শনিবার, ৩০ মার্চ ২০২৪, ১৬ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বিকল্পভাবে বিরোধ নিষ্পত্তিতে বিচার প্রার্থীদের আগ্রহ কম

আপডেট : ২২ মার্চ ২০১৯, ২৩:০৮

নতুন নতুন আইন প্রণয়নের ফলে বাড়ছে মামলা। আবার মামলা নিষ্পত্তির জন্য বিকল্প পন্থাও বের করেছে সরকার। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) সেরকম একটি পদ্ধতি। কিন্তু এই পদ্ধতিতে মামলা নিষ্পত্তিতে বিচারপ্রার্থী জনগণের আগ্রহ কম। দেওয়ানি মামলায় সাধারণত এর প্রয়োগ বেশি দেখা যায়। তবে ছোটখাট অপরাধে দায়ের করা ফৌজদারি মামলায়ও এর প্রয়োগ হয়ে থাকে। কিন্তু কি পরিমাণ ফৌজদারি মামলা এই পদ্ধতিতে নিষ্পত্তি হয় তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে বছরে এডিআরে নিষ্পত্তিকৃত দেওয়ানি মামলার পরিসংখ্যান সুপ্রিম কোর্টের কাছে রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ইত্তেফাককে বলেন, এডিআর পদ্ধতিতে মামলা নিষ্পত্তি হলে সমাজে বিশৃঙ্খলার পরিবর্তে শান্তি ও পক্ষগণের মধ্যে সদ্ভাব বজায় থাকে। যে মামলাটি ১০ বছর ধরে আদালতে চলত সেটা এই পদ্ধতিতে ২/৩ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি সম্ভব। তিনি বলেন, এডিআরের কার্যকর প্রয়োগ না হলে বিচারপ্রার্থী জনগণ বিচার পাবে না। তাদেরকে বিচারের জন্য বছরের পর বছর ধরে অপেক্ষা করতে হবে।

সুপ্রিম কোর্টের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত নিম্ন আদালতসমূহে ১৩ লাখ ২১ হাজার ৩৮টি দেওয়ানি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। ওই বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত নিষ্পত্তি হয়েছে ৪৪ হাজার ৯১১টি মামলা। এর মধ্যে বিকল্প বিরোধ পদ্ধতিতে নিষ্পত্তি হয়েছে ১ হাজার ৬৫৫টি মামলা। এর আগের তিন মাসে (এপ্রিল থেকে জুন) নিষ্পত্তি হয়েছে ১৮শ মামলা। এছাড়া ২০১৭ সালে এডিআরের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয় ৫ হাজার ৪৮৫টি মামলা। এর অধিকাংশই পারিবারিক, ল্যান্ড সার্ভে, শ্রম, স্বত্ব্ব ও অন্য প্রকার মামলা। তবে নির্বাচনী, দেউলিয়া, রেন্ট কন্ট্রোল, ওয়াকফ, ট্রেড মার্ক, প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল সংক্রান্ত কোনো মামলায় এডিআরের প্রয়োগ দেখা যায়নি। অর্থাত্ এ ধরনের মামলার কোনো পক্ষই এই পদ্ধতিতে বিরোধ নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয়নি।

হাইকোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ ইকতেদার আহমেদ বলেন, আইনজীবীদের কারণেই এডিআর কার্যকর হচ্ছে না। যদি মামলার পক্ষগণকে তারা সঠিক পরামর্শ দিত তাহলে এই পদ্ধতি বিচারপ্রার্থীরা সহজেই গ্রহণ করত। তিনি বলেন, আমাদের আদালতসমূহে যেসব দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা হয় তার মধ্যে ৫০ ভাগই কারণবিহীন। শুধুমাত্র কাউকে হয়রানি করার জন্যই অনেক সময় মামলা করা হয়ে থাকে।

তবে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, ‘যে দেশের মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হলো মিথ্যা মামলা করার তাদের পক্ষে এডিআরের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি অকল্পনীয় ব্যাপার। এখানে আইনজীবীরা দায়ী নন।’

প্রসঙ্গত, মামলার দীর্ঘসূত্রতা হ্রাস ও মামলা জট নিরসনে সরকার ২০০৩ সালে দেওয়ানি কার্যবিধিতে এডিআর ব্যবস্থা প্রবর্তন করে। প্রথমে বিচারিক আদালতকে এ ক্ষমতা দেওয়া হলেও পরে আপিল আদালতকেও এডিআরের মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তির ক্ষমতা প্রদান করা হয়। সর্বশেষ ২০১২ সালে আরেকটি সংশোধনী এনে আপস-মীমাংসার উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হয়। অর্থাত্ এই পদ্ধতির মাধ্যমে বিচারপ্রার্থী জনগণ খোলামন নিয়ে মধ্যস্থতাকারীর দ্বারস্থ হন এবং আলাপ-আলোচনার  মধ্যদিয়ে একটি সমাধানে পৌঁছান।