শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

জীবন গঠনে পারিবারিক শিক্ষা

আপডেট : ০১ মার্চ ২০২১, ২১:৫১

সন্তান প্রতিপালন আজকাল মা-বাবার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর সন্তানকে যথাযথ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা আরো কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ আজকাল ছেলেমেয়েরা একটু বেশি স্বাধীনতা চায়, আর তারা একটু বেশি সংবেদনশীল। তাই খুব সহজেই ঘটে যায় নানা বিপত্তি। আসলে একটি শিশুর প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্র হচ্ছে তার পরিবার। বড় হয়ে সে যে পরিবেশেই শিক্ষা নিতে যাক না কেন পারিবারিক শিক্ষার একটা প্রভাব তার মধ্যে সবসময় পরিলক্ষিত হয়। তাই প্রত্যেক মা-বাবারই সন্তান প্রতিপালনে কিছু কথা মেনে চলা উচিত।

একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে সন্তানকে গড়ার জন্য বাবা-মা ও পরিবারের অন্য সদস্যদেরই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হয়। সন্তানকে মাঝেমধ্যে কাছে কিংবা দূরে কোথাও প্রকৃতির সান্নিধ্যে নিয়ে যাওয়া উচিত। ভ্রমণেও শিশু অনেক কিছু শিখতে পারে। বর্তমান শহুরে সমাজে অনেক পরিবারের অভিভাবক বাবা-মা উভয়ই নিজ কর্মস্থলে ব্যস্ত থাকেন। ফলে তাদের কাছ থেকে যতটুকু সময় সন্তানের প্রাপ্য তা থেকে সে হয় বঞ্চিত। তাই কার্টুন ছবি দেখে আর মোবাইলফোনে গেম খেলে শিশু সময় কাটায়। এতে তার মস্তিষ্ক ধারণ করে যতসব উদ্ভট চিন্তা।

একাডেমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পড়ালেখা করে শিক্ষিত হওয়া যায়, মেধাবী হলে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে দেশের সীমানা পেরিয়ে ভিনদেশেও নাম কুড়ানো যায়; কিন্তু পরিবার থেকে সুশিক্ষা না পেলে একসময় সব শিক্ষাই ম্লান হয়ে যায়। প্রত্যেক মানুষের সবচেয়ে বেশি যা প্রয়োজন তা হলো পারিবারিক নৈতিক শিক্ষা। কারণ সভ্যতা, ভদ্রতা, নৈতিকতা, কৃতজ্ঞতাবোধ, শ্রদ্ধা, স্নেহ, পরোপকার, উদার মানসিকতা—এগুলো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে খুব বেশি অর্জন করা যায় না। বাবা-মাকে সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বসুলভ আচরণ করলে সন্তান সবকিছুই বাবা-মায়ের সঙ্গে শেয়ার করবে। যে সন্তান শেয়ার করতে শেখে সে কখনো আদর্শহীন হয় না। ঘরের পরিবেশ ভালো হলেই যে সন্তান সভ্য-ভদ্র ও আদর্শবান হবে তা ঠিক নয়। সন্তান কাদের সঙ্গে মেশে, বন্ধুত্ব করে সেদিকেও দৃষ্টি রাখতে হয়। মোটামুটি পাঁচ-ছয় বছর বয়স থেকেই শিশুর মধ্যে নিজস্ব সম্মানবোধ সৃষ্টি হয়। ছোট থেকেই সন্তানের সামনে সুশিক্ষার বিষয়ে আলোচনা এবং তার মধ্যে তা চর্চার প্রচলন ঘটাতে হয়। শিক্ষিত হওয়ার জন্য যেমন একাডেমিক শিক্ষার প্রয়োজন, তেমনি সন্তানকে সুস্থ মানসিকতার ধারক-বাহক করার জন্য সভ্যতা-ভদ্রতা-নৈতিকতা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার মতো মননের অধিকারী করে গড়ে তুলতে হয়। মোদ্দা কথা, বিচক্ষণ বাবা-মা বা অভিভাবকদের সন্তানরাই সমাজে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে।

মো. জিল্লুুর রহমান

সতিশ সরকার রোড,

গেণ্ডারিয়া, ঢাকা