শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্প ও পরিকল্পনা

আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ২১:২৪

মাহমুদুর রহমান মানিক

স্বাধীনতার পূর্বে আমাদের দেশ মূলত হিন্টারল্যান্ড হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু স্বাধীনতার পরপরই ছোটো এই ভূখণ্ডটি তার বিভিন্ন সম্ভাবনা ও অর্থনৈতিক মুক্তির পথ নিয়ে পৃথিবীর বুকে জানান দিয়ে ওঠে। ছোটো একটি ভূখণ্ড কিন্তু বাংলাদেশের পরতে পরতে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। রয়েছে সরকারি-বেসরকারি প্রায় হাজারখানেক পর্যটন কেন্দ্র। এর মধ্যে রয়েছে ১৫৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, সমুদ্র কন্যা কুয়াকাটা, প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন, ইকোট্যুরিজমের সোনার খনি ৬ হাজার ১৭ বর্গমাইলের সুন্দরবন, পার্বত্য অঞ্চলের নয়নাভিরাম পাহাড় পর্বত, দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলে জাফলং, বিছনাকান্দি, চা-বাগান, হামহাম ও মাদবকুণ্ড জলপ্রপাত, টাঙ্গুয়ার হাওর, লাওয়া ছড়া সোয়াম্প ফরেস্ট, বিরিসিরি, সুসংদুর্গাপুর, সীতাকুণ্ডু ইকোপার্ক এছাড়াও ঐতিহাসিক মহাস্থানগড়, সোমপুর বিহার, কান্তজিউ মন্দির, আতিয়া জামে মসজিদ, ষাটগম্বুজ মসজিদ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় ৪০ থেকে ৫০ লক্ষ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জীবিকানির্বাহের জন্য পর্যটন শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল এন্ড ট্যুরিজম কাউন্সিল বলেছে ২০২৩ সাল নাগাদ বাংলাদেশে পর্যটন শিল্প প্রায় ১৭ লাখ ৮৫ হাজার প্রত্যক্ষ ও ৩৮ লাখ ৯১ হাজার পরোক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে যা মোট কর্মসংস্থানের ৪.২ ভাগ। ২০১২ সালেও এ শিল্পে জড়িত ছিল মাত্র ১৩ লাখ মানুষ। ২০১০ সালে বর্তমান সরকারের পর্যটন পরিকল্পনা ও আইন প্রণয়নের ফলে দ্রুত এ শিল্প এগিয়ে যাচ্ছে। পর্যটন শিল্পের ব্যাপক চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে ১৯৭৪ সাল থেকে ন্যাশনাল হোটেল অ্যান্ড ট্যুরিজম  ট্রেনিং ইনস্টিটিউট দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করে চলছে।

বর্তমানে পৃথিবীর মোট জিডিপির ৫ শতাংশ আসে পর্যটন শিল্প থেকে। বাংলাদেশে আজ থেকে কয়েক বছর আগে জিডিপিতে পর্যটন খাতের অবদান ছিল মাত্র ২ শতাংশ কিন্তু বর্তমানে তা ১০ শতাংশের কাছাকাছি, ২০২৭ সালে অবদান হবে ১২ শতাংশ। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের আয় প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা। ধারণা করা হয় ২০৫০ সালের মধ্যে ৫০ ঊর্ধ্ব দেশের পর্যটক নিয়মিত বাংলাদেশ ভ্রমণে আসবে। তখন পর্যটন শিল্প খাত থেকে দেশীয় আয় ও কর্মসংস্থান কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। কারণ হিসেবে সমীকরণ বলে প্রতি একজন পর্যটকের জন্য চারটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়।    

বিশ্বব্যাপী যেহারে পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ছে তাতে ইউরোপ আমেরিকানদের আকৃষ্ট ও প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা দিতে পারলে বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবে। পাশাপাশি বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম ও গ্রহণযোগ্যতা দুটোই বাড়বে। পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নয়ন এবং ব্যবসা বাণিজ্য প্রসারিত হবে। সারা বিশ্বে প্রতি ১২ জনে একজন পর্যটক এবং এ সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। কাজেই এ শিল্পে রয়েছে অপার সম্ভাবনা। শুধুমাত্র এই শিল্পে পর্যটকদের নিরাপত্তা, উন্নত সেবা প্রদান এবং পরিবেশের রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক অগ্রগতির পাশাপাশি বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল করা সম্ভব। সঠিক পরিকল্পনা ও পর্যটনখাতে প্রতিবেশী দেশের তুলনায় অধিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করলে বাংলাদেশ হয়ে উঠতে পারে এশিয়ার সুইজারল্যান্ড।    

n লেখক :শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়