বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বই হোক তারুণ্যের হাতিয়ার

আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯, ২২:২৯

জগিবখ্যাত কবি ওমর খৈয়ম বলেছিলেন, ‘রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে আসবে কিন্তু একখানা বই হবে অনন্ত যৌবনা’। সৈয়দ মজতুবা আলী ‘বই পড়া’ প্রবন্ধের বিখ্যাত উক্তি ‘বই কিনে কেউ তো কখনো দেওলে হয়নি’। কিন্তু আজকের সমাজে বই এবং তরুণদের মধ্য গড়ে উঠেছে যোজন-যোজন ফারাক। এমনকি তারা কবি, লেখকদের কথা মানতে নারাজ। বইয়ের বদলে হাতে স্থান নিয়েছে নেশাদ্রব্য। এই ফারাক যে জাতির ভবিষ্যেক কতদূর নিয়ে যাবে তা নিয়ে জাতি আজ শঙ্কিত।

বইয়ের সঙ্গ যে আজকের যুবসমাজ পরিত্যাগ করেছে তা অন্তত নিশ্চিত। ফলশ্রুতিতে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিচ্যুতি বেড়ে চলছে লাগামহীনভাবে। এখন প্রশ্ন হলো, এই দায় কার? রাষ্ট্রের নাকি আমাদেরও ? যদি আমরা রাষ্ট্রের ঘাড়ে দায় চাপাই তবু্ও আমরা দোষ এড়াতে পারি না। আবার রাষ্ট্রীয় শিক্ষাব্যবস্থা যে সন্তোষজনক তা আমরা বলতে পারি না।

তরুণ সম্প্রদায় যে স্বেচ্ছায় মস্তিষ্কের উন্নতি ঘটাতে বইয়ের দ্বারস্থ হয় এমন নজির বিরল। তারা বইকে জীবনের পরম বন্ধু ভাবছে না। কেননা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের সুসময়ের বন্ধু সংখ্যা তো লাগামহীনভাবে বাড়ছে। অধিকাংশ সময় তারা ফেসবুক, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেনজারে কথোপকথনে, ভিডিও গেমস নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এ সমস্ত মাধ্যমগুলো তারুণ্যের মেধাবিকাশে বাধাপ্রদান করছে। তাছাড়া আমাদের নতুন প্রজন্ম নাশকতার ফাঁদে ধরা দিয়ে জীবনের হতাশার পথ গতিশীল করছে। বই তাদের জীবনের নিত্যসঙ্গী হয়নি। ফলে বেড়ে চলেছে খুন, ধর্ষণ ও নৈরাজ্য।

বই আজ জ্ঞানার্জনের জন্য নয়; পড়া হয় চাকরি অর্জনের জন্য। মহাজ্ঞানীদের রেখে যাওয়া জ্ঞানের ভাণ্ডারগুলো আজ মরচে পড়েছে লাইব্রেরিতে। একটা সময় ছিল যখন বই মেলাগুলোতে মানুষের উপচে পড়া ভিড় ছিল। এখন আর সেই ভিড় দেখা যায় না। বাজারে বইয়ের দোকানগুলোতে চাকরির বই এবং গাইড শোভা পেয়েছে। পুঁথিগত বিদ্যা অর্জনের জন্য দেশের অর্থনীতির পিলার হতে পারছে না শিক্ষিত যুবসমাজ। সার্টিফিকেট বাড়লেও সুশিক্ষিত কোয়ালিটিসম্পন্ন জনসমষ্টি ও জ্ঞানের অভাব বোধ করছে সমগ্র বাঙালি জাতি।

 তরুণদের অবশ্যই স্মরণে রাখতে হবে বই জীবনের পরম বন্ধু। বই হাসায়, কাঁদায়, বই কখনো কাউকে ফেলে যায় না। বই চিন্তারজগেক করে প্রসারিত, বাড়িয়ে দেয় জ্ঞান, আত্মবিশ্বাসে আত্মনয়ন ঘটায়, কল্পনাশক্তি ও বোধশক্তিকে করে জাগ্রত ; তাইতো একটা ভালো বই শত বন্ধুর সমতুল্য। আমাদের তরুণদের সময় এসেছে লাইব্রেরিতে অবগাহন করার। তার যদি ব্যাপ্তি ঘটে তবে জাতিকে চরম মূল্য দিতে হবে। তরুণদের মস্তকে থাকতে হবে জ্ঞানের মশাল। যার জ্ঞানশিখায় আলোকিত হবে সমগ্র সমাজ তথা দেশ ও জাতি। দেশকে ভালোবাসলে, নিজেকে ভালোবাসলে, জ্ঞানী হতে চাইলে, আলোকিত মানুষ হতে হলে, দেশকে গড়তে হলে, অবশ্যই তরুণদের বই পড়তে হবে। বই হয়ে উঠুক তারুণ্যের হাতিয়ার। বই আমাদের তরুণদের মনশ্চক্ষু খুলে দিক এমনটিই প্রত্যাশা।

n লেখক :শিক্ষার্থী, ইসলামী

বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া