শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

নিজেকে ভালো রাখার দায়িত্ব নিজেরই

আপডেট : ১৮ নভেম্বর ২০১৯, ২২:১৪

ইশরাত জাহান ইরা

কিচ্ছু ভালো লাগে না, জীবনটা কেমন যেন, জীবনে শান্তি নেই, সবকিছুই আছে, তবুও কেমন যেন খাপছাড়া খাপছাড়া ভাব, মনে হয় আমি মরে গেছি, জীবনে আর সুখ পাওয়া হলো না, মন খারাপ কিন্তু কেন মন খারাপ তার কারণ জানি না, রেজাল্ট ভালো তাও প্রতিদিন এটা ভেবে নিজেকে চৌদ্দ বার সমাধিস্থ করি যে আমার দ্বারা কিছু হবে না, এই চিন্তাগুলোর একটাও যদি আপনার মাথায় সবসময়ের জন্যই ঘুরপাক খায় তাহলে বুঝবেন যে আসলে সমস্যা কোনো কিছুতেই নেই, সমস্যাটা আপনার নিজের মধ্যেই।

সুখ সম্বন্ধে গৌতম বুদ্ধের একটি জনপ্রিয় উক্তি হচ্ছে—তিনি বলেছিলেন যে, ‘সুখের কোনো উপায় নেই, সুখীতে থাকাই তার একমাত্র উপায়’ এবং তিনি এটাও বলেন যে, ‘শান্তি মনের ভেতর থেকে আসে, তাই সেটা ছাড়া শান্তি অনুসন্ধান করো না’ পরপর এই দুইটা বাক্য বিশ্লেষণ করলে এটা পাওয়া যায় যে, আমাদের পারিপার্শ্বিকতা ছাড়াও সুখ-শান্তির একটা বড়ো এবং প্রধান জায়গা হচ্ছে মানুষ নিজে। তাকে কেন্দ্র করেই যাবতীয় সবকিছু ঘুরপাক খায় এবং আপনার ভালো থাকা বা না থাকাটাও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আপনার নিজের সঙ্গেই সম্পর্কযুক্ত।

‘মানুষ যতটা সুখী হতে চায়, সে ততটাই হতে পারে। সুখের কোনো পরিসীমা নেই। ইচ্ছে করলেই সুখকে আমার আকাশ অভিসারী করে তুলতে পারি’ আব্রাহাম লিংকনের এই উক্তির দ্বারা তিনিও অকপটে গৌতম বুদ্ধের দিকেই গিয়েছেন।

এই সব কথার বিশ্লেষণে একটা অর্থই দাঁড়ায় যে, মানুষ চাইলে সুখী হতে পারে। কিন্তু এখানে চাওয়ার বিষয়টি অতীব জরুরি। অভাবকেন্দ্রিক বা পারিপার্শ্বিকতা কেন্দ্রিক মনের অসুখ আমাদের নিত্যদিনের ব্যাধিতে পরিণত হয়ে যায় তা শুধু আমাদেরই অযত্নের ভুলে। এবং এই ব্যাধিগ্রস্ত মন হাজারটা পাওয়ার এবং থাকার মাঝে শুধু না থাকাটাই খোঁজে। কাচের গ্লাসের ৩০ শতাংশ পানি শূন্য আছে এটাই দেখতে পায় এবং খুব স্বাভাবিকভাবেই বাকি ৭০ শতাংশ দৃষ্টিগোচর হয়ে যায় আর কোনোভাবে তা নজরে আসলেও অনর্থক হিসাবেই রয়ে যায়। এই অপ্রাপ্তি বোধের সমষ্টি পরবর্তীকালে আর সরল থাকে না, তা অতীব এবং জটিল ও ভয়াবহ রূপে প্রকাশিত হয়। হতাশা, অবসাদ একসময় জীবনের মায়াটাকেও তুচ্ছ জ্ঞান করে দেয়। এছাড়াও মানসিক বিকৃতির পাশাপাশি তা শারীরিক অসুখেরও নামান্তর ঘটায়।

এখন এর থেকে কি বাঁচবার উপায় কি আদৌ নেই? আছে এবং উপায়টা সদা বিরাজমান। সকলের সঙ্গে সৌহার্দপূর্ণ আচরণ এবং প্রথমদিকে জোর করে হলেও হাসি-খুশি থাকার ক্ষুদ্র প্রয়াস পুড়ে যাওয়া ছাইয়ের মাঝে চারাগাছের উপস্থিতি আনে। মানুষের সঙ্গই পারে মানুষের দুর্দশা দূর করতে এবং ৮০ বছরের শরীরেও ১৮ বছরের তারুণ্য আনতে।

n লেখক :শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়