শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

দূর হোক সকল আপদ, সড়ক থাকুক নিরাপদ

আপডেট : ২৫ জানুয়ারি ২০২০, ২১:৩৫

নাহিদ জুলফিকার

প্রতিটা দিন শুরু হয় মানুষের নতুন করে বাঁচার আশায়। প্রতিটা দিন কর্মচঞ্চল হয়ে উঠে আরো একটু ভালো থাকার জন্য, আরো একটু আনন্দের জন্য, পরিবারকে ভালো রাখার জন্য, বর্তমান ও ভবিষ্যেক ভালো রাখার জন্য। সেই স্বপ্নগুলো পূরণের জন্য বা জীবিকার তাগিদে মানুষকে প্রতিদিন যাতায়াত করতে হয় গাড়িতে, চলতে হয় সড়কে। কিন্তু আমাদের দেশে যে সড়ক ব্যবহার করে সে জীবন লড়াইয়ে যায়, যে পরিবহনে চড়ে সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জায়গায় যায় সে সড়কই মাঝে মাঝে সব লড়াই থামিয়ে দেয়, সেই পরিবহনই তার স্বপ্নগুলোকে দুমড়েমুচড়ে ফেলে। তাই সড়ক ও পরিবহন হয়ে উঠেছে এক মূূূূর্তমান আতঙ্কের নাম। বাচ্চা হাসিমুখে স্কুলে যাচ্ছে ফিরছে লাশ হয়ে, মেয়ে কলেজে গেলে ফিরল লাশ হয়ে, স্বামী চাকরিতে যায় ব্যবসার কাজে বাইরে যায় তার সুস্থভাবে বাসায় ফেরার গ্যারান্টি নেই। কি ভয়ংকর ব্যাপার! প্রত্যেক পরিবারের কাউকে না কাউকে বাহির হতেই হয় জীবিকা বা কর্মের সুবাধে এবং তার জন্য পুরো পরিবার থাকে দুঃশ্চিন্তায়।

‘নিরাপদ সড়ক চাই’ সংগঠনের হিসেব মতে বিগত ২০১৯ সালে ৪ হাজার ৭০২টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ৫ হাজার ২২৭ জন। যার মাঝে ২ হাজার ৬৬১ জন মারা গেল গাড়ি চাপায়। যা মোট মৃত্যু সংখ্যার প্রায় ৫০.৫৪ শতাংশ। সঙ্গে আহত হয়েছে প্রায় ৬ হাজার ৯৫৩ জন। এই আহত ও নিহত হওয়া ১২ হাজার ১৮০ জন যদি আট-নয় হাজার পরিবারের সদস্য হয় তাহলে এই আহত ও নিহতদের সঙ্গে প্রায় আট-নয় হাজার পরিবারের ২০-২৫ হাজার সদস্যও ক্ষতিগ্রস্ত হলো।

সরকারি আইন ও সমঝোতার মাধ্যমে অনেকে ক্ষতিপূরণ পেলেও মানুষের ক্ষতিপূরণ অর্থ দিয়ে কতটুকু করা যায় তা প্রশ্নবিদ্ধ। গাড়ি চাপা দেওয়া বা পথচারীর প্রাণ নেওয়ার অন্যতম কারণগুলো হচ্ছে— ওভারস্পিড, অনিয়ন্ত্রিত ট্যাকল, প্রতিযোগিতা, ফিটনেস না থাকায় ব্রেকফেইল, ও ড্রাইভারের নেশার আসক্তি। যার অনেকক্ষেত্রেই সচেতন থাকলে দুর্ঘটনা এড়িয়ে যাওয়া যায়।

এই লক্ষ্যে বর্তমান সরকার ২০১৮ সালে নতুন সড়ক আইন প্রণয়ন করে এবং বাস্তবায়নে কাজও শুরু করেছে। কিন্তু কতটুকু কার্যকর হয়েছে? বা আইন প্রয়োগের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে কি না তাও দেখার বিষয়। তাই অতি দ্রুত বিদ্যমান আইনেরই বাস্তবায়ন করতে হবে এবং পরিবহন চালকদের যথেষ্ট প্রশিক্ষণ ও সচেতন করতে হবে।

এছাড়া আইনের সঠিক প্রয়োগের জন্য উপযুক্ত পরিবেশও নিশ্চিত করতে হবে। যাতে টাকা বা ক্ষমতা দিয়ে মিথ্যে ফিটনেস লাইসেন্স নেওয়া, পর্যাপ্ত দক্ষতা ছাড়াই ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার মতো ঘটনাসমূহ বন্ধ হয়। ঢাকাসহ বড়ো বড়ো শহরগুলোতে যেখানে লোকজনের আধিক্য বেশি সেখানে ট্রাফিক আইনের লোকবল বাড়াতে হবে। ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলা, বা অবৈধ ট্যাকল, রাস্তায় বসানো বিভিন্ন সাইন মানা, সহকারী দিয়ে গাড়ি চালানো বন্ধসহ অন্যান্য সকল ট্রাফিক আইন মানার ওপর জোর দিতে হবে।

তারই সঙ্গে সঙ্গে দূরপাল্লার বাসগুলোতেও বেপোরায়া গতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গাড়ি চালানো, নেশা করে বা ঘুম ঘুম চোখে গাড়ি চালানো বন্ধ করতে হবে। পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখতে হবে। এছাড়া পথচারীদের সচেতন করার জন্যও উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কর্মশালা, লিফলেট, টিভি বা ডিজিটাল মিডিয়ার মাধ্যমে তাদের সচেতনতা বাড়াতে হবে। মোবাইল বা হেডফোন কানে নিয়ে রাস্তা পার হওয়া, ওভারব্রিজ বা জেব্রাক্রসিং থাকা সত্ত্বেও ব্যবহার না করার প্রবণতা বন্ধ করার ব্যবস্থা নিতে হবে।

সরকারেরও প্রয়োজনীয় স্থানে ওভারব্রিজ, জেব্রাক্রসিং ইত্যাদি তৈরি করতে হবে। রাস্তার সাইনগুলো যাতে সহজেই চোখে পড়ে এমন স্থানে রাখতে হবে। এই বছর সঠিক আইন প্রয়োগ, সচেতনতা ও উপযুক্ত ব্যবস্থার মধ্যে দিয়েই আমাদের আগামী দশকে সড়ককে নিরাপদ রাখার কার্যক্রম শুরু করতে হবে।

দিনশেষে সকল স্বপ্ন ঘরে ফিরুক, আর কোনো লড়াই যেন রাস্তায় ছিটকে না পড়ে তাই হোক আমাদের ও সরকারের অঙ্গীকার।

n লেখক :শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়