বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

রাঙ্গার ‘জন্ম নির্ণয় ন জানি’

আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০১৯, ২১:৫০

 

সমপ্রতি জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং সর্বোপরি জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন, যা তার মানসিক সুস্থতা নিয়ে সন্দেহের উদ্রেক করে। আর তিনি যদি মানসিকভাবে সুস্থই হন, তবে প্রশ্ন ওঠে তার ঔদ্ধত্য নিয়ে। গত রবিবার জাতীয় পার্টির একটি আলোচনা সভায় মশিউর রহমান রাঙ্গা যা বলেছেন তার চুম্বক কথা হলো—‘এরশাদ ছিলেন গণতন্ত্রের ধারক, বাহক এবং বাংলাদেশে গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাকারী। যখন ১৯৮২ সালে উনি ক্ষমতা নিয়েছিলেন, এর আগে সাত্তার সাহেব ক্ষমতায় ছিলেন। সাত্তার সাহেব নিজেই টেলিভিশনে বলেছিলেন আমার মন্ত্রীদের বাসায় চোর ডাকাত পাওয়া যায়, আমি চালাতে পারছি না তাই এরশাদকে আমি ক্ষমতা অর্পণ করলাম।’

এইটুকু শুনে যে কোনো সচেতন পাঠক মুখ টিপে হেসে বলবেন—‘আস্তে কন হুজুর ঘোড়ায় হুনলে হাসবো!’ কিন্তু আমরা যারপরনাই বিস্মিত হই রাঙ্গার এরপরের বক্তব্যে। তিনি বলেছেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু যেদিন বাকশাল ঘোষণা করেন সেদিনই বাংলাদেশের সমস্ত গণতন্ত্র সমস্ত পত্রিকা কয়েকটি বাদে বন্ধ করে দিয়েছিলেন, সব কিছু তিনি স্থগিত করে দিয়েছিলেন, তাহলে সেটা কী গণতন্ত্র ছিল। ...বঙ্গবন্ধু গণতন্ত্রের জন্য অনেক কিছুই করেছেন সর্বশেষ উনিও গণতন্ত্রে লাস্ট পেরেকটা কিন্তু উনিই মেরে দিয়ে গিয়েছিলেন।’ এরপর রাঙ্গা বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেছেন, ‘স্বৈরাচারের আরেক রূপ হলো এই সময়ের গণতন্ত্র। স্বৈরাচার এরশাদ না। বেগম খালেদা জিয়া স্বৈরাচার, শেখ হাসিনা স্বৈরাচার।’

কিছু কিছু কথা আছে যা শুনলে হুমায়ূন আহমেদের ভাষায় বলতে হয়—আক্কেলগুড়ুম অবস্থা। রাঙ্গার কথা শুনে বাংলাদেশের যে কারো আক্কেলগুড়ুম তথা হতভম্ব দশা হতে বাধ্য। কত বড়ো ধৃষ্টতা রাঙ্গার, তিনি এরশাদের স্বৈরাচারী আলখাল্লা পরাতে চান জাতির পিতাকেও। রাঙ্গা কী করে বঙ্গোপসাগরের মতো বিশাল হূদয়তুল্য বঙ্গবন্ধুর জীবনকে একলাইনে তোতাপাখির মতো পাঠ করলেন পাকিস্তানি দোসরদের মতো করে? রাঙ্গা কি তবে এই ভূখণ্ডে জন্মগ্রহণ করেননি? উইকিপিডিয়া জানাচ্ছে, তার জন্ম ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলায়, ১৯৫৮ সালে। ১৯৭০-এ তার বয়স ছিল মাত্র ১২ বছর। পঁচাত্তরে ১৭। তিনি কি জাতির পিতার হিমালয়প্রতিম জীবনকে প্রকৃত অর্থে পাঠ করতে পেরেছেন পরবর্তী সময়ে? নাকি পাকিস্তানি প্রেতাত্মা রাঙ্গাকে রাঙিয়ে রেখেছে জীবনভর? তাই যদি হয়, তবে তার এ বক্তব্য দেশদ্রোহিতার শামিল!

রাঙ্গার মতো ঔদ্ধত্যপূর্ণ নেতাদের জন্মপরিচয়ের ক্ষেত্রে কবি আবদুল হাকিমের ভাষায় বলতে হয়—এদের ‘জন্ম নির্ণয় ন জানি’! তার মনে রাখা উচিত বঙ্গবন্ধু আর বাংলাদেশ সমার্থক। তিনি বাংলাদেশের জাতির পিতা এই দেশমাতৃকার স্থপতি নিয়ে এমন ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্য কোনো দুঃসাহসে উচ্চারণ করতে পারলেন?

মশিউর রহমান রাঙ্গা ক্ষমা চেয়েছেন বটে। তবে কিছু কিছু অপরাধ আছে যা ক্ষমাহীন। তিনি সেই ক্ষমাহীন অপরাধ করেছেন।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় আসীন হয়েছেন, এরশাদের মতো ক্ষমতা দখল করে নয়। সুতরাং রাঙ্গার বিচার হওয়া উচিত।

এম এইচ রহমতউল্লাহ

রামপুরা, ঢাকা