মানুষ সামাজিক জীব। সমাজে সংঘবদ্ধভাবে একে অপরের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রেখে যুগের পর যুগ মানুষ পৃথিবীতে বসবাস করে আসছে। বংশ পরম্পরার ধারা বজায় রাখতে আমাদের সন্তান জন্ম দিতে হয়। সব মা-বাবার স্বপ্ন থাকে তাঁদের সন্তান মানুষের মতো মানুষ হয়ে সমাজের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। কিন্তু আজকাল অধিকাংশ পরিবারের সন্তান বিপথগামী হয়ে পড়ছে।
অধিকাংশ পরিবারের সন্তানদের বিপথগামী হওয়ার পেছনে যে কারণটি সবচেয়ে বেশি দায়ী সেটি হলো অসত্ এবং দুশ্চরিত্র বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে মেলামেশা। অসত্ বন্ধুদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি এবং বেড়ানোর কারণেই তারা বিপথে ধাবিত হয়। প্রথমে তারা মাদকের দ্বারা নেশাগ্রস্ত হয় এবং এরপর অন্যান্য উপায়ে কুপথে পা বাড়ায়।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বিভিন্নভাবে যেমন— বাংলাদেশ-ভারত এবং মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে বিপুল পরিমাণ মাদক এবং মাদকদ্রব্যাদি পাচার হওয়ায় এসব মাদক এবং মাদকজাতীয় দ্রব্যাদির দাম সহজলভ্য হয়েছে ফলে যুবসমাজ এগুলো অল্প দামে হাতের মুঠোয় পাওয়ায় কিছু না জেনে-বুঝে অনায়াসে এগুলো সেবন করে মৃত্যুমুখে ক্রমে ক্রমে ধাবিত হচ্ছে যার কারণে যুবসমাজ বিপথে পরিচালিত হয়ে ধ্বংস হচ্ছে।
দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থিত আফ্রিকার শিং খ্যাত দেশ ইথিওপিয়া থেকে সুবজ চা পাতার মতো দেখতে এক ধরনের মাদক বাংলাদেশ-মিয়ানমার এবং ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে এদেশে ঢুকছে অতি গোপনীয়তার সঙ্গে। এই মাদক বাংলাদেশে ‘খাট’ নামে পরিচিতি পেয়ে দেশের গ্রাম অঞ্চল থেকে শুরু করে শহর অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছে খুব দ্রুততার সঙ্গে। এই সবুজ পাতাকে ইথিওপিয়ান গাঁজাও বলা হয়।
এছাড়াও বন্ধুবান্ধবদের পাল্লায় পড়ে অনেকে ঝুঁকে যাচ্ছে মদ, গাঁজা, হেরোইন, ফেনসিডিল, পেথেড্রিন, মরফিন, বিড়ি, তামাক, ভাং, চুরুট, আফিম, সিগারেট ইত্যাদি মাদকদ্রব্যের ওপর যার কারণে যুবসমাজ দিন দিন অবক্ষয় এবং ধ্বংসের দিকে পতিত হচ্ছে। ধর্মীয় অনুশাসন রীতি-নীতি ভেঙে অনেকে ঝুঁকে পড়ছে পতিতাবৃত্তির মতো নিকৃষ্টতর কাজে যা কখনো ব্যক্তি হিসেবে কোনোভাবেই কাম্য নয়। এমন অবস্থায় একজন সচেতন অভিভাবকই পারে তার সন্তানকে কিংবা আপনজনকে বিপথ থেকে সুপথে ফিরিয়ে আনতে। অভিভাবক সুন্দর করে বুঝিয়ে বলতে পারে এর সুফল এবং কুফল সম্পর্কে এবং এখনো সুপথে ফিরে আসার সম্পূর্ণ সম্ভাবনা আছে এমন ইঙ্গিত দিতে পারে। সর্বোপরি, আপনজনকে বিপথ থেকে সুপথে ফিরিয়ে আনতে সচেতন অভিভাবকের কোনো বিকল্প নেই বলে আমার একান্ত বিশ্বাস।
n লেখক:শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়