শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সবক্ষেত্রে ইতিবাচক মনোভাবের চর্চা জরুরি

আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০১৯, ২১:৫২

 ‘তোমার লেখার কথা তুমি লিখে যাও, সেটা প্রকাশ হোক বা না হোক সে জন্য তোমার লেখা বন্ধ থাকবে কেন? তোমাকে মনে করতে হবে অন্তত একজন পাঠক (সম্পাদক মহোদয়) তুমি পেয়েছ যে তোমার লেখাটা অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে এবং শেষে বাদ দিয়েছেন।

কথাগুলো বলেছিলেন আমার পরিচিত এক বড় ভাই যিনি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে নিয়মিত লেখালেখি করেন। তার কথা থেকে একটা কথা বুঝতে পারলাম যে একজন মানুষ কতটা ইতিবাচক মনোভাব ধারণ করলে এই রকম কথা বলতে পারে। শূন্যের কোঠায় থাকা আশাকেও কিভাবে পূর্ণতায় পরিণত করার সাহস যোগাতে পারেন।

আমরা যখন কোনো কাজ করতে যাই তখন হাজারবার ভাবতে হয় যে কাজটি আদৌ পারব কিনা বা আমার দ্বারা কি কাজটি করা সম্ভব? আবার আমরা অনেকেই কোনো কাজ করার আগেই এর নেতিবাচক পরিণাম নিয়ে এত বেশি মাথা ঘামাই যে ওই কাজটি না করেই যেন পরিণামের পাপের ভার ঘাড়ে চেপে বসে। আমরা সে পাপ সহ্য করতে না পেরে ছটফট করতে করতে শুরু করার আগেই সব শেষ করে বসে থাকি। কিন্তু কাজটি অন্তত শুরু করা দরকার ছিল।

অনেক সময় নিজের অক্ষমতা গোপন করার জন্যই হোক বা অন্য কোনো কারণেই হোক অনেকে তার সতীর্থ বা সহকারীদেরও ইতিবাচক কাজগুলোতে উত্সাহ প্রদান না করে শুধু শুধু অশুভ পরিণামের চিন্তাগুলো এমনভাবে মাথায় ঢুকিয়ে দেয় যার ফলে কার্যোত্সাহী মানুষগুলোও উদ্দীপনা হারিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়। অথচ তার সেই সতীর্থের উচিত ছিল তাকে হতাশ না করে পূর্ণ সহায়তা করে যাওয়া যাতে করে ওই ব্যক্তি নিজে, সমাজ এবং দেশ বিভিন্নভাবে উপকৃত হতে পারতো।

আবার এক শ্রেণির হতাশাবাদী আছেন যারা সর্বদা নিজের চিন্তা বাদ দিয়ে অন্যের ভুল  ধরতে ব্যস্ত হয়ে থাকেন। অন্যদের যেকোনো ইতিবাচক কাজগুলো তাদের গায়ে কাঁটার মতো ফুটতে থাকে। তাই তো তারা মুখে বুলি আওড়ায়, ‘অমুক করবে এটা, এতই সহজ? তমুকই যেটা করতে করতে পারল না।’

মনে হয় যেন সব কাজ অমুক-তমুক করলেই করা সম্ভব ছিল তা ছাড়া নয়। পৃথিবীতে প্রথম বলতে কিছু নেই। আসল কথা যে কেউ কোনোকিছুতে সফল হোক তা এদের জন্য অযথা কষ্ট বয়ে আনে। এটা এক ধরনের মানুষিক অসুখও বটে যেটার ফলে এরা অন্যের ইতিবাচক সাফল্যও নেতিবাচক মন্তব্য অব্যাহত রাখে। কিন্তু এরা কখনোই বুঝতে চেষ্টা করে না যে তাদের এই মন্তব্য অনেকের প্রত্যাশার পারদ নিম্নমুখি করে দেয়। যা অনেকের ব্যক্তিগত জীবনেও প্রভাব ফেলে।

সমাজে হাসি ঠাট্টা, টিপ্পনি কাটার মানুষেরও অভাব নাই। নিজের দ্বারা সম্ভব নয় বলে অন্যের চেষ্টায় এদের হিংসা হয়। কত রকম প্রচেষ্টার মাধ্যমে অন্যের সাফল্যে বাধার সৃষ্টি করা যায় সেটা নিয়ে বিস্তর গবেষণা চালায় যেটা দেখে মনে হবে তিনি পেশাদারিত্বের দায় সারছেন। এই সব মহান ব্যক্তিত্বের আশীর্বাদে অনেকের স্বপ্নে ভরা মন ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়, হতাশাবাদির খাতায় নাম লেখায় অজস্র প্রতিভাবান মুখ।

যখন কেউ নিজে থেকেই বলে আমি পারব, পাশে থেকে তাকে বলা উচিত হ্যাঁ, অবশ্যই পারবে। কিন্তু আমরা তা কতটুকু করতে পারছি? যদি এটা বলা সম্ভব নাও হয়ে ওঠে তবু তাকে এই বলে  হতাশ করা উচিত নয় যে তুমি পারবে না। আপাতত সুযোগটা তাকে দেওয়া প্রয়োজন এবং দেখা উচিত সে কি করে এবং কতটা করতে পারে। তারপর না হয় মন্তব্য করা গেল বা প্রয়োজন হলে তা সম্পন্ন করতে সহায়তা করে কাজটি সমাপ্ত করে দেওয়া গেল। তবেই তো ইতিবাচক মনের অধিকারী হওয়া যাবে।

সমালোচনা মানুষের ভুল ত্রুটি সংশোধন করে কাজের উত্কর্ষ বাড়ায় কিন্তু সে জন্য প্রয়োজন বস্তুনিষ্ঠ সমালোচনা। যদি তা না হয়ে শুধু নেতিবাচক দিকের অবতারণা করে কোনো বিষয় বিশ্লেষণ করার মানসিকতা রাখা হয় তবে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

তারপরও কিছু মানুষ অবশ্যই আছে যাদেরকে কোনো সমালোচনার তীর স্পর্শ করতে পারে না, যারা নিজের আত্মশক্তির উপর যথেষ্ট বিশ্বাস রাখেন। সব ক্ষেত্রে ইতিবাচক দিকটিই সবার আগে বিবেচনা করে থাকেন ফলে সাফল্য তাদের হাত ধরেই আলো ছড়ায়। যে আলো তার ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে সমাজ,  দেশ এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও পথ দেখানোর কাজ করে থাকে।

n লেখক:শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়