শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

শান্তির অপেক্ষায় পৃথিবীর মানুষ

আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ২১:৫৬

বছরের পর বছর ধরে ফিলিস্তিনের জনগণ ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলের দ্বারা নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়ে আসছে। জাতিসংঘসহ সমগ্র বিশ্ব সম্প্রদায় ফিলিস্তিন ইস্যুতে তেমন কোনো কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেনি। বরং প্রতি বছর নতুন নতুন বসতি স্থাপনের মাধ্যমে হাজার হাজার নিরীহ ফিলিস্তিনি জনগণকে উদ্বাস্তুতে পরিণত করা হয়েছে। আমরা অসহায়ের মতো তাকিয়ে দেখা ছাড়া তাদের জন্য কিছুই করতে পারিনি। ধীরে ধীরে একটি জাতি তাদের আবাসভূমি থেকে উচ্ছেদ হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। ফিলিস্তিনের জনগণ মোটেও ভালো নেই। এক দুঃসহ বেদনার মধ্য দিয়ে তাদের দিন অতিবাহিত হচ্ছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন আইন বেশ কঠোর করা হয়েছে। ইউরোপের অনেক দেশও মার্কিনিদের অনুসরণে তাদের অভিবাসন নীতিতে কঠোরতা আরোপ করেছে। এদিকে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে অশান্তির আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। সিরিয়া, ফিলিস্তিন, ইয়েমেন, ইরাকসহ পুরো মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ বিভীষিকার রূপ নিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিন গুলি এবং বিমান থেকে ফেলা বোমার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে অগণিত নারী, শিশু এবং নিরীহ মানুষ। সেখানে গ্রামের পর গ্রাম আগুন দিয়ে পুড়িয়ে নিঃশেষ করে দেওয়া হয়েছে। জীবন নিয়ে বেঁচে থাকার মতো অবস্থাও সে সব দেশে নেই। তাই জীবন বাঁচানোর তাগিদে মানুষ হন্য হয়ে ছুটছে। নদী, জঙ্গল, সমুদ্র পাড়ি দিয়ে তারা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটে যাচ্ছে দিগিবদিক। কিন্তু তাদের আশ্রয় দেওয়ার মতো জায়গা যে নেই পৃথিবীতে!

অভিবাসন আইনের কঠোর প্রয়োগের ফলে এক দেশ থেকে আরেক দেশে পিপীলিকার সারির মতো ছুটে বেড়াচ্ছে মানুষ। কিন্তু কোথাও তাদের জন্য শান্তি এবং নিরাপত্তা নেই। মানুষ জলে ডুবে মরছে, ক্ষুধায় কাতর হয়ে মারা পড়ছে মরুভূমিতে।

পৃথিবীর কোনো প্রান্তের মানুষই স্বস্তিতে নেই। প্রায় সবার বুকেই কোনো না কোনো ক্ষত জমাট বেঁধে আছে। আমরা প্রায়শই আমাদের ক্ষমতার প্রয়োগ করতে গিয়ে বাড়াবাড়ি করে ফেলি। আর এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সমাজের নিম্ন পর্যায়ের মানুষেরা। পৃথিবীতে ন্যায়বিচারের বড়ো অভাব। বহু রক্ত আর ত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া আমাদের এ দেশের মানুষও খুব একটা শান্তিতে নেই। প্রশাসনে লাগামহীন দুর্নীতি আমাদের হতাশায় নিমজ্জিত করেছে। যাদের দায়িত্ব ছিল দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার তারাই দুর্নীতির মাধ্যমে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি করে প্রতিনিয়ত দেশকে পেছনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দেশপ্রেমের ছবক নেওয়া ছাড়া এই সমস্যা থেকে উত্তরণের কোনো পথ দেখি না।

আমাদের এই পৃথিবীতে শান্তি ফিরিয়ে আনতে হবে। বৃহত্ শক্তিগুলো নিজেদের স্বার্থে পৃথিবী জুড়ে যে সমস্যাগুলো জিইয়ে রেখেছে তার আশু সমাধান করতে হবে। পৃথিবীতে জাতিসংঘ নামক একটি বিশাল প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব রয়েছে। তাদের কাজ ছিল বিশ্বের বুকে মানুষের জন্য শান্তি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু আমরা সবাই জানি, জাতিসংঘ একটি বিবৃতিসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান ছাড়া আর কিছুই নয়। বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জাতিসংঘকে সবচেয়ে বড়ো ভূমিকা পালন করতে হবে। বিশ্ববাসীকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। অন্যায়কে প্রশ্রয় দিলে তা এক সময় সিন্দাবাদের ভূতের মতো ঘাড়ের ওপর চেপে বসে। তবে পৃথিবীর তরুণরা আজ জেগে উঠতে শুরু করেছে। তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে এবং বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তরুণদের এ জাগরণ আমাদের আশাবাদী করে তোলে। হয়তো অচিরেই এই পৃথিবী থেকে অশান্তি দূর হয়ে শান্তি ফিরে আসবে। বিশ্বের নানা প্রান্তের শান্তিকামী মানুষের এটাই তো একমাত্র চাওয়া।

n লেখক :শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়