শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ফিচার ফোন থেকে টাকা কেটে অপারেটর বলছে ইন্টারনেট গেম খেলেছেন

আপডেট : ১২ জুন ২০১৯, ২৩:০৫

মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী আতাউর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমার মা গ্রামে থাকেন। মায়ের ফোনটি ফিচার ফোন, স্মার্টফোন নয়। ফোনের ব্যালেন্স থেকে ৪৮ টাকা কেটে নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে অপারেটর জানিয়েছে, ইন্টারনেটে গেম খেলার কারণে এ টাকা কাটা হয়েছে। আমার প্রশ্ন, মা কখনোই ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না। গেম খেলার প্রশ্নও ওঠে না। তাহলে তার মোবাইল থেকে কেন টাকা কাটা হলো?’ এভাবে অসচেতন মানুষের কাছ থেকে মোবাইল অপারেটররা টাকা কেটে নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন আতাউর। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন-বিটিআরসির গণশুনানিতে অংশ নিয়ে তিনি এ অভিযোগ করেন।

মোবাইল অপারেটরদের সেবা নিয়ে বিটিআরসির গণশুনানিতে নেটওয়ার্ক সমস্যা, ইন্টারনেটে ধীরগতি,       প্যাকেজের নামে ‘প্রতারণা’, অতিরিক্ত টাকা কেটে নেওয়া, রেডিয়েশন ও অহেতুক এসএমএসের অভিযোগ তুলে ধরেন গ্রাহকরা। ২০১৬ সালে আয়োজিত গণশুনানিতে এ অভিযোগগুলোই এসেছিল। সেবার বিটিআরসির আশ্বাস নিয়ে ফিরতে হয়েছিল গ্রাহকদের। গতকাল বুধবার রমনার ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে দ্বিতীয়বারের গণশুনানিতেও গ্রাহকদের আশ্বাসই দিয়েছেন বিটিআরসি কর্মকর্তারা।

নানা প্রশ্ন ও অভিযোগ শুনে গণশুনানি কমিটির সভাপতি বিটিআরসি প্রধান জহুরুল হক বলেন, ‘আমরা অনেক ধরনের অভিযোগের কথা শুনলাম। কিছু অভিযোগের তাত্ক্ষণিক সমাধান দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলোর অতিসত্বর জবাব দেওয়া হবে। অভিযোগগুলো নিশ্চয়ই কমিশন সমাধান করবে। কল সেন্টার সপ্তাহে পাঁচদিন ছিল। এখন সপ্তাহের সাতদিনই ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা হবে। ফেসবুকসহ ওয়েবসাইটে অভিযোগ নেওয়া হবে।’ বিটিআরসির রাজস্ব আয় বৃদ্ধির তথ্য দিয়ে জহুরুল হক বলেন, ‘২০০১ সালে বিটিআরসির রাজস্ব আয় ছিল ৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এখন এখান থেকে রাজস্ব আয় হয় ১০ হাজার কোটি টাকা।’ সেবার বিষয়ে বিটিআরসি প্রধান বলেন, ‘সার্ভিসের ব্যাপারে আমি নিজেও সন্তুষ্ট না। কেউ সন্তুষ্ট নয়। প্রযুক্তির ব্যাপারে কেউ কখনো সন্তুষ্ট হয় না। ’

গ্রাহক রবিউল ইসলাম মোবাইল ফোনে ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস নিয়েছিলেন তিনবার। তার ব্যালান্স থেকে টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে সাতবার। অভিযোগ করার পরও তিনি টাকা ফেরত পাননি। এখানেই শেষ নয়, ইন্টারনেট প্যাকেজ কিনতে না পারার বিষয়ে রবিউল ইসলাম ২৪ এপ্রিল অভিযোগ করেন সংশ্লিষ্ট মোবাইল ফোন অপারেটরের কাছে। ২৮ মে পর্যন্ত নিয়মিত যোগাযোগ রেখে গ্রাহক সেবাকেন্দ্রে গিয়েও বিষয়টির সুরাহা হয়নি। সবশেষে তিনি সিম নিবন্ধন বাতিল করার হুমকি দেওয়ার পর অপারেটর সমস্যাটির সমাধান করে।

আবদুস সালাম নামে একজন অভিযোগ করেন, অযাচিত কল ও এসএমএসের বার্তার কারণে তিনি বিরক্ত। এর একটা প্রতিকার চান। উম্মে কুলসুম নামের একজন গ্রাহক বলেন, এক ওয়াইম্যাক্স অপারেটর তার সংযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু সংযোগে ৫০ হাজার টাকার মতো ব্যালান্স ছিল। এ নিয়ে বিটিআরসিতে অভিযোগ জানিয়েছিলেন, সুরাহা হয়নি।

গ্রামে ইন্টারনেটের দুরবস্থার চিত্র তুলে ধরেন একজন গ্রাহক। তিনি বলেন, তিনি একজন কনটেন্ট ডেভেলপার। ফেনীর ছাগলনাইয়ায় গ্রামের বাড়িতে গিয়ে তিনি ইন্টারনেট ব্যবহারে ব্যাপক দুর্ভোগে পড়েন। সেখানে থ্রিজি তো দূরের কথা, টুজি নেটওয়ার্কও ঠিকভাবে পাওয়া যায় না। কিন্তু তার দুটি সিমে প্রায় ১২ জিবি ইন্টারনেট ছিল, যার মেয়াদ এর মধ্যে শেষ হয়ে যায়। আব্দুস সালাম নামে একজন বলেন, প্রতি সেকেন্ড পালসে কথা বলি, কিন্তু কথা বলা শেষে দেখি হিসাব মেলে না।

অনুষ্ঠানে বিটিআরসির কমিশনার আমিনুল হাসান, রেজাউল কাদের, মহিউদ্দিন আহমেদ, সংস্থাটির মহাপরিচালকরা এবং মোবাইল অপারেটর ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবাদাতাদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। অবশ্য টেলিযোগাযোগ সেবা ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভূমিকা নিয়ে এ শুনানি হওয়ায় অপারেটরদের বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ ছিল না।