শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

কলকাতার পেঁয়াজ কড়চা

আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০১৯, ২১:৫১

সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত

কলকাতার পাইকারি বাজারে ক’দিন আগে পেঁয়াজের দাম এক লাফে অনেকটা বেড়ে গেছে। কলকাতার পাইকারি বাজারে এদিন ৪০ কেজি পেঁয়াজের বস্তার দাম ছিল ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকার মধ্যে। গুণমান ও আকার অনুযায়ী পেঁয়াজের দামের মধ্যে কিছু পার্থক্য থাকে। সে অনুযায়ী পাইকারি বাজারে এদিন প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৮৭ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছে। ব্যবসায়ী মহল জানাচ্ছে, অতীতে কখনো পেঁয়াজের দাম এতটা বাড়েনি। ভেন্ডার সংগঠনের নেতা ও রাজ্য সরকারের টাস্কফোর্সের সদস্য কমল দে জানিয়েছেন, কয়েক দিন আগে পাইকারি বাজারে সর্বোচ্চ দাম ২ হাজার ৮০০ টাকার আশপাশে চলে এসেছিল। তখনই অধিকাংশ খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা ছুঁয়ে যায়।

দু’দিন আগে পাইকারি বাজারে যে দাম ছিল, তাতে এখন খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কত  হবে, তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন প্রশাসনিক আধিকারিকেরাও। টাস্কফোর্সের সদস্যদের নিয়ে বৈঠকও হয়েছে, কিন্তু পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কোনো রাস্তা পাওয়া যাচ্ছে না। মহারাষ্ট্র থেকে পেঁয়াজের  সরবরাহ প্রচুর কমে গেছে। অন্যদিনের তুলনায় ২০ শতাংশ। সরবরাহও আসেনি। সরবরাহ বাড়লে তবেই দাম কিছুটা কমবে। কিন্তু মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ—সব জায়গাতেই পাইকারি বাজারে ৮০-৮৫ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। সেখানকার খুচরা বাজারে পেঁয়াজ কেজিতে ১০০ পার  করে যাচ্ছে। সম্প্রতি পাইকারি বাজারে ৪০ কেজি পেঁয়াজের বস্তার দাম কিছুটা কমে ২ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায় চলে  এসেছিল। অনেক খুচরা বাজারেও দাম কমার কিছুটা প্রভাব পড়ে। ছোটো সাইজের পেঁয়াজ অনেক  বাজারে ৮০ টাকা এবং বড়ো সাইজের ভালো মানের পেঁয়াজ ৯০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। কিছু খুচরা বিক্রেতা অবশ্য পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে পাইকারি বাজারে দাম কমার পরও ১০০ টাকার বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করে যাচ্ছিলেন। দু’দিন আগে অধিকাংশ খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম  অল্প বেড়েছে। ছোটো সাইজের পেঁয়াজ ৯০ টাকার আশপাশে চলে এসেছে। কিন্তু এখন কী পরিস্থিতি দাঁড়ায়, এখন সেটাই দেখার বিষয়।

রাজ্য সরকারের সুফল বাংলার স্টলে অবশ্য এখনো ৫৯ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। সরকার  ভর্তুকি দেওয়ায় এই দামে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে। পাইকারি বাজারে দাম বাড়ালেও সুফল বাংলায় দাম স্থিতিশীল রাখা হচ্ছে। বিদেশ থেকে আমদানি করা প্রথম দফার ২০০ টন পেঁয়াজ ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে কলকাতায় পৌঁছাতে পারে। কিন্তু ঐ পেঁয়াজ চাহিদা মেটানোর পক্ষে খুবই কম। সুফল বাংলার স্টলের বাইরে খুব বেশি জায়গায় দেওয়া সম্ভব হবে না বলে মনে করা হচ্ছে। দ্বিতীয় দফার আমদানি করা পেঁয়াজ আসতে জানুয়ারি মাস পড়ে যাবে। তার  অনেক আগেই কিছুদিনের মধ্যে মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটক থেকে নতুন পেঁয়াজ আসতে শুরু করবে বলে ব্যবসায়ী মহলের আশা। সে রকম ইঙ্গিতই ঐ রাজ্যগুলো থেকে আসছে। নতুন পেঁয়াজ বেশি পরিমাণে এলেই কমবে দাম। পাইকারি বাজারে ৪০ কেজি পেঁয়াজের বস্তার দাম উঠেছে ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকা। তা-ও পাওয়া যাচ্ছে না। রাজ্য সরকার সুফল বাংলার দোকানে সস্তার পেঁয়াজ জোগানে নিজেরাই কিনছে ১০২ টাকা কেজি দরে। তবে বিক্রি করা হচ্ছে ৫৯ টাকা কেজি দরেই।

পোস্তাসহ শহরের বেশ কয়েকটি নামি বাজারে বিক্রেতাদের কাছে আলু, আদা, রসুন রয়েছে, কিন্তু  নেই পেঁয়াজ। দামের জন্য অধিকাংশ বিক্রেতা পাইকারি বাজার থেকে পেঁয়াজ তোলেননি। কেউ  কেউ দুই-তিন দিন আগেকার তোলা পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ১২০-১৩০ টাকা কেজি দরে। কারো কাছে পাঁচ কেজি বা কারো কাছে তিন কেজি পেঁয়াজ পড়ে রয়েছে। সেটা শেষ হলেই পেঁয়াজ বিক্রিতে তারা  আর নেই। অর্থাত্, টাস্কফোর্সের বেঁধে দেওয়া ৮০ টাকা দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারছেন না, যার ফলে বিক্রি বন্ধ রেখেছেন।

পাস্তো বাজার পেঁয়াজ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন ও শিয়ালদহের কোলে মার্কেট ট্রেডার ওয়েলফেয়ার  অ্যাসোসিয়েশন এই সংকটের সঠিক বাখ্যা দিতে পারেনি। দুই সংগঠনের কর্তা অভিজিত বর্ধন ও  দিলীপ রাউতের কথায়, কেন এই সংকট তা পরিষ্কার নয়। নাসিক বা দক্ষিণের রাজ্য থেকে পেঁয়াজ  আসছেই না। শুক্রবার থেকে এই সংকট আরো বেড়েছে। যদিও তার কয়েক দিন আগেই নাসিকের  নতুন পেঁয়াজ কলকাতার বাজারে এসেছিল। তাই দাম কমবে বলেই মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু এখন  ফের যে-কে-সেই। পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন্দ্রীয় সরকার বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির কথা বললেও তা এখনো হয়নি?

এই লেখা পাঠানোর সময় খবর এসেছে, সোনা বাজারে পেঁয়াজের দাম ১৫০ টাকা কেজি। পশ্চিমবঙ্গের কলাকাতাসহ প্রায় ৫০ হাজার তেলেভাজা বিক্রেতার মাথায় হাত। কলকাতার অফিসপাড়াসহ সর্বত্র তেলেভাজা বিক্রি করে সংসার চালায় কয়েক লাখ মানুষ। বেকার সমস্যা দূর করার জন্য রাজ্য সরকার তেলেভাজা বিক্রির ওপর জোর দিয়েছিল। এখন তাদের মাথায় হাত।

n লেখক :পশ্চিমবঙ্গের প্রবীণ সাংবাদিক