বাংলাদেশের রপ্তানিপণ্য তালিকায় চা শিল্প এখনো পর্যন্ত শীর্ষ তালিকায় রয়েছে। আমাদের দেশের রপ্তানি আয়ের বিরাট অংশ আসে চা শিল্প থেকে। আমাদের জাতীয় আয়ের শতকরা এক ভাগ আয় আসে এই চা শিল্প থেকে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি চাপাতার বিশেষ কদর রয়েছে। প্রাপ্ততথ্য থেকে জানা যায়, ব্রিটিশ আমল থেকেই আমাদের দেশের চাপাতা বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। আমাদের দেশে চাপাতা চাষের সূত্রপাত ঘটায় ব্রিটিশ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। যদিও চায়ের আদি জন্মভূমি চীনে। ১৮২০ সালের দিকে আমাদের দেশে চাপাতা চাষের সূত্রপাত ঘটে। চট্টগ্রাম শহরের চিটাগাং ক্লাবের পার্শ্বে সর্বপ্রথম কলকাতা থেকে চারা এনে পরীক্ষামূলকভাবে চাপাতা চাষ করেন তত্কালীন ব্রিটিশ শাসকরা। পরবর্তীকালে ১৮৪০ সালের দিকে সর্বপ্রথম বাণিজ্যিকভিত্তিতে চাপাতার চাষ শুরু করা হয় চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া এলাকায়। তত্কালীন কাষ্টমস কালেক্টর স্কোনেসের উদ্যোগে পাইওনিয়ার টি গার্ডেন নামে বাগানে সর্বপ্রথম বাণিজ্যিকভিত্তিতে চাপাতা চাষ শুরু করা হয়। কিন্তু এই উদ্যোগে সফল না হওয়ায় পরবর্তীকালে বিখ্যাত ব্রিটিশ চা শিল্প উদ্যোক্তা জেহেগ চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার কোদালিয়ায় চাপাতা উত্পাদন শুরু করে এবং এই উদ্যোগ সফল হয়। ১৮৪৩ সালে বাণিজ্যিকভিত্তিতে সেখানে থেকে চাপাতা বিক্রি শুরু হয়। তারপর ধীরে ধীরে দেশের বিভিন্ন স্থানে চা বাগান সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হয়। চাপাতা চাষের জন্য বাংলাদেশের মাটি এবং আবহাওয়া খুবই উপযোগী। যে কারণে ১৮৫৭ সালের দিকে সিলেটের মানিলীছড়ায় বাণিজ্যিকভিত্তিতে চা উত্পাদন শুরু হয়। সিলেটে চা বাগান সৃষ্টির পর ধীরে ধীরে বাগানের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশের সাতটি জেলায় এক লক্ষ ১৫ হাজার ৬৩০ একর জায়গার উপর ১৬৪টি চা বাগান এবং ১১৪ প্রসেসিং প্লান্টে চাপাতা উত্পাদিত হচ্ছে। এসব চা বাগানের মধ্যে মৌলভীবাজারে ৯৩টি, সিলেটে ২০টি, হবিগঞ্জ ২৩টি, চট্টগ্রামে ২১টি, রাঙ্গামাটিতে একটি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি, পঞ্চগড়ে আটটি বাগান রয়েছে। দেশের সবগুলো চা বাগানে প্রায় তিন লক্ষ শ্রমিক এবং কর্মকর্তা কর্মরত আছেন। এর মধ্যে শতে ৭৫ জন নারী শ্রমিক। আফগানিস্তান, কাজাখাস্তান, রাশিয়া, পাকিস্তান, পোল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, গ্রিস, ওমান, আরব আমিরাতসহ প্রায় ৪০টি দেশে চাপাতার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশে চাপাতা উত্পাদন কম হওয়ায় দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর জন্য বিদেশ থেকে চাপাতা আমদানি করা হচ্ছে। গত অর্থবছরে এক কোটি ৪৩ লাখ কেজি চাপাতা আমদানি করা হয়। চলতি অর্থ বছরে তা দেড়কোটি কেজি ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দেশের চা শিল্পকে রক্ষা করার লক্ষ্যে এখনই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। দেশের প্রতিটি চা বাগানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে চাপাতা উত্পাদন বৃদ্ধি করতে হবে। চা বাগানের কর্মীদের উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। দেশে নতুন নতুন চা বাগান সৃষ্টির মাধ্যমে চাপাতার উত্পাদন বৃদ্ধি করতে হবে। দেশে নতুন নতুন চা বাগান সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকার অবশ্য বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন। দেশের পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, ময়মনসিংহ জেলায় নতুন নতুন চা বাগান গড়ে তোলা হচ্ছে। নতুন নতুন চা বাগান সৃষ্টি হলে বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান ব্যবস্থা হবে। চা বাগানের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে চাপাতার উত্পাদন বেড়ে যাবে। চাপাতার উত্পাদন বৃদ্ধি পেলে চাপাতা রপ্তানিও বেড়ে যাবে। সেই সঙ্গে বাড়বে রপ্তানি আয়। চাপাতা চাষের জন্য খুবই উপযোগী হওয়ায় আমাদের দেশের চা শিল্পকে দ্রুত এগিয়ে নেওয়া সম্ভব।
n লেখক :বীমা কর্মকর্তা