শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

রাজধানীর বিকল্প পানির উত্স হতে পারে মেঘনা নদী

আপডেট : ২১ আগস্ট ২০১৯, ২২:১১

রাজধানী ঢাকাবাসীদের বিকল্প পানির উত্স হতে পারে মেঘনা নদী। পরিকল্পিতভাবে দূষণ রোধ করে নগরবাসীর ৪০ ভাগ মানুষের বিশুদ্ধ পানির উত্স হতে পারে মেঘনা। যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া না হলে, এই নদীর পানিও আগামী পাঁচ বছরে আরো দূষিত হয়ে পান অযোগ্য হয়ে পড়তে পারে। মেঘনা নদী দূষণ রোধে বছরে বাড়তি সাড়ে ১৭ কোটি ডলার ব্যয় করতে হবে বলে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ‘প্রটেকটিং দ্য মেঘনা রিভার- এ সাস্টেনেবল ওয়াটার রিসোর্সেস ফর ঢাকা’ শিরোনামে গতকাল প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে এমনটি উল্লেখ করা হয়েছে। ঢাকা ওয়াসার কারিগরি সহায়তার অংশ হিসেবে জাইকার সহায়তায় এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দূষণ ও অপরিকল্পিত উন্নয়নের ফলে রাজধানীর পানির উত্সগুলো ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে। রাজধানীতে দুই কোটি মানুষের জন্য প্রতিদিন প্রয়োজন ২৪৮ কোটি ৫০ লাখ         লিটার পানি। ২০০০ সালেও প্রতিদিন প্রয়োজন হতো ১৫৫ কোটি লিটার পানি। অর্থাত্ গেলো দুই দশকের কম সময়ে ৬২ শতাংশ বেড়েছে রাজধানীর পানির চাহিদা। পানির চাহিদার ৮৭ ভাগ মেটানো হচ্ছে ভূগর্ভস্ত উেসর মাধ্যমে। ১৮৭৪ সালে সর্বপ্রথম বুড়িগঙ্গার পানি রাজধানীবাসীদের সরবরাহ শুরু করা হয়। কিন্তু কালের বিবর্তনে অতিমাত্রায় দূষিত হয়ে পড়ে বুড়িগঙ্গার পানি। সেই সাথে বালু নদী, শীতলক্ষ্যা এবং তুরাগের পানিও দূষিত হয়ে পড়ে। ফলে ভূগর্ভস্ত পানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে রাজধানী। এর ফলে প্রতিবছর দুই থেকে তিন মিটার নিচে চলে যাচ্ছে পানির স্তর। রাজধানী থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরেই রয়েছে মেঘনা নদী। অপেক্ষাকৃত কম দূষিত হওয়ায় রাজধানীর বিকল্প পানির উত্স হতে পারে মেঘনা।

বর্তমানে ঢাকা ওয়াসা পাইপলাইনের মাধ্যমে মেঘনা নদীর পানি রাজধানীতে আনতে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ২০২১ সালের মধ্যে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার লক্ষ্য রয়েছে। কিন্তু দূষণ রোধ করা সম্ভব না হলে মেঘনা নদীর পানিও একসময় ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়বে। শুধু পানিসম্পদই নয়, এই নদী জীববৈচিত্র্যের জন্যও বড়ো ভূমিকা রাখছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার বিলুপ্ত প্রজাতির ডলফিন, কচ্ছপ রয়েছে নদীটিতে। নদীতে বর্তমানে বছরে ১ কোটি ৫৬ লাখ ডলারের মাছ আহরিত হয়। মত্স্য আহরণ, নৌযোগাযোগ, পর্যটনসহ সবমিলিয়ে মেঘনা নদীর বাত্সরিক অর্থনৈতিক মূল্য প্রায় ১৮ কোটি ২৯ লাখ ৩৫ হাজার ডলার। টাকার অংকে প্রায় সাড়ে ১৩শ কোটি টাকা। নদীটি যে হারে দূষিত হচ্ছে তাতে ভবিষ্যতে নদীর জীববৈচিত্র্য হুমকিতে পড়তে পারে। নদীর যে অঞ্চলে দূষণের মাত্রা বেশি সেখানে ইতিমধ্যে মাছের প্রাপ্তি কমেগেছে। নদীর দুই তীরে গড়ে উঠা বিভিন্ন কল-কারখানর মাধ্যমেও দূষণ বাড়ছে। সবমিলিয়ে মারাত্মক দূষণের জন্য দায়ী ৮৭টি কারখানা চিহ্নিত করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এছাড়া শুধু নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী জেলায় নদীর দুই ধারে ২ হাজার গুচ্ছ কারখানা গড়ে উঠেছে। এজন্য নদী দূষণ রোধে প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। বিশেষ করে কারখানাগুলোকে পরিবেশবান্ধব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। মেঘনা নদীর পাশে দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠছে। ভৈরব ও মেঘনা সেতুর পাশে আটটি অঞ্চল চিহ্নিত করা হয়েছে যেখানে মূল উন্নয়ন কাজ করা হবে। এই অঞ্চলগুলো সরাসরি নদীর সাথে সম্পৃক্ত থাকবে। অর্থনৈতিক অঞ্চলে বর্জ্য পরিশোধন ব্যবস্থাসহ কারখানাগুলোকে পরিবেশবান্ধবভাবে গড়ে তুলতে হবে। এজন্য মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।