তাসনিমুল হাসান প্রান্ত
কোভিড-১৯ বর্তমানে সারা বিশ্বে একটি আতঙ্কের নাম। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম পৃথিবীর অসংখ্য দেশের মানুষের মধ্যে মৃত্যুভয় জাগিয়ে তুলেছে কোভিড-১৯ রোগ। বাংলাদেশেও এসেছে করোনার থাবা। আর তার চেয়েও বেশি এসেছে আতঙ্ক। বাংলাদেশের গ্রাম ও শহর সব জায়গার মানুষের ভেতর একধরনের চাপা আতঙ্ক কাজ করছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সরকার, প্রতিষ্ঠান ও জনগণ যখন করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য একযোগে কাজ করছে, তখন বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা তথ্যসমৃদ্ধ গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এটি সামাজিকভাবে ভয়ঙ্কর।
সবচেয়ে বড়ো গুজব কয়েক দিন যাবত্ বাংলাদেশের ফেসবুকে এবং মানুষের মুখে মুখে ঘুরছে তা হলো বাংলাদেশের কয়েক হাজার মানুষ ইতিমধ্যে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। সরকার মুজিব শতবর্ষ পালন করার জন্য গোপন রেখেছে। যদিও মুজিব শতবর্ষ পালনের একদিন আগেই সব অনুষ্ঠান সীমিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল সরকার। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবুও গুজব থেমে নেই। ফেসবুক জুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে কয়েকজনের মৃত্যুর খবর পর্যন্ত। আক্রান্ত এবং সন্দেহভাজনের প্রার্থক্য দেশবাসীর কাছে তুলে ধরার পরও ভুল তথ্য এবং আংশিক তথ্য প্রচার করে গুজব ছড়ানোতে পিছপা হয়নি অনেক গুজবজারী রোগী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত এই খবর শুনে হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়েছেন জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালের (পঙ্গু হাসপাতাল) ডাক্তার এবং নার্সরা। কানাডাফেরত শিক্ষার্থী করোনো ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে বিনা চিকিত্সায় মারা গেছেন ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে। করোনা ভাইরাসে মারা গেলে লাশের গোসল, জানাজা এবং মাটি হবে না গুজবে কান দিয়ে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল থেকে পালিয়েছেন নোয়াখালীর একজন প্রবাসফেরত শ্রমিক।
তাই এ ক্ষেত্রে গুজব প্রতিরোধে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। ডিজিটাল যুগে অনিষ্টকারীরা গুজবও ছড়ায় ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে, আরো নির্দিষ্ট করে বললে ফেসবুকের মাধ্যমে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আরো বেশি নজরদারি থাকা উচিত। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নামে একটি আইন রয়েছে। তাই ফেসবুকে সক্রিয় গুজব রটনাকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দিয়ে এই জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যমকে নিরাপদ করতে পারলে সেটিই হবে প্রকৃত ডিজিটাল নিরাপত্তা। করোনা ভাইরাস আমাদের অর্থনীতিতে যতটুকু ধস নামাতে পারবে তার চেয়ে বেশি ধস নামাবে গুজব নামের ভাইরাস। গুজব প্রতিরোধে প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি জনগণের মাঝে গুজবসম্পর্কিত সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে। দেশের এই দুঃসময়ে সবাইকে সম্মিলিতভাবে করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় দায়িত্বশীল হতে হবে।
n লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া