শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

গ্রামগুলো ভয়ানক ঝুঁকিতে, জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন

আপডেট : ২৯ মার্চ ২০২০, ২২:১৮

২০২০ সাল ইতিহাসের পাতা থেকে কখনোই হারিয়ে যাবে না বিশ্বব্যাপী মহামারি হিসেবে দেখা দেওয়া করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এই ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। মৃত্যুও হয়েছে কয়েক জনের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, করোনা ভাইরাস মারাত্মক ছোঁয়াচে রোগ। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে করোনা ভাইরাস দ্রুত বিস্তার লাভ করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য যে শতভাগ নির্ভুল আক্রান্ত দেশগুলোর দিকে তাকালে তা খুব সহজেই অনুমেয়। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ সরকার করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসেবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার অভিপ্রায়ে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত মোট ১০ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। বন্ধ করে দিয়েছে ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান ব্যতীত সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। উদ্দেশ্য একটাই—বিশেষ প্রয়োজন না হলে মানুষ যেন বাইরে বের না হয়ে ঘরেই অবস্থান করে। মানুষ ঘরে অবস্থান করছে কি না—তা তদারকি করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও সার্বক্ষণিক হাট-বাজার, বিভিন্ন রাস্তার মোড়, সড়ক মহাসড়কগুলোতে তাদের টহল অব্যাহত রেখেছেন। সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী এতে করে আশানুরূপ ফলও পাওয়া যাচ্ছে। স্বেচ্ছায় হোক কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভয়ে হোক—মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। বিষয়টা দারুণ স্বস্তির; কিন্তু দুঃখজনক হলেও এটি সত্যি যে, বাংলাদেশের অধিকাংশ গ্রামে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নিয়ম মানা হচ্ছে না। গ্রামের অল্পসংখ্যক মানুষ এ ব্যাপারে সচেতন থাকলেও সর্বাধিক মানুষ নির্বিকার—এক কথায় অসচেতন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সুবাদে দীর্ঘদিন থেকে গ্রামে খুব একটা থাকা হয় না।

সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়ায় এক রকম বাধ্য হয়েই বাড়িতে চলে আসা। যেহেতু গণপরিবহনে করে ঢাকা থেকে এসেছি তাই নিজে থেকে অনেক সতর্ক ছিলাম; কিন্তু গ্রামের মানুষের কাছে বিষয়টি অস্বাভাবিক ঠেকছিল। অনেকে এই কারণে আমাকে নিয়ে উপহাসও করেছেন। তবুও আমি আমার জায়গায় অনড় ছিলাম। ঢাকা থেকে বাসায় আসার কিছু দিন পরে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে গ্রামের মানুষকে সচেতন করার  বিষয়ে মনোযোগী হলাম। নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে গ্রামের অনেকের সঙ্গে কথা বললাম; কিন্তু কয়েক জন বাদে বেশির ভাগ মানুষই আমার কথায় খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি। কীসের ভয়! করোনা ভাইরাস যে বাংলাদেশেও সংক্রমিত হয়েছে এটাও অনেকে বিশ্বাস করতে চায় না। অনেকে আবার একধাপ বাড়িয়ে বলে—এটা তো বিদেশিদের রোগ। করোনা ভাইরাস আমাদের ধরবে না। আর গ্রামের  মোড়ে মোড়ে গড়ে ওঠা ছোটো ছোটো বাজারের দুই-একটা বাদে প্রায় প্রতিটি দোকান খোলা। জনসমাগমও বেশ। অথচ দুই-একটি বাদে প্রতিটি দোকান বন্ধ থাকার কথা ছিল। শুধু তাই নয়, গ্রামের মধ্যে দোকানগুলোতেও দেদারসে দলীয় আড্ডা চলছে। চলছে ক্যারম খেলাও। কাউকে কিছু বললে কেউ তা আমলে নিচ্ছে না। সবার ভাবখানা এমন—কিচ্ছু হবে না। করোনা বলতে কিচ্ছু নেই—ছেলেধরা, কল্লাকাটার মতো সবটাই গুজব। বিষয়গুলো নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলাম। বন্ধু তালিকার অধিকাংশই আমার সঙ্গে সহমত পোষণ করেন এবং জানান তাদের সঙ্গেও নাকি এমন ঘটনাই ঘটছে। এতে করে এটা সহজেই অনুমেয়—শুধু আমার এলাকা নয়, বাংলাদেশের অধিকাংশ গ্রামে একই অবস্থা বিরাজমান।

এমতাবস্থায় গ্রামগুলোতে ভয়াবহ বিপদ আসন্ন বলেই মনে হচ্ছে। সত্যিকার অর্থে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বলতে যা বুঝায় গ্রামে তা এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান নয়। গ্রামের মানুষ সামাজিক মেলামেশা, ওঠাবসা—সবকিছু আগের মতোই অব্যাহত রেখেছেন। তার ওপর ২৫/২৬ মার্চ ঢাকাফেরতরা গ্রামে এসে আরো বেশি ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ যেন মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। আইইডিসিআর সদ্য ঢাকাফেরতদের প্রতি হোম কোয়ারেন্টাইন মেনে চলার যে নির্দেশনা জারি করেছেন তা কেউ মানছেন না। তারা সবাই  নির্বিঘ্নে সবকিছু করছেন। এতে করে গ্রামে যে কত ভয়ানক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে যাচ্ছে তা কল্পনাতীত। এখনই জরুরি পদক্ষেপ না নিলে শোচনীয় পরিণতি ভোগ করতে হবে তা আর বলার অবকাশ রাখে না।

n লেখক :শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়