শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

অটিস্টিক শিশুর জন্য করণীয়

আপডেট : ২৫ জানুয়ারি ২০২০, ২১:৩৫

তন্বী আক্তার

অটিজম হলো একটি মস্তিষ্ক স্নায়ুগত একটি অব্যবস্থা যার ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির যোগাযোগ দক্ষতা, সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তোলার সামর্থ্য এবং পরিবেশের প্রতি যথাযথভাবে সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা বাধাগ্রস্ত হয়। এতে বিশেষ করে সামাজিক বিকাশ ও ভাবের আদান-প্রদান রুদ্ধ হয়ে পড়ে। শিশু সীমাবদ্ধ জীবন- যাপন ও পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ করে থাকে। অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের সাধারণত তিন বছর বয়সের আগে শনাক্তকরণ কষ্টকর। যদিও শারীরিক উন্নতির সোপানসমূহের বিলম্ব্বিত হওয়া ছয় মাস বয়স থেকেই শুরু হয়। তাই একটু সচেতন হলেই ছয় মাস থেকে এক বছর বয়সের মধ্যেই বাবা-মা তার সন্তান অটিস্টিক কি না সেই সিদ্ধান্তে আসতে পারেন এবং সন্তানকে দ্রুত চিকিত্সা সেবার আওতায় নিয়ে আসতে পারেন।

অটিজম আক্রান্ত শিশুর পিতা-মাতা এক দুর্বিষহ জীবন যাপন করেন। প্রথমেই তারা আশাহত আর দিশাহারা হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় অভিভাবক চিন্তায় পড়ে যান কি করবেন বা কোন্ দিকে যাবেন। কিন্তু তাদের হতে হবে আত্মবিশ্বাসী আর সুদৃঢ় মনের অধিকারী এবং সেই সঙ্গে পিতা-মাতা বা অভিভাবককে অবশ্যই ধৈর্যশীল হতে হবে। কেননা, অটিস্টিক শিশুর জন্য পিতা-মাতাই সেরা চিকিত্সক এবং শিক্ষক। এই ক্ষেত্রে তারাই সবচেয়ে বড়ো সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।

এই শিশুদের দৈনন্দিন জীবন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ন্যূনতম মৌলিক কাজ শেখাতে হবে। যেটুকু কাজ তাকে দিয়ে হতে পারে ততটুকুই তাকে দিয়ে করাতে হবে। শিশুর পছন্দ, অপছন্দ, ভালোলাগার জিনিসকে গুরুত্ব দিতে হবে। এই বিষয়গুলোর একটা তালিকা করে পরিবারের সব সদস্য এবং স্কুলের শিক্ষক, প্রশিক্ষককে জানাতে হবে। এই জন্য পিতা-মাতাকে নিজের সন্তান সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। অটিস্টিক শিশু বিকাশের লক্ষ্যে পিতা-মাতা যদি নিম্নলিখিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে তাহলে ক্রমান্বয়ে শিশুর অবস্থার উন্নতি হবে।

ভাষা বিকাশের জন্য করণীয় :১. শিশুর সঙ্গে বেশি করে কথা বলা ২. শিশুর চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলা, কথা বলার সময়ে তার সমান্তরালে থাকা এবং যে কোনো কিছুতেই যৌথ মনোযোগ দিন। ৩. কিছু ছোটো ও সহজ শব্দ শেখানো ৪. শেখানো শব্দ প্রতিদিন পুনরাবৃত্তি করুন ও তার সঙ্গে নতুন শব্দ শেখানোর চেষ্টা করুন ৫. ছবি, বই, জিনিসপত্র ও শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দেখিয়ে জিনিস চেনানো ও কথা শেখান।

সামাজিক বিকাশ :১. সমবয়সি ছেলেমেয়েদের সঙ্গে মিশতে ও ভাবের আদান-প্রদান করতে শেখান। ২. শিশুকে সকল ধরনের সামাজিক পরিবেশে নিয়ে যাওয়া। যেমনঃ আত্মীয়স্বজনের বাসায়, সামাজিক অনুষ্ঠানাদিতে, খেলার মাঠে, পার্কে। ৩. শিশুকে প্রয়োজনীয় সামাজিক আচরণগুলো শেখান। যেমনঃ সালাম দেওয়া, করমর্দন করা, হাসির জবাবে হাসতে পারা, আনন্দ প্রকাশ করতে পারা, বিদায়সূচক হাত নাড়া।

স্বাবলম্ব্বিতার বিকাশ :১. শিশুকে তার বয়স ও বুদ্ধির মান অনুযায়ী ব্যক্তিগত দক্ষতা শেখান। যেমনঃ নিজ হাতে খাওয়া, দাঁত মাজা, জামা-জুতা পরা, চুল আঁচড়ানো, যথাস্থানে প্রসাব-পায়খানা করা, পেন্সিল-কলম দিয়ে আঁকিবুঁকি করাসহ দরকারি জিনিসগুলো ব্যবহার করা। ২. সাধারণ স্বাস্থ্যবিধিসহ হালকা ব্যায়াম করতে শেখান। পুষ্টিকর ও বৈচিত্র্যপূর্ণ খাবার খেতে অভ্যাস করুন।

শিশু যদি উত্তেজিত হয়ে যায় তবে তার কারণ দূর করতে হবে। এ সময় শান্তকরণের জন্য যা করণীয়ঃ ১. শিশুর আবেগ বুঝতে তথ্য সংগ্রহ করুন। ২.তার ওপর চাপ প্রয়োগকারী বিষয়গুলো চিহ্নিত করুন ৩. অপছন্দের বা জটিল কাজকে মডিফাই করুন।  ৪. পরিবেশকে শিশুর কাছে আরও বোধগম্য করতে সাহায্য করুন ।

অটিস্টিক শিশুর সঙ্গ কোনোভাবেই ভিন্নভাবে দেখা যাবে মা। বরং তার সঙ্গ ভালোভাবে উপভোগ করতে হবে। শিশুকে বোঝানো যাবে না যে, সে অন্যের চেয়ে আলাদা। বরং তাকে বোঝাতে হবে সে অন্য আর ১০ জনের মতোই প্রিয়। আর তাদের স্বাভাবিক বিকাশ এবং জীবন-যাপনের ক্ষেত্রে পিতা-মাতা সবচেয়ে মুখ্য ভূমিকা রাখতে পারেন।

n লেখক :শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়