আমি একাত্তর সালে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম। তখন আমি কিশোরগঞ্জের বনগ্রাম আনন্দকিশোর উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্লাস নাইনের ছাত্র। আমি ও আমার বড় ভাই মো. আফতাবউদ্দিন বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ শুনে উদ্বুদ্ধ হয়ে একদল যুবকের সঙ্গে দেশত্যাগ করি। পরে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তোড়া ক্যাম্পে ২৮ দিন প্রশিক্ষণ নেই। সেখান থেকে দুই ভাই দুই দলের সঙ্গে দেশে ঢুকি। আমার গ্রুপের কমান্ডার ছিলেন মো. আ. রশিদ। আমাদের দলটি ধরমপাশা, বালিয়াবাড়ি, টেকেরঘাট, গচিহাটা প্রভৃতি স্থানে পাকসেনাদের সঙ্গে ভয়ানক সম্মুখযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। সেপ্টেম্বরে ভৈরব-ময়মনসিংহ রেললাইনে গচিহাটা রেলসেতুটি ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেওয়ার পর পাকসেনাদের সঙ্গে গুলি বিনিময়ের সময় আমাদের দু’জন সহযোদ্ধা নিহত হন এবং আমার ডান পায়ে গুলি লাগে। ১৭ ডিসেম্বর আমাদের দলটি কিশোরগঞ্জ শহরে প্রবেশ করে এবং পরদিন দলের সবাই কিশোরগঞ্জ ডাকবাংলোতে অস্ত্র জমা দেই। পঁচাত্তরের পট পরিবর্তনের পর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির ভয়ে আমাকে গ্রামের বাড়ি ছাড়তে হয়। চাকরিসূত্রে জেলার বাইরে থাকায় আমি সময়মতো তালিকাভুক্তির জন্য আবেদন করতে পারিনি। গত কয়েকমাস ধরে মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য আবেদন-নিবেদন ও দৌড়াদৌড়ি করছি। কিন্তু কোনো কূল-কিনারা পাচ্ছি না। মৃত্যুর আগে আমি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি চাই। এ ব্যাপারে মাননীয় মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
মো. ছমিরউদ্দিন
বনগ্রাম, কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ