বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বরিশালে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে বিরোধে পাঠদান ব্যাহত

আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০১৯, ২২:৩৭

বছরের প্রায় ১০ মাস শেষ হয়ে গেলেও বরিশালের মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে ম্যানেজিং কমিটির বিরোধ নিয়ে দ্বন্দ্বে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। বোর্ড নিয়ন্ত্রণাধীন প্রাথমিক সমাপনী, জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেটসহ বিদ্যালয় সমাপনী পরীক্ষার মাত্র কয়েকদিন বাকি থাকলেও বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি, প্রধান শিক্ষক ও সাধারণ শিক্ষকদের দ্বন্দ্বে বিঘ্নিত হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা। বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের অধীন বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রায় দেড়শটিতে মামলা চলছে। মামলা ছাড়াও প্রভাবশালী ম্যানেজিং কমিটি ও শিক্ষকদের সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের বিরোধে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম।

শিক্ষাবিদ ও সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) বরিশাল জেলা সভাপতি প্রফেসর শাহ সাজেদা বলেন, পেশিশক্তির লোকজন ম্যানেজিং কমিটিতে থাকায় মামলা এবং অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষাব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। এ থেকে উত্তোরণে শিক্ষা বোর্ডের পাশাপাশি বিভাগীয় প্রশাসন কিংবা জেলা প্রশাসনের সরাসরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের শীর্ষ এক কর্মকর্তা জানান, রাজনৈতিক দলের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এসব বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটিতে প্রভাবশালীরা জড়িত থাকায় ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না। বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ইউনুস বলেন, ম্যানেজিং কমিটির বিরোধে মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে বিদ্যালয়ের পাঠদান ও উন্নয়ন মুখ থুবড়ে পড়ে। এছাড়া বোর্ডের কাছে যেসকল অভিযোগ আসে তা প্রবিধান অনুযায়ী দ্রুত সমাধান করে দেওয়া হয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নগরীর ঐতিহ্যবাহী জগদ্বীশ স্বারসত বালিকা বিদ্যালয়ে তিন বছর ধরে ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে বিরোধ চলছে। শ্লীলতাহানিসহ নানান অভিযোগে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের নারী শিক্ষিকাগণ এক ডজন সাধারণ ডায়েরি করেছেন। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মানববন্ধন ও বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে এক বছর ধরে। সর্বশেষ ২০১৮ সালে তত্কালীন জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমানকে আহ্বায়ক করে একটি অ্যাডহক কমিটি গঠিত হয়। ঐ কমিটির মেয়াদ শেষ হলে চলতি বছরে একটি অ্যাডহক কমিটি গঠিত হয়। অ্যাডহক কমিটির আহ্বায়ক মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক কর্মকর্তা রাবেয়া খাতুন বিনা জানান, বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশনা মোতাবেক অডিট রিপোর্টে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ১০ লাখ টাকার বেশি গরমিল পাওয়া যায়। তিনি জানান, অ্যাডহক কমিটি কারো বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে না। তাই শত চেষ্টা করেও বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ফেরানো যাচ্ছে না। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা রোজিনা মমতাজ জানান, প্রধান শিক্ষক শাহ আলমের বিরুদ্ধে আর্থিক কেলেঙ্কারি, নারী শিক্ষিকাদের সঙ্গে অশালীন আচরণসহ নানান অভিযোগের প্রমাণ তদন্ত কমিটি পেলেও অদৃশ্য কারণে তিনি পার পেয়ে যাচ্ছেন। অ্যাডহক কমিটি গঠনের পর নিয়মিত বিদ্যালয় না আসায় এবং সহকারী প্রধান শিক্ষক পদ শূন্য থাকায় শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে।

২০১৮ সালে অবৈধভাবে কমিটি গঠন করা হয় উল্লেখ করে কড়াপুর পপুলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মো. সাইদুল ইসলাম প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষা অধিদপ্তরে অভিযোগ করেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পৃথক দুটি স্মারকে কমিটি বাতিল করে এবং মাউশিকে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক ফরিদ উদ্দিন ও তার সহযোগী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। কিন্তু পরবর্তীতে আদালতে মামলা করে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তকে স্থগিত রাখা হয়। এতে করে ভেঙে পড়েছে ঐ বিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা। ঐ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির এক ছাত্রীর অভিভাবক জানান, পূর্বের কমিটি বাত্সরিক ২৮০০ টাকার স্থলে বর্তমান কমিটি প্রায় ৭ হাজার টাকা আদায় করছে। বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি আনোয়ার হোসেন পলাশ জানান, দুই বছরের ব্যবধানে এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ৮০০ থেকে বর্তমানে ৩৬০ জনে নেমে এসেছে।

গত এপ্রিলে কাগাশুরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম ওপর হামলার ঘটনায় স্কুলটিতে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এ ঘটনায় মামলাও হয়। শিক্ষক শফিকুল ইসলাম জানান, ২০১৮ সালের অক্টোবরে ৬ মাসের জন্য অ্যাডহক কমিটি গঠিত হয়। কিন্তু পরবর্তীতে আর কমিটি গঠিত হয়নি। এতে বন্ধ রয়েছে নিয়মিত আর্থিক লেনদেন, স্থবির হয়ে পড়েছে বিদ্যালয়টির উন্নয়ন কার্যক্রম।