শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

আলোকপাত

পার্বত্য অঞ্চলে উন্নত জাতের আম চাষে বিপ্লব

আপডেট : ১১ জুন ২০১৯, ২১:৪০

চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলগুলোতে বিদেশি উন্নত জাতের আম চাষে বেশ সফলতা এসেছে। এ অঞ্চলগুলোর মধ্যে বান্দরবান, লামা, কাপ্তাই, চন্দ্রঘোনা, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, রামগড়সহ বিভিন্ন এলাকায় আমের চাষ হচ্ছে। এখানে ভারত, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, বার্মা, ব্রাজিল, পাকিস্তানের আম উত্পাদিত হচ্ছে। উত্পাদিত আমের মধ্যে রয়েছে আম্রপালি, থাই ডকমাই, থাই স্বর্ণালি, থাই কাঁচামিঠাই, থাই প্রিমিয়াম, রাঙ্গুয়াই, মল্লিকা, ফনিয়া, হিমসাগর, রেডকিং থাই বানানাসহ বিভিন্ন জাতের আম পার্বত্য চট্টগ্রামে এসব উন্নত জাতের আমের চাষ শুরু হয় ২০০৪ সাল থেকে। পার্বত্য চট্টগ্রামে উত্পাদিত উন্নত জাতের আমের মধ্যে আম্রপালি আম বেশি উত্পাদিত হচ্ছে। বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে প্রকল্পের মাধ্যমে ভারত থেকে ’৯৬ সালের দিকে প্রথম আম্রপালি আমের চারা আমদানি করে এবং কৃষক পর্যায়ে বিনা মূল্যে বিতরণ করে। অত্যন্ত সুস্বাদু এবং উন্নত জাতের আম আম্রপালির ব্যাপারে এদেশের মানুষের আগ্রহ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে অনেক উদ্যোক্ততা চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলে আম্রপালি আম চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্তমানে ছোট-বড় অসংখ্য আমের বাগান গড়ে উঠেছে। চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলে যেভাবে বিদেশি আমের চাষ হচ্ছে তাতে আম চাষে এক বিপ্লব ঘটেছে। বর্তমানে এটি একটি শিল্পে পরিণত হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে আম উত্পাদন এবং বিপণনে প্রায় ৫০ হাজার লোক নিয়োজিত আছে। ভবিষ্যতে আরো কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার আমের ফলন বেশ ভালো হয়েছে। আমচাষিরা আশা করছেন, এ বছর প্রায় ৪ হাজার টন আম উত্পাদিত হবে। পার্বত্য অঞ্চলে উত্পাদিত আমের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে খুব মিষ্টি, সুস্বাদু, আঁশবিহীন, পাতলা চামড়া, ছোট আঁঠিযুক্ত। এসব আম অন্যান্য আমের তুলনায় উন্নত হওয়ায় ক্রেতারা এসব আমের দিকে ঝুঁকছেন। দিন দিন এসব আমের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পার্বত্য অঞ্চলে আমের উত্পাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের চাহিদা মিটিয়ে এখন মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলে উত্পাদিত আমগুলো সম্পূর্ণ ফরমালিনমুক্ত ও বিশুদ্ধ। এখানকার লোকজন এখন পাহাড় আবাদ করে আম চাষে নেমে পড়ছেন। পাহাড়ে আম চাষের ব্যাপারে অনেকে আগ্রহী হলেও পাহাড়ের দরিদ্র জনসাধারণ আর্থিক সমস্যার কারণে তারা এগিয়ে আসতে পারছে না। কারণ প্রতি একর জমিতে আম্রপালি চাষ করতে তিন বছরে প্রায় ৩০ হাজার টাকা লাগে। কিন্তু গরিব কৃষকদের কাছে টাকা না থাকায় তাদের আগ্রহ কোনো কাজে আসছে না। পার্বত্য অঞ্চলে বাংলাদেশ ব্যাংক মসল্লা (আদা, হলুদ) চাষের জন্য ২ শতাংশ সুদে ঋণ প্রদান করছে। কিন্তু আম চাষের ব্যাপারে এ ধরনের কোনো সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। তা ছাড়া আদা, হলুদ চাষের কারণে পাহাড়ে ভূমিক্ষয় হচ্ছে। কিন্তু আম চাষের কারণে পাহাড়ের ভূমির ক্ষয়রোধ হচ্ছে। আম উত্পাদন করতে গিয়ে আমচাষিরা নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। উন্নত জাতের আমের চাষের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কারিগরি সহযোগিতা প্রদান, স্বল্পসুদে ঋণের ব্যবস্থা, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুত্ ব্যবস্থা এবং আম সংরক্ষণের ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে আমাদের দেশ উন্নত জাতের আম উত্পাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠবে। আম শিল্প একটি লাভজনক শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে জাতীয় অর্থনীতিতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে।         

n লেখক : ঊর্ধ্বতন বিমা কর্মকর্তা