বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

আমলাতন্ত্র সংস্কারে করা হচ্ছে সচিব পুল

আপডেট : ১২ জুন ২০১৯, ২৩:০৫

আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদে এসে এখন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আমলাতন্ত্রে বড় সংস্কার আনতে যাচ্ছে। সংস্কারের প্রক্রিয়ায় সচিব হওয়ার যোগ্য কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি পুল গঠন, পদোন্নতির ধারাবাহিকতা রক্ষা, ব্যক্তিগত আচরণসহ পেশাগত উন্নয়ন ও দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের জন্য ১২ দফা নির্দেশিকা পালন বাধ্যতামূলক, কর্মজীবনে বছরভিত্তিক মূল্যায়ন ইত্যাদি এই সংস্কারের মধ্যে থাকবে।

পাশাপাশি যোগ্য জেলা প্রশাসকদের তালিকা তৈরির কাজও শুরু হয়েছে। চলছে পদোন্নতির প্রক্রিয়া। এবার ২১ ও ২২তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের জেলা প্রশাসক করতে পরীক্ষা নেওয়া চলছে। এই প্রক্রিয়া শেষে মাঠ প্রশাসনে বড় রদবদল হবে। একইসঙ্গে আগামী আগস্ট থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে বেশ কিছু সচিব অবসরে যাবেন। সেক্ষেত্রে শীর্ষ পদেও নিয়োগ ও রদবদলের প্রয়োজন হবে। 

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সচিব হওয়ার যোগ্য কর্মকর্তাদের পুল গঠনের জন্য নীতিগত অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে। তার অনুমোদনের পর অতিরিক্ত সচিবদের মধ্যে থেকে যাচাই-বাছাই করে যোগ্য কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি পুল গঠন করা হবে। তবে ১৯৮৫ ব্যাচ বা তদূর্ধ্ব ব্যাচের কোনো কর্মকর্তাকে এই পুলে নেওয়া হচ্ছে না। ১৯৮৬ ব্যাচের কর্মকর্তা বা তদনিম্ন  ব্যাচের কর্মকর্তাদের নিয়ে এই সচিব পুল হবে। শূন্য পদে সচিব নিয়োগের সময়ে পুল থেকে ক্রম বিবেচনায় পর্যায়ক্রমে নিয়োগ হবে। এখন বস্তুত তেমন কোনো নিয়মকানুন নেই। দায়িত্বপ্রাপ্তদের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ ক্ষেত্রবিশেষ দলীয় বিবেচনাকে প্রাধান্য দিয়ে সচিব নিয়োগ করা হয়েছে। এরকম বাস্তবতায় কিছু ক্ষেত্রে দক্ষতা ও যোগ্যতার বিষয়টি উপেক্ষিত হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহমেদ সমপ্রতি সব সচিবের কাছে যে চিঠি দিয়েছেন তাতেও বিষয়টি বেশ পরিষ্কার যে, যোগ্যতা-দক্ষতার সংকটে প্রশাসন। নথি, সার-সংক্ষেপ প্রস্তুতকালে যেনো শুদ্ধবানান রীতি অনুসরণ করা হয়, ভুল বানান পরিহার করার তাগিদ রয়েছে ওই চিঠিতে। ইতিপূর্বেও মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমও সব সচিবকে লেখা চিঠিতে উল্লেখ করেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রিসভার জন্য উত্থাপিত সার-সংক্ষেপ যেন নির্ভুলভাবে পাঠানো হয়। ভুল থাকায় কিছু সারসংক্ষেপ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠানোর নজিরও রয়েছে। এ পরিস্থিতি কাটাতে কর্মকর্তাদের চাকরিতে প্রবেশের প্রথম ৩ থেকে ৬ মাস প্রশিক্ষণে রাখা হবে। সে সময়েই ১২ দফা শিক্ষা অনুসরণ করে তাদেরকে কাজ করতে হবে।

নির্দেশিকা পালন কে কীভাবে করছেন তার বাত্সরিক মূল্যায়ন হবে। এজন্য নম্বর থাকবে। শুধুমাত্র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যে অধঃস্তন কর্মকর্তার মূল্যায়ন করবেন তা নয়, উভয়-উভয়ের মূল্যায়ন করতে পারবেন। এটি বড় সংস্কার বলে উল্লেখ করছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, মূল্যায়নের ক্ষেত্রে একজন কর্মকর্তার ব্যক্তিগত আচরণ ও পেশাগত দক্ষতা সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে।

এদিকে অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব ও উপসচিব পদে যোগ্যতা অর্জনকারী কর্মকর্তাদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া চলছে। ইতোমধ্যে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির জন্য এসএসবির বৈঠক হয়েছে। ১৭তম  ব্যাচের কর্মকর্তারা এবার যুগ্ম সচিব হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। এখন থেকে একইসঙ্গে একাধিক ব্যাচের কর্মকর্তাদের পদোন্নতির সুযোগ রহিত করে যখন যে ব্যাচের পদোন্নতির শর্ত পূরণ হবে তাদেরকে পদোন্নতি দেওয়া হবে।