শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

আলজেরিয়ার ‘পাওয়ার হাউস’ কি ‘পাওয়ারলেস’ হয়ে পড়ছে?

আপডেট : ১৮ মার্চ ২০১৯, ২১:৩৯

ড. আবদুল লতিফ মাসুম

২০১১ সালের পৃথিবী কাঁপানো ‘আরব বসন্ত’-এর পর এখন আলজেরিয়ায় নতুন করে এক গণঅভ্যুত্থানের সূচনা হয়েছে। দীর্ঘ দুই দশকের স্বৈরাচারী শাসক প্রেসিডেন্ট আবদুল আজিজ বুতাফ্লিকার বিরুদ্ধে রাজপথে নেমে এসেছে হাজার হাজার মানুষ। ৮২ বছর বয়স্ক এক রকম অচল ও অসুস্থ এই নেতার পঞ্চমবারের মতো প্রেসিডেন্ট হওয়ার খায়েশের বিরুদ্ধে এই গণবিক্ষোভ। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন ১৯৯০ সালের পর এতবড় গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন সেখানে আর হয়নি। বিক্ষোভের আশু কারণ এপ্রিলে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন হলেও দীর্ঘকাল ধরে এই একনায়কের অন্যায়, অত্যাচার ও নিপীড়ন-নির্যাতন এখন আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের মতো ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গত ৮ মার্চ জুম্মা নামাজের আগেই তৃতীয় দফা বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায়। আলজেরিয়ার বিভিন্ন শহর ও জনপদে এ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। ক্ষমতাসীন বুতাফ্লিকা জুম্মা নামাজের খুতবায় তার প্রশস্তি গাওয়াকে বাধ্যতামূলক করে দিলেও ঐদিন ইমাম সাহেবরা তার জন্য দোয়া করা থেকে বিরত থাকে।

তথাকথিত এই শক্তিমান পুরুষ ২০১৩ সালে স্ট্রোক করার পর থেকেই গুরুতরভাবে অসুস্থ। এখন তিনি সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় চিকিত্সারত রয়েছেন। সেখান থেকেই তিনি ক্ষমতার কলকাঠি নাড়ছেন। নিজের নির্বাচনের দায় অপরের ঘাড়ে তুলে দেয়ার কৌশল হিসেবে তিনি তার নির্বাচন পরিচালনার প্রধান, তার বিশ্বস্ত অনুচর, সাবেক প্রধানমন্ত্রী আবদুল মালেক সেল্লালকে বরখাস্ত করেছেন। বিগত সাত বছর ধরে তাকে কদাচিত জনসমক্ষে দেখা গেছে। তার মৃত্যু ঘটেছে বলে গুজব রটেছিল। প্যারিসে অবস্থিত আলজেরীয় রাষ্ট্রদূতকে টেলিভিশনে সাক্ষাত্কার দিয়ে তার মৃত্যুর গুজব নাকচ করতে হয়েছে। বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠান ও আনুষ্ঠানিকতা সারা হচ্ছে বুতাফ্লিকার প্রতিকৃতি স্থাপনের মাধ্যমে। লোকেরা এ নিয়ে হাসাহাসি করে। এতো কিছুর পরেও তার ক্ষমতার খায়েশ দূরীভূত হয়নি। অভিযোগ রয়েছে একটি দুষ্টচক্র তাকে ঘিরে শাসনকার্য পরিচালনা করছে। এই চক্রের মধ্যে রয়েছে ৭৯ বছরের বৃদ্ধ সেনাবাহিনী প্রধান আহমেদ গৈয়দ সালাহ ও প্রেসিডেন্টের ছোটভাই সৈয়দ বুতাফ্লিকা প্রমুখ। আলজেরীয় সংবাদপত্রে খবর বেরিয়েছে যে, ভবিষ্যত্ উত্তরাধিকার সম্পর্কে শাসকচক্র একমত না হওয়ার কারণে পঞ্চমবারের জন্য অসুস্থ প্রেসিডেন্টকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এই দুষ্টচক্রের শাসনের মধ্যে লোকজন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়, ৮ মার্চ পূর্বঘোষিত আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে এক সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল। বিরোধী নারীরাই মূলত এ আয়োজন করে। আর এতে যাতে বেশি সংখ্যায় নারীরা অংশগ্রহণ করতে না পারে সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনোরকম ব্যাখা ছাড়াই ট্রেন এবং মেট্রো সেবা স্থগিত রাখা হয়। দেশটির টিএসএ নিউজ ওয়েবসাইটের মতে, টানা তৃতীয় শুক্রবার প্রেসিডেন্ট বুতাফ্লিকার বিরুদ্ধে আলজেরিয়ার গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে বিক্ষোভ হয়ে আসছে। রাজধানীতে প্রতিবাদকারীরা বলেন, আমরা আমাদের ভবিষ্যত্ প্রজন্মের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যত্ নিশ্চিত করতে চাই। তাদের সুরক্ষার জন্যই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করছি।

প্রেসিডেন্টের আপস চেষ্টা: ৭ মার্চ আলজেরিয়ার সরকারি বার্তা সংস্থা আলজেরিয়া প্রেস সার্ভিস বার্তা সংস্থাকে প্রেরিত এক বার্তায় অনুষ্ঠিতব্য ১৮ এপ্রিল নির্বাচনে তার অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত বহাল রেখে জনগণকে নিশ্চিত করেন যে, আরো পাঁচ বছর পরের ষষ্ঠ নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হবেন না। উল্লেখ্য যে, বিগত চারটি নির্বাচন মূলত ছিল প্রহসন। ঐসব নির্বাচনে ক্ষমতাসীন এফএলএন জোটের বাইরে অন্য কাউকে প্রার্থী হতে দেওয়া হয়নি। তিনি নির্বাচন বিষয়ে আপস না করে বিক্ষোভকারীদের প্রকারান্তরে ভীতিও প্রদর্শন করেন। ঐদিনই বিক্ষোভে নেতৃত্বদানকারী মানবাধিকার কর্মীরা প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তকে হাস্যকর ও বিভ্রান্তিকর বলে অভিহিত করেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ঐ প্রস্তাবকে লজ্জাকর, নামমাত্র আপসের এবং অনেক বিলম্বের বলে নাকচ করে দেন। জনগণ মনে করে প্রেসিডেন্ট তাদেরকে প্রতারিত করবার জন্য মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।

প্রেসিডেন্ট তথা শাসক দল যে রাজনৈতিক চাপ অনুভব করছে তা তাদের ঐসব নির্দেশে প্রতিফলিত হয়েছে। আইনজীবীদের বিক্ষোভ মিছিল থেকে প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবি করা হয়। বার্তা সংস্থা বলছে, ক্ষমতাসীন বুতাফ্লিকা সরকার জনগণের নাড়ির কথাটি বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছে। বিলম্ব আরো বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। বিরোধী আন্দোলনে ছাত্র ও যুবকদের অংশগ্রহণ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভের কারণে এতোদিন ধরে স্বৈরতন্ত্রকে তোষণকারী গণমাধ্যমেও বিভক্তি দেখা দিয়েছে। জনপ্রিয় আল ওয়াতন পত্রিকার সম্পাদক ওমর বেলহোছেট মন্তব্য করেন যে, জনগণ কর্তৃত্ববাদী সরকারকে আর বহন করতে পারছে না। এরা নিজের জনগণকে ভূ-মধ্যসাগরে নিক্ষেপ করছে। এ মন্তব্যের মাধ্যমে ঐ সম্পাদক আলজেরীয় উপকূল থেকে ইউরোপে পৌঁছার জন্য ভূ-মধ্যসাগর অতিক্রমকালে শতশত আলজেরীয় নাগরিকের মৃত্যুর দিকে ইঙ্গিত করছিলেন। তিনি আরো বলেন যে সমগ্র রাজনৈতিক ব্যবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তন প্রয়োজন।

আলজেরিয়ার অতীত ইতিহাস যাই হোক না কেন, বর্তমানে দেশটি যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্সের যৌথ তাঁবেদারিতে রয়েছে। ১৯৯০ সালে ইসলামপন্থিদের বিজয় ব্যর্থ করে দেওয়ার পর সেনাবাহিনী পাশ্চাত্যের বিশ্বস্ত মিত্রে পরিণত হয়েছে। ৯০-এর পরবর্তী এক দশকের গৃহযুুদ্ধে সেনাবাহিনী নির্মমতা ও নৃশংসতার ব্যাপারে বিশ্বব্যাপী কুখ্যাতি অর্জন করে। আলজেরিয়া ফরাসি আফ্রিকায় বরকন্দাজ হিসেবে কাজ করছে। আফ্রিকার যেসব দেশ প্রতিরক্ষা খাতে বিপুল ব্যয় করে আলজেরিয়া তাদের অন্যতম। নব্বইয়ের গৃহযুদ্ধের পর সেনাবাহিনীর ইচ্ছায় অনেক আলঙ্কারিক প্রেসিডেন্টের পর শান্তির অন্বেষায় বুতাফ্লিকাকে ক্ষমতাসীন করা হয়। কিন্তু তিনি সমঝোতা ও শান্তির পরিবর্তে বিরোধীদের এক রকম নিশ্চিহ্ন করে কবরের শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন। জনগণের আবেদনের কাছে সাড়া না দিলেও বর্তমান গণঅভ্যুত্থান শাসকদের ক্ষমতার ভিতকে নাড়িয়ে দিয়েছে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মনে করেন। এর আর একটি প্রমাণ— বিদেশি সাংবাদিকদের আলজেরিয়া গমনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ। অভ্যন্তরীণ সংবাদ প্রচার ও প্রকাশে বাধা দেওয়া হয়। এখন সে বাধা কেউ মানছে না। বর্তমান আন্দোলনের একজন নেতা সাবেক যোগাযোগ ও সংস্কৃতি মন্ত্রী এক সাক্ষাত্কারে মন্তব্য করেন যে ‘প্রেসিডেন্টের প্রতিশ্রুতিকে আমরা নমনীয়তা মনে করি না। এসব হচ্ছে বুতাফ্লিকাকে রক্ষার অপচেষ্টা। দেশকে বাঁচানোর কোনো চেষ্টা নয়। আমরা এমন একজন প্রেসিডেন্ট পেয়েছি যিনি আজীবন ক্ষমতাকে আঁকড়ে ধরে থাকতে চান।’

আন্দোলনের তীব্রতা: আন্দোলন তৃতীয় সপ্তাহ অতিক্রম করেছে। এটি ক্রমশ তীব্রতর হচ্ছে। জনগণ পুলিশের ব্যারিকেড অতিক্রম করে বেশ কয়েকবার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের দিকে অগ্রসর হয়েছে। মোটামুটি আন্দোলন অহিংস এবং এ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ থেকেছে। একজন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ প্রফেসর লাহুরী আদ্দী বলেছেন, এটি রীতিমতো একটি বৈপ্লবিক অবস্থা। বিপুলসংখ্যক লোকজন দিন দিন আন্দোলনে শামিল হচ্ছে। জনগণ শাসক দলের পতন কামনা করছে। দেশের সকল স্তরের জনসাধারণ, পেশাজীবী, ব্যবসায়ী এমনকি সামরিক বাহিনীর লোকজনও বিক্ষোভকারীদের দিকে ঝুঁকছে। আলজেরীয় গণমাধ্যমে জানানো হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাতজন নেতা যারা ফরাসি উপনিবেশবিরোধী যুুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, তারা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংহতি জ্ঞাপন করে সরকারি জোট থেকে পদত্যাগ করেছে। এ মাসের প্রথমদিকে দেশটির মুক্তিযোদ্ধা সংগঠন ‘মুজাহিদীন’ বিক্ষোভকারীদের সুসভ্য আচরণ ও শান্তিপূর্ণ কৌশলের প্রতি তাদের সমর্থন প্রদান করেছে। তারা তাদের বিবৃতিতে সরকারি দলের দুর্নীতির তীব্র সমালোচনা করে। সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে আরো পদত্যাগের খবর আসছে। এরা সকলেই বুতাফ্লিকা প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ জন। সেনাবাহিনীর একটি সাময়িকী ‘আল-জেইক’ তাদের সাম্প্রতিক সংখ্যায় বিক্ষোভরত জনগণ, বিশেষত যুবকদের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপক নিবন্ধ প্রকাশ করে। পর্যবেক্ষকগণ এই সমর্থনকে গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিতবহ বলে মনে করছেন। ঐ নিবন্ধে আলজেরীয় জনগণের সঙ্গে সেনাবাহিনীর একই উদ্দেশ্য ও গন্তব্যের কথা বলা হয়। এতে ভবিষ্যত্ নির্মাণে একই দৃষ্টিভঙ্গির উল্লেখ করা হয়। নতুন প্রজন্মের সাথে তাদের সমমনোভাবের কথা ব্যক্ত করা হয়। আগেই বলা হয়েছে সেনাবাহিনী প্রধান বুতাফ্লিকা প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্রই রয়েছেন। ১৯৯০ সালের পর থেকে কার্যত সেনাবাহিনীই আলজেরিয়া শাসন করছে। বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিচ্ছেন যে সেনাবাহিনী হয়ত সংকট উত্তরণের একটি উপায় খুঁজছে। জনগণের প্রতি তাদের বার্তা হচ্ছে, ‘আমরা তোমাদের সাথে আছি।’ আলজেরীয় রাজনীতি সম্পর্কে অভিজ্ঞ একজন গবেষক মন্তব্য করছেন যে সংকট সমাধানের পথ ও পাথেয় এখনও নিশ্চিত নয়। বিরোধী পক্ষের দুর্বলতা এই যে এখনো সেখানে সুদৃঢ় একক নেতৃত্বের অভাব রয়েছে। উল্লেখ্য যে বিগত ১০ বছরের গৃহযুদ্ধে বিরোধী দলকে হত্যা, ফাঁসি ও জেল-জুলুমের মাধ্যমে নেতৃত্বশূন্য করে দেওয়া হয়েছে। তবে আন্দোলনের মাধ্যমে যৌথ নেতৃত্বের সৃষ্টি হচ্ছে এবং সময় অন্তরে একক নেতৃত্বের বিকাশ ঘটবে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞগণ ‘জাতীয় সরকার’ বা ‘জননিরাপত্তা কমিটি’র মাধ্যমে সমাধানের সম্ভাবনার কথা বলছে। সর্বশেষ বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বলা হয়েছে যে তাদের লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। বুতাফ্লিকা এই নির্বাচনে অংশ না নিলে একটি সমাধানে পৌঁছার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে।

 এই আন্দোলন আমাদেরকে ২০১১ সালে সূচিত ‘আরব বসন্তের’ কথা মনে করিয়ে দেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন যে, বর্তমান আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি ও গন্তব্য আরব বসন্তের প্রতিধ্বনি করে। প্রতিশ্রুত নির্বাচনে মনোনয়ন দাখিলে আলজেরীয় আইন অনুযায়ী ব্যক্তিগত উপস্থিতি প্রয়োজন। এবার তারা তা না করে বুতাফ্লিকার ফটোফ্রেম দ্বারা চালাতে চাচ্ছে। আন্দোলনরত লোকেরা সংবাদমাধ্যমে মন্তব্য করেছে যে ফ্রেম যেমন অচল, অসার এবং অকার্যকর, আন্দোলনের অপরিহার্যতায় বুতাফ্লিকাও সেই পরিণতি বরণ করবে। রাজনৈতিক সমাধান হিসেবে ঐ নির্বাচনের সাথে সাথে ক্ষমতাসীন সরকার একটি নতুন সংবিধান রচনার জন্য যে জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন করতে চাচ্ছে— তাও অচল ফ্রেমের মতো আর সচল হবে না বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা। জনগণ বিশ্বাস করে, বুতাফ্লিকা চক্রের প্রতিনিধিত্বশীল কথিত ‘পাওয়ার হাউস’ পাওয়ারলেস হয়ে পড়বে এবং অচিরেই জনগণের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হবে। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ১৯৯০ সালের প্রথম দিকে ইসলামি দলগুলোর সম্মিলিত জোট ‘ইসলামিক স্যালভেশন ফ্রন্ট’ যখন চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করতে যাচ্ছে, তখন পাশ্চাত্যের ইঙ্গিতে সেনাবাহিনী নির্বাচন বাতিল করে এবং আলজেরিয়া একটি ভয়ঙ্কর রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধে নিপতিত হয়। জনগণের ক্ষমতার পরিবর্তে শক্তির মদমত্ততা প্রতিষ্ঠিত হয়। এই গৃহযুদ্ধে দুই লক্ষ মানুষ মৃত্যুবরণ করে। বুতাফ্লিকার অপশাসনে দেশের মূল্যবান সম্পদ গ্যাস ও তেলের অবাধ লুটপাট হয়। বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের পরিমাণ মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়। বেকার সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে। রাজনৈতিক নির্যাতন মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। এসব কিছুর অবসান হবে— যদি চলমান আন্দোলনে জনগণ বিজয় অর্জন করে। জনগণই যদি সকল ক্ষমতার উত্স হয় তাহলে, অবশেষে অবশ্যই জনগণের ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে।

n লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ,

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়