বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

নতুন বছরের প্রত্যাশা

আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮, ২২:১৯

দেখতে দেখতে একটি বছর শেষ হতে চলেছে। নতুন বছর এসে আমাদের দরজায় কড়া নাড়ছে। নতুন বছর মানে নতুন নতুন স্বপ্ন, অন্যরকম উত্তেজনা। সবার মনে একটা নতুনত্বের জোয়ার বইতে শুরু করেছে। সময় যেন দ্রুত গতিশীল হয়ে উঠেছে। কেমন যেন মনে হচ্ছে, এই তো ক’দিন আগেই তো একটা বছর শুরু হয়েছিল! এত দ্রুত কীভাবে সময় আমাদের পেরিয়ে যাচ্ছে তা যেন ঠিক বুঝে ওঠা যাচ্ছে না। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে আমরা অনেকেই হাঁপিয়ে উঠছি। আবার অনেকেই সময়কে পেছনে ফেলে দিয়ে পূর্ণ উদ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে। নিজের প্রতি যার ভালোবাসা আছে, দায়বদ্ধতা আছে সমাজ ও দেশের প্রতি, যিনি কিছু দিতে চান পৃথিবীবাসীকে—সময় নামক ফ্রেমে তাকে আটকে রাখা কঠিনই বটে। তিনি তার অভীষ্ট লক্ষ্যের দিকেই এগিয়ে চলেন।

কেমন কাটলো ২০১৮ সাল? একটি বছরের দ্বারপ্রান্তে এসে আমাদের এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে হচ্ছে। হয়ত অনেকেই মনে করতে পারেন, যেটা একবার চলে গেছে তার খোঁজ করে আর লাভ কী! আমি বলব, লাভ অবশ্যই আছে। অতীত হলো আমাদের ইতিহাস। আর একটা জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হলে অবশ্যই তার ইতিহাসকে বুকে ধারণ করা প্রয়োজন, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়া প্রয়োজন। আমরা জানি না অতীত থেকে কতটুকু শিক্ষা নিতে পারব। তবে আমাদের অবশ্যই সেই চেষ্টাটুকু করতে হবে।

বিগত বছরগুলোতে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি সামনের দিকে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে। এখন আর আমাদের কেউ ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে উপহাস করার সাহস দেখায় না। আমরা পদ্মা সেতুর মতো বৃহত্ প্রজেক্ট নিজেদের টাকায় শুরু করতে সক্ষম হয়েছি। আশা করছি দ্রুতই এই কাজ শেষ হবে এবং পদ্মাসেতু বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রভূত অবদান রাখতে সক্ষম হবে।

একটি দেশের সামগ্রিক উন্নতি এবং অগ্রগতির জন্য পরিবেশ দূষণের মতো ভয়াবহ সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে যাবার উপায় নেই। বাংলাদেশ এখন ভয়ানকভাবে এই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। বর্তমান সময়ে সারা পৃথিবী সচেষ্ট রয়েছে কীভাবে পরিবেশ দূষণের মাত্রাকে কমিয়ে আনা যায়। আমরা অন্য সকল বিষয়ে মনোযোগ দিলেও এই বিষয়ে একটু অমনোযোগী হয়ে পড়েছি বোধহয়। বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণের মাত্রা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি, বায়ু, শব্দসহ পরিবেশের সবগুলো উপাদান আজ দূষণে জর্জরিত। পরিবেশ সুরক্ষায় আমরা অধিক মাত্রায় বেখেয়াল। তা নাহলে কীভাবে গাছপালা কেটে বনভূমি উজাড় করতে পারি! যে গাছপালা আমাদের জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় রসদ জোগান দেয় তাকে কীভাবে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে পারি! আমাদের সচেতন হতে হবে। আমরা আশা করব, নতুন বছরে সামগ্রিক দূষণের মাত্রা কমিয়ে আনতে পারব।

আমাদের স্বাস্থ্য খাতও পূর্বের যেকোনো সময়ের চেয়ে অগ্রগতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। সরকার সর্বতোভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে দেশের প্রতিটি মানুষকে স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনার জন্য। এক্ষেত্রে যে বেশকিছু সফলতা অর্জিত হয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। দেশের প্রতিটি জেলায় মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন করার লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি জেলায় নতুন করে মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন করা হয়েছে এবং বাকিগুলোতেও স্থাপনের কাজ বেশ জোরেশোরেই চলছে। এতে করে মেডিক্যাল শিক্ষা যেমন প্রসারিত হবে তেমনই দেশের প্রতিটি জেলার মানুষ আধুনিক স্বাস্থ্যসেবার আওতায় চলে আসবে। তবে এখনো স্বাস্থ্যখাতে বেশকিছু সমস্যা বিদ্যমান রয়েছে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে যেসব স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে সেখানে ডাক্তারের সীমাহীন সংকট। গ্রামের মানুষ তাত্ক্ষণিকভাবে স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারছে না। তাই গ্রাম এলাকায় যেসব ডাক্তারকে পাঠানো হয় তাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ সুযোগ সুবিধা দিয়ে সেখানে থাকতে উত্সাহিত করতে হবে। এতে করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা পেতে পারে।

আমরা প্রতিনিয়ত নানামুখী সমস্যার মধ্য দিয়ে দিন অতিবাহিত করি। আমাদের সমস্যা সীমাহীন; সেই তুলনায় সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়। সরকার সবসময় চেষ্টা করে জনগণের অভাব-অভিযোগের দিকে লক্ষ রেখে তার সমাধানের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে। অনেক সময় জনগণের বেখেয়ালের দরুন যথাযথ সেবা পৌঁছানো সম্ভব হয় না।

তাই সবার আগে আমাদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন। নিজেদের দাবি-দাওয়া নিয়ে সরকারের কাছে যেতে হবে। সর্বোপরি দেশের জন্য কাজ করতে হবে। লক্ষ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া আমাদের এই দেশ যেন সামনের দিকে তার মর্যাদা সমুন্নত রেখে এগিয়ে যেতে পারে নতুন বছরে এটাই আমাদের সকলের প্রত্যাশা। দেশকে এগিয়ে নিতে তাই সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে আমরা যদি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারি তাহলে আমাদের আটকে রাখতে পারে এমন সাধ্য কার?

n লেখক:শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়