শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

আলোকপাত

করোনা মোকাবিলায় সতর্কতা

আপডেট : ২২ মে ২০২০, ২১:৪৯

ড. মো. হুমায়ুন কবীর

করোনায় এখন বিশ্ব একপ্রকার মৃত্যুপুরী। ১৯ মে ২০২০ তারিখের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী বিশ্বে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় অর্ধকোটি এবং মৃতের সংখ্যা তিন লাখ বিশ হাজার ছাড়িয়েছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা যুক্তরাষ্ট্রের এবং তারপরই হলো ইউরোপের অবস্থা। এ যেন এক কঠিন পরিস্থিতি। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে বলা যায় একমাত্র ইরান ছাড়া এশিয়ার অবস্থা এখনো তুলনামূলকভাবে এতটা ভয়াবহ হয়ে ওঠেনি। কিন্তু ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে এখন যেভাবে পরিস্থিতি আস্তে আস্তে খারাপের দিকে যাচ্ছে তা একটি অশনি সংকেত ছাড়া আর কিছুই নয়।

যতই দিন যাচ্ছে টেস্টের পরিমাণ বাড়ছে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বাংলাদেশ সরকার সর্বপ্রথম জরুরি সার্ভিসসমূহ সীমিত আকারে চালু রেখে ১৮ মার্চ থেকে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, গণপরিবহন ইত্যাদি বন্ধ করে দেয়। তার আগে থেকেই ঢাকা হয়ে ওঠে করোনা আক্রান্তের অন্যতম হটস্পট। তারপর ঢাকার অদূরবর্তী জেলা ও অন্যতম ব্যবসাকেন্দ্র নারায়ণগঞ্জ। তখন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও প্রতিদিন এ বৃদ্ধির সংখ্যা ছিল দুই অংকের কোটায়। কিন্তু যখনই বিজিএমইএর ভুল বুঝাবুঝির কারণে গার্মেন্টস কারখানাসমূহ অপরিকল্পিতভাবে খুলে গেল। এতে আগে যেসব নিম্নআয়ের মানুষ তাদের নিজ নিজ এলাকায় চলে গিয়েছিল তারা আবার কর্মস্থলে অর্থাত্ ঢাকা কিংবা নারায়ণগঞ্জ ফিরে আসে। তারা এসব হটস্পটে আসার পরপরই ব্যাপকহারে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে প্রতিদিন দুই অংকের সংখ্যা থেকে তিন অংক এবং এখন চার অংকের সংখ্যায় এসে ঠেকেছে।

সরকার ছুটি বাড়াতে বাড়াতে ঈদের পর পর্যন্ত নিয়ে গেছে। সেইসঙ্গে ছুটিতে গণপরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে। সরকারি আদেশে বলা হয়েছে ছুটিতেও যে যেখানে আছেন সেখানেই থাকবেন। গ্রামের বাড়িতে ছুটোছুটি করার দরকার নেই। কে শুনছে কার কথা? রাতের অন্ধকারে, পায়ে হেঁটে, ব্যক্তিগতভাবে গাড়ির ব্যবস্থা করে যে যেভাবে পারছে সেভাবেই গ্রামের বাড়িতে পাড়ি জমাচ্ছে। কি লঞ্চঘাটে, কি বাস স্টপেজে কোথায়ও পা ফেলার জায়গাটিও নেই। লকডাউন কিছুটা শিথিল করার পর গত দুই-তিন দিন যাবত্ ঢাকা শহরে ট্রাফিক জ্যামের আগের মতোই যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে দেশে করোনা নামক আর কোনো সমস্যা নেই।

সরকার একা কি করবে? সরকারের আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই। বরং লকডাউন কার্যকরে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে পুলিশ, সেনাবাহিনী, র্যাবের হাজার হাজার সদস্য আক্রান্ত হচ্ছেন এবং মারাও যাচ্ছেন অনেকে। চিকিত্সা দিতে গিয়ে চিকিত্সক, নার্সসহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হচ্ছেন এবং মারা যাচ্ছেন। তাহলে দেখা যাচ্ছে যদি বাইরে বের হলে আমার নিজেরই স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকে তাহলে আমাকে রক্ষা করার দায়িত্ব শুধু সরকারের ওপরেই বর্তায় নাকি আমার নিজের, পরিবারের, প্রতিবেশী এবং এলাকার কথা চিন্তা করা প্রয়োজন। সেটি কি আমরা কখনো ভেবে দেখেছি! সরকারের গার্মেন্টস চালু রেখে যেমন তাদের বেতনের নিশ্চয়তা বিধান করা দরকার, সাধারণ ও নিম্নআয়ের মানুষের কথা, কৃষি উত্পাদন অব্যাহত রাখার কথা চিন্তা করে লকডাউন কিছুটা শিথিল করা দরকার। সেই সরকারেরই আবার করোনা যাতে আর না বাড়ে সেটিও দেখার দায়িত্ব। এত দায়িত্ব যদি সরকার একা নেয় তবে আমি নিজে আমার এবং আমার পরিবারের সদস্যদের ঘরে থাকার দায়িত্ব নিতে পারি না কেন! বিষয়টি সচেতনমহলকে ভেবে দেখার অনুরোধ রইল।    

লেখক : ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়