বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ট্রাম্পকে অভিশংসনের উদ্যোগ কংগ্রেসের কিন্তু তার তাত্পর্য কী

আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০১৯, ২১:৪২

আনুশে হোসেন

ক্যাপিটল হিলে রাজনৈতিক নাটক এক চরম আকার ধারণ করেছে। মার্কিন সরকারের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী নারী হাউজ স্পিকার ন্যানসি পেলোসি ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিশংসনের জন্য ডেমোক্র্যাট নেতাদের খসড়া তৈরি করতে আহ্বান জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার তিনি বলেছেন, ‘আজ আমি আমাদের চেয়ারম্যানকে অভিশংসনের জন্য খসড়া তৈরির প্রস্তুতি নিতে বলেছি। গত কয়েক সপ্তাহে দুইটি কংগ্রেসের কমিটি অভিশংসনের ব্যাপারে শুনানি করেছে। পেলোসি বলেছেন, এই সাক্ষী-শুনানিতে প্রমাণ হয়েছে যে, প্রেসিডেন্টের পদক্ষেপগুলো চরমভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। তিনি বলেছেন, ‘ঘটনাবলি নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। প্রেসিডেন্ট তার ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। তিনি আমাদের জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা রাখেননি।’

দেখে বিস্মিত হতে হয় যে, যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি দেশ এমন এক ধরনের কলঙ্কজনক বিষয়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে যা সাধারণত তৃতীয় বিশ্বের জনগণই দেখতে অভ্যস্ত। ভেবেছিলাম আমি নিজে বুঝি বিস্মিত হওয়ার ঊর্ধ্বে উঠে গেছি; কিন্তু একজন বাংলাদেশি হিসেবে আমার কাছে এটা অবিশ্বাস্য মনে হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট তার সুস্পষ্ট দুর্নীতির প্রমাণ থাকার পরও কী করে এতটা নির্বিকার থাকেন।

কিন্তু প্রশ্ন হলো—ইমপিচমেন্ট বা অভিশংসনের প্রকৃত মানে কী? যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশেও অধিকাংশ মানুষ মনে করে, অভিশংসন মানেই হলো সঙ্গে সঙ্গে প্রেসিডেন্টকে তার অফিস থেকে অপসারণ। বিষয়টি সেরকম না। স্মরণ করা যেতে পারে যে, ১৯৯০-এর দশকে বিল ক্লিনটনকেও অভিশংসিত হতে হয়েছিল; কিন্তু দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নয়।

পেলোসি সিএনএন টাউন হলে শ্রোতাদের সামনে বলেছেন, ‘আমি সত্যি সত্যি বিশ্বাস করি যে, আমাদের গণতন্ত্রকে সুরক্ষা ও নিরাপদ করার সময় এসেছে। তিনি আরো স্মরণ করিয়ে দেন যে, ২০০৮ সালে তার প্রথম স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় তিনি ইরাক প্রশ্নে প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের বিরুদ্ধে ডেমোক্র্যাটদের প্রচেষ্টায় বাধা প্রদান করেন।

কিন্তু এই দফা পেলোসির কাছে এটা একটা ইস্যু। ক্লিনটন এবং নিক্সনের পর আমেরিকার ইতিহাসে তৃতীয় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অভিশংসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যদিও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিশংসিত হবেন বলে মনে হয় না। কারণ যুক্তরাষ্ট্র সিনেট রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে। এখন পর্যন্ত তারা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে আসছেন; কিন্তু কোনো সন্দেহ নেই যে, সুপার পাওয়ার হিসেবে আমেরিকার ভাবমূর্তি বিশ্বব্যাপী ক্ষুণ্ন হবে এবং এর প্রভাব দীর্ঘকাল থাকবে।  ট্রাম্পকে অভিশংসিত করার ব্যাপারে খসড়া তৈরির ঘোষণার বিষয়ে পেলোসি বলেছেন, আমাকে বলতে হচ্ছে যে, আজকের দিনটি ঐতিহাসিক।

আমেরিকার সবচেয়ে ক্ষমতাশালী নারী যখন এমন কথা বলেন, তখন সেটা আমাদের কান দিয়ে শোনা দরকার।

(লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত)

n লেখক :যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি সাংবাদিক, নারী অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ