শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

প্র্যাংক ভিডিওর নামে সীমাহীন অশালীনতা

আপডেট : ২৬ জুন ২০১৯, ২২:৪৭

ইংরেজি ‘প্র্যাঙ্ক’ অর্থ তামাশা বা দুষ্টুমিপূর্ণ কৌশল। কোনো সাজানো ঘটনাকে সত্যের মতো করে উপস্থাপন করে একটু মজা করে তৈরি করা হয় প্র্যাঙ্ক ভিডিও। বিনামূল্যে ভিডিও প্রকাশের ওয়েবসাইট ইউটিউবে আপলোড করা হয় এসব ভিডিও। পাশ্চাত্যের ইউটিউবাররা প্রচুর প্র্যাঙ্ক ভিডিও তৈরি করে যা শত শত কোটিবার দেওয়া হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেসব ভিডিওতে দেখা যায় ভিডিওর উপস্থাপক এবং যাদের প্র্যাঙ্কের সাবজেক্ট করা হচ্ছে সবাই মজা পেয়ে হাসিতে লুটোপুটি খাচ্ছে।

কিন্তু প্র্যাঙ্কের নামে বাংলাদেশে শুরু হয়েছে অন্যরকম এক উত্পাত। পথে-ঘাটে মানুষকে বিব্রত ও হয়রানি করছে কিশোর-যুবক বয়সের কিছু ইউটিউবার। তাদের তৈরি কিছু কিছু প্র্যাঙ্ক ভিডিও শালীনতার সব মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। পথে-ঘাটে-পার্কে নারীদের বিশেষ করে কিশোরী ও তরুণীদের বিব্রত ও হয়রানি করে তারা। এসব হয়রানির ঘটনা গোপনে ভিডিও করে তারা। এরপর সেগুলো ইউটিউবে ছেড়ে দেয়।

উন্নত দেশে এসব ভিডিও আগে থেকে তৈরি হলেও বাংলাদেশে একেবারেই নতুন। সর্বত্র ইন্টারনেট সুবিধায় দেশের শহর থেকে গাঁও-গ্রামের তরুণরাও এখন ইউটিউবে ঝুঁকছে। আর এটাকে কাজে লাগিয়ে তরুণরা ইউটিউবে চ্যানেল বা ভিডিও পাবলিশিং একাউন্ট খুলে বিভিন্ন কন্টেন্ট ছাড়ছে। ভিডিওর ভিউ থেকে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন হয়। যত বেশি ভিউ, উপার্জন তত বেশি। এ কারণে মানহীন ও অশালীন শিরোনামের ভিডিও ছাড়ার রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলছে দেশীয় ইউটিউবারদের মধ্যে। শিশু-কিশোররা এসব ভিডিও দেখে বিপথগামী হতে বাধ্য। এছাড়া শর্ট ফিল্মের নামে অশালীন শিরোনামের কিংবা গল্পের দৃশ্যায়নও করা হচ্ছে। নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের সহজাত আগ্রহ থাকার কারণে এসব ভিডিওতে ক্লিকও পড়ে বেশি। কিছু কিছু ইউটিউবার প্র্যাঙ্কের নামে কিশোরী-তরুণীদের নিকট গিয়ে একের পর এক অশ্লীল প্রশ্ন করতে থাকে। সেগুলো ভিডিও করে আপলোড করে। এসব ভিডিও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখার উপযোগী নয়। অথচ এসব ভিডিওতে লাখ লাখ ভিউ হতে দেখা যায়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, ‘সেফ ইন্টারনেট’ স্লোগানকে সামনে রেখে ইন্টারনেটে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি জনপ্রিয় ইউটিউবার সালমান মুক্তাদিরকে সতর্ক করেছে পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট। তারা সালমানের ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজ থেকে তার অগ্রহণযোগ্য কনটেন্ট মুছে ফেলতে বলেছে এবং ঐ ধরনের কাজ চালিয়ে গেলে তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলেও সতর্ক করেছে। এর আগে মডেল অভিনেত্রী সানাইকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছিল পুলিশ। পরে মুচলেকা নিয়ে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর  অশ্লীল শর্ট ফিল্মের ভিডিও বানানোর দায়ে ইউটিউব চ্যানেল মর্ডান ভাদাইমা সংশ্লিষ্ট তিনজনকেও ডেকে আনে পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট। আর অশ্লীল ভিডিও ইউটিউবে ছাড়বেন না বলে মুচলেকা দিয়ে ক্ষমা চেয়ে পার পেয়েছেন এই ইউটিউবারা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহারের সুস্পষ্ট আইন এবং আইনের সঠিক ব্যবহার করতে হবে। কেবল ডেকে এনে সতর্ক করলে সাময়িক সচেতনতা হয়ত সৃষ্টি হবে কিন্তু পুরোপুরি বন্ধের জন্য নীতিমালা তৈরি করতে হবে।

প্রযুক্তিবিদ তানবির জোহা বলেন, ইউটিউবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে উলটাপালটা নিউজ দেখা যাচ্ছে। যত বেশি ভিউ, তত বেশি টাকা। এজন্য বিভিন্ন ধরনের ট্রোল, প্র্যাঙ্ক ভিডিও তৈরি করা হয়। এসব বন্ধের জন্য অনলাইন ভিডিও এবং অনলাইন মার্কেটিং কন্টেন্ট ই-কমার্সের জন্য একটি জাতীয় নীতিমালা প্রয়োজন। এজন্য সরকার, এনজিও, সম্পূরক অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর একসঙ্গে কাজ করতে হবে। অন্যদিকে প্র্যাঙ্ক ভিডিও সম্পর্কে কোনো নির্দেশনা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সঙ্গায়িত নেই। ফলে সামাজিক মাধ্যমে অশালীন কন্টেন্ট বেড়েই চলছে।