়ের ঘটনায় এ পর্যন্ত পাইলট, ক্রু ও বিমানবন্দরের কর্মকর্তাসহ দশজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। এর মধ্যে গত বুধবার বিমানের পাইলটসহ ছয়জন ক্রু‘র বক্তব্য নেওয়া হয়। এরা হলেন- পাইলট মো. গোলাম সাফি, ফার্স্ট অফিসার মুনতাসির মাহমুদ, কেবিন ক্রু শাফিকা নাসিম নিম্মী, হোসনে আরা, শরীফা বেগম রুমা ও আব্দুর শাকুর মুজাহিদ। গত বুধবার তারা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপ-পরিদর্শক রাজেশ বড়ুয়ার কার্যালয়ে এসে তাদের বক্তব্য দিয়ে যান। বিমানের অপর ক্রু সাগর দেশের বাইরে থাকায় তাকে পরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানা গেছে।

মামলার তদন্তে সন্তোষজনক অগ্রগতি হয়েছে দাবি করে পুলিশ কর্মকর্তা রাজেশ বড়ুয়া ইত্তেফাককে বলেন, প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া ছিনতাইয়ের চেষ্টাকারী পলাশের সাবেক স্ত্রী সিমলাকেও জিজ্ঞাসাবাদের পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি ছবির শ্যুটিংয়ের কাজে এখন ভারতের মুম্বাই রয়েছেন। ফিরে এলেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

আসন বদলাতে নিষেধ করায়

পিস্তল বের করেন পলাশ

এদিকে, বিমান ছিনতাই চেষ্টার ঘটনায় পাইলট ও ক্রুরা পুলিশকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন বলে পুলিশ কর্মকর্তা রাজেশ বড়ুয়া ইত্তেফাককে জানান। তিনি বলেন- সেদিন পলাশের জন্য ফ্লাইটের ১৭-ডি আসনটি বরাদ্দ ছিল। বিমান ওড়ার কিছু সময় পর তিনি আসন পরিবর্তন করলে পলাশকে তার নির্ধারিত আসনে বসতে বলার জন্য একজন কেবিন ক্রু আরেকজন ক্রুকে সংকেত দেন। এতে পলাশ উত্তেজিত হয়ে পিস্তল বের করে বিমান ছিনতাইয়ের ভয় দেখান। পিস্তলটি প্লাস্টিকের তৈরি একটি খেলনা বলে ইতোমধ্যে প্রতিবেদন দিয়েছে সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ।

ঘটনাটি তত্ক্ষণাত্ পাইলটকে জানান কেবিন ক্রু নিম্মী। বিষয়টি জানার পর ক্যামেরা অন করে পলাশকে ককপিটের দরজায় লাথি মারতে দেখেন পাইলট। এসময় তার হাতে পিস্তল ও বোমা সদৃশ বস্তু দেখা যায়। পাইলটের নির্দেশে ফার্স্ট অফিসার মুনতাসির বিষয়টি বিমানবন্দর নিয়ন্ত্রণ কক্ষকে জানিয়ে দেন। নির্ধারিত সময়ের পাঁচ থেকে সাত মিনিট আগেই বিমানটি চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমান বন্দরে অবতরণ করে।

কেবিন ক্রুরা তদন্ত কর্মকর্তাকে আরো জানান, অবতরণের পর পাইলট কেবিন ক্রুকে ইন্টারকমে পলাশের সঙ্গে কথা বলিয়ে দিতে বলেন। পলাশকে আলাপে ব্যস্ত রেখে বিমানের ইমার্জেন্সি এক্সিট খুলে দেওয়ার পর যাত্রীরা দ্রুত বিমান থেকে নামতে শুরু করেন। এসময় বিমানে ‘পটকা ফাটার মতো’ দুটো আওয়াজ শোনা যায়। যাত্রীরা নেমে যাওয়ার পর কেবিন ক্রু সাগরকে পলাশের সঙ্গে রেখে অন্য কেবিন ক্রু এবং পাইলটও বিমান থেকে নেমে পড়েন। এর কিছুক্ষণ পর এক কমান্ডো অভিযানে কথিত ছিনতাইকারী পলাশ নিহত হন।

উল্লেখ্য, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ বিমানের বোয়িং ৭৩৭ ময়ূরপঙ্খী ফ্লাইট ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেন পলাশ নামের এক যুবক। বিমানটি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাই যাওয়ার কথা ছিল। বিমান ছিনতাই চেষ্টার ঘটনায় চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানায় একটি মামলা করে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ। সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট মামলার তদন্ত করছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান নাঈম হাসান সেদিন কমান্ডো অভিযানের পর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, স্ত্রী সিমলার কোনো বিষয় নিয়ে বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টাকারী পলাশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চাইছিলেন বলে পাইলট তাকে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে মামলার এজাহারে বলা হয়, উক্ত দুষ্কৃতকারী তার কিছু দাবি-দাওয়া প্রধানমন্ত্রীকে শুনতে হবে বলে চিত্কার করে। অন্যথায় সে বিমানটি তার কাছে থাকা বিস্ফোরক দিয়ে ধ্বংস করে দেবে মর্মে হুমকি দেয়।