গত বছরের ২৬ নভেম্বর সাফল্যের সাথে মঙ্গলের ইলিসিয়াম প্ল্যানিশিয়ায় পা রেখেছিল নাসার পাঠানো রোবট ‘ইনসাইট’। মঙ্গলপৃষ্ঠে নামার পেছনে ইনসাইটের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সেখানকার তাপমাত্রা, অনুরণন, কম্পনের মতো অত্যাবশ্যক লক্ষ্মণসমূহ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা। মঙ্গলপৃষ্ঠের কম্পন জানতে ইনসাইটে রয়েছে উন্নত প্রযুক্তির সিসমোমার। মঙ্গলের অভ্যন্তর থেকে এবার সেই বহুল কাঙ্খিত কম্পনের শব্দ শুনতে পেরেছে রোবট ইনসাইট। মার্শকোয়েক নামের এই কম্পনে থরথর করে কেঁপে উঠেছে লাল গ্রহটি। এই মার্শকোয়েকের জন্য প্রায় ৫০ বছর ধরে অপেক্ষায় ছিলেন বিজ্ঞানীরা। কম্পনের পর এখন নাসার বিজ্ঞানীদের প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে কম্পনের উত্স জানা।
নাসার ইনসাইট মিশনের প্রধান পর্যবেক্ষক ব্রুস বানারডট বলেন, প্রথম থেকেই ইনসাইটের কাজ আমাদের মুগ্ধ করে চলেছে। এবার কম্পনের শব্দ পাঠিয়ে দারুণ এক কাজ করেছে ইনসাইট। ইনসাইটের সহযোগী পর্যবেক্ষক রেনে ওয়েবার বলেন, প্রতিদিন রাতে এবং দিনে একবার করে ইমেইল চেক করতে হয়। এই বুঝি নতুন কোন তথ্য আসলো। আজ এই কম্পনের শব্দ পাওয়ার পর যেন বহুল প্রত্যাশিত ঘটনাকে প্রত্যক্ষ করলাম।
মঙ্গলের অভ্যন্তরীণ কাঠামো এবং ঘূর্ণন সম্পর্কে তথ্য জানতে ধারাবাহিকভাবে তরঙ্গ বিজ্ঞান পরীক্ষা ব্যবস্থা চালু রয়েছে রোবটটিতে। মার্শকোয়েকের ঘটনা জানার পর বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, এখনও পুরোপুরি মরে যায়নি লাল গ্রহটি। এখনও ‘বিপব স্পন্দিত’ মঙ্গলের বুকে! বদলাচ্ছে তার গঠন। বদলাচ্ছে তার অভ্যন্তর। ভূমিকম্পে যেমন থরথর করে কেঁপে ওঠে পৃথিবী, দুলে ওঠে মাটি, ফুলে-ফেঁপে ওঠে সাগর, মহাসাগর এই প্রথম তেমনটাই ঘটেছে মঙ্গলে। মঙ্গলের অভ্যন্তরের সেই কম্পনের শব্দ শুনতে পেল নাসার পাঠানো মহাকাশযান 'ইনসাইট'-এর ল্যান্ডারে থাকা 'সিসমিক এক্সপেরিমেন্ট ফর ইন্টিরিয়র স্ট্রাকচার' (সিস) যন্ত্রটি। নাসার ব্যবহার করা ফরাসি এই যন্ত্রটি কম্পনের শব্দ শুনে সাথে সাথে তা রেকর্ড করে পাঠিয়ে দিয়েছে গ্রাউন্ড স্টেশনে। তারপর সেই শব্দকে করে তোলা হয়েছে শ্রবণযোগ্য।
নাসা জানিয়েছে, গত ৬ এপ্রিল মোটামুটি ভালভাবে তা শোনা গিয়েছে। তবে তার আগে, পরে আরও তিন দিন ওই শব্দ শুনেছে সিস। যদিও তা খুবই নিচু স্বরে। গত ১৪ মার্চ, ১০ এপ্রিল এবং ১১ এপ্রিলও ঘটেছিল মার্শকোয়েক।
ওয়াশিংটনে নাসার সদর দফতর থেকে মিশন অপারেশনসের সায়েন্স অপারেশন ওয়ার্কিং গ্রুপের চেয়ার জ্যোতির্বিজ্ঞানী অমিতাভ ঘোষ জানিয়েছেন, এটা একটা অসাধারণ সাফল্য। অভূতপূর্ব। এই প্রথম মঙ্গলের কম্পন ধরা পড়ল নাসার যন্ত্রে। লাল গ্রহের অভ্যন্তরে কী কী ঘটে চলেছে, তা জানাতে এই ঘটনা খুবই সাহায্য করবে।-ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক